ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চাওড়া - সুবন্ধি বদ্ধ নদী কচুরীপানায় লাখো মানুষের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

চাওড়া - সুবন্ধি বদ্ধ নদী কচুরীপানায় লাখো মানুষের দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী, বরগুনা ॥ বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া, হলদিয়া, কুকুয়া, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার উপরদিয়ে প্রবাহিত ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ চাওড়া- সুবন্ধি বদ্ধ নদী কচুরীপানায় ভরপুর হয়ে গেছে। পানি পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দুষিত হওয়ায় চার ইউনিয়ন ও পৌরসভার লাখো মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে আমতলীর চাওড়া ও পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের হাত থেকে আমতলী শহরকে রক্ষায় সংযোগস্থল চৌরাস্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। কালের বিবর্তনে চাওড়া নদী মরা নদীতে পরিনত হয়। ত্রিভুজ আকৃতির ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ এ নদীটি উপজেলার হলদিয়া, কুকুয়া, চাওড়া, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২৫টি গ্রাম উপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কারনে সুবন্ধি অংশে রামনাবাঁধ নদী, ঘুঘুমারী অংশে টিয়াখালী ও আমতলীর অংশে পায়রা নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে। প্রাকৃতিক জলোচ্ছাস ও লবনাক্ততার হাত থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় ২০০৯ সালে বামনাবাঁধ নদীর একাংশ সুবন্ধি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। চাওড়া ও সবন্ধি নদীর পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৫ সালে দু’ব্যান্ডের স্লুইজ নির্মাণ করেছে। এদিকে ১৯৬৭ সালে জুলেখা খালে পাঁচ কপাট ও উত্তর টিয়াখালী খালে পাঁচ কপাট এবং ঘুঘুমারিতে এক কপাটের স্লুইজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবন্ধির তিনটি জলকপাট থেকে পানি নিস্কাসনের কারনে নদীর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি’র স্বাভাবিক প্রবাহ রয়েছে। জুলেখা, উত্তর টিয়াখালী ও ঘুঘুমারি খালের জল কপাট বন্ধ করে একটি প্রভাবশালী মহল মাছ চাষ করে আসছে। এছাড়াও জুলেখার স্লুইজ খালের লক্ষী নামক স্থানে তিনটি বাঁধ, উত্তর টিয়াখালী স্লুইজের আউরা বৈরাগী নামক স্থানে বাঁধসহ খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে। অপরদিকে নদীর সংলগ্ন লক্ষী, নাচনাপাড়া, আমতলী খালসহ ১০টি খাল প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বাধঁ দিয়ে মাছ চাষ এবং খাল দখল করে স্থায়ী বাড়ী ঘর নির্মাণ করছে। এতে নদীর পশ্চিম, দক্ষিণ ও পুর্ব দিকের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ১৫ কিলোমিটারের কচুরীপানা আটকে জন দুভোর্গ চরম আকার ধারন করেছে। নদীর দু’পাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। কচুরীপানার কারনে পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ দুষিত হয়ে মারাত্ত্বক আকার ধারন করেছে। ওই খালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে। এ খালের দু’পাড়ের প্রায় লক্ষাধীক মানুষের জনদুর্ভোগে পরিনত হয়েছে। ফলে খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করন ও অবৈধ দখল খাল মুক্ত করার দাবীতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে ৪ ইউনিয়ন ও পৌরসভার লাখো মানুষ। দক্ষিণ রাওঘা গ্রামের মোঃ বশির উদ্দিন বাদল মৃধা বলেন সুবন্ধি বাঁধে আরো দু’কপাট ও সোনাগজা খালে দু’কপাটের স্লুইজ নির্মাণ করা হলে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য জরুরী ভিত্তিতে কচুরীপানা অপসারন করা দরকার। চাওড়া কাউনিয়া গ্রামের জিয়া উদ্দিন জুয়েল জানান খালের কচুরীপানা জমে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। দুর্গন্ধে পরিবেশ দুষিত হচ্ছে। অতিদ্রুত কচুরীপানা অপসারনের দাবী জানাই। হলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম মৃধা বলেন খালের কচুরীপানা অপসারন করে সুবন্ধি বাঁধে আরো জলকপাট নির্মাণ করে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করা গেলে সমস্যা সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন দখল করা খাল গুলোর দখল মুক্ত করতে হবে। চাওড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান বাদল খান বলেন দীর্ঘদির ধরে খালের পাড়ের হাজার হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। দ্রুত কচুরপিানা অপসারন করতে হবে। আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন আমতলী চৌরাস্তার বক্স কালভার্ড তুলে খাল কেটে ওই খালে বেইলি ব্রীজ করে দিলে পানি সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে এবং কচুরীপানা অপসারন হবে। আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মুশফিকুর রহমান বলেন এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চলছে। আগামী ২ মে বরগুনা জেলা প্রশাসক মুহাঃ বশিরুল আলম তার কার্যালয়ে এখালের করনীয় বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা আহবান করেছে। আমতলী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ’লীগ সভাপতি জিএম দেলওয়ার হোসেন বলেন চারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার হাজার হাজার মানুষ এ খালের কচুরীপানার জন্য চরম কষ্টে আছে। কচুরীপানা অপসারন ও খালের গতি প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
×