ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যর্থ ‘নির্ভীক’ ॥ গ্রিন লাইন ও কার্গো উদ্ধারে

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

ব্যর্থ ‘নির্ভীক’ ॥ গ্রিন লাইন ও কার্গো উদ্ধারে

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলা নদীতে যাত্রীবাহি এমভি গ্রীন লাইনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে ডুবে যাওয়া কার্গো এমভি মামুন-মাসুদ-১ ও অর্ধ নিমজ্জিত গ্রীনলাইন জাহাজটি টেনে তুলতে পারছেনা সরকারী উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক। ধারন ক্ষমতার চেয়ে অধিক ওজন হওয়ার কারনে উদ্ধার অভিযানে না নেমেই ফিরে যায় সরকারী এ উদ্ধারকারী জাহাজটি। ফলে বেসরকারী ভাবেই উদ্ধার করতে হবে নিমজ্জিত ও অর্ধ নিমজ্জিত জাহাজ ও কার্গো দুটিকে। অপরদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের এ কমিটিকে আগামী সাতকার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সূত্রমতে, শনিবার বিকেলে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকা সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে গ্রীনলাইন ও কার্গোর মুখোমুখি সংঘষের্র ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে ডুবে যাওয়া কার্গো মামুন-মাসুদ-১ ও অর্ধ নিমজ্জিত গ্রীন লাইন-২ উদ্ধারের জন্য দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিক। সন্ধ্যায় এ উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ডুবুরীদল ডুবে যাওয়া কার্গোটি সনাক্ত করে। তবে কার্গোতে ৫শ’টন পাথর থাকায় সেটিকে টেনে তোলা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি অর্ধনিমজ্জিত গ্রীনলাইনের ওজন ৬৫০ টন হওয়ায় এটিও ডাঙ্গায় তুলতে পারেনি নির্ভিক। উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের কমান্ডার ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ নির্ভিকের সর্বোচ্চ ধারন ক্ষমতা ২৫০ টন কিন্ত আমরা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখলাম কার্গো ও গ্রীনলাইনের ওজন ৬০০ টনের ওপরে। তাই নির্ভিকের দ্বারা এ দুটি নৌ-যান তুলে আনা সম্ভব নয়। মালিক পক্ষকে এ বিষয়ে বিকল্প চিন্তা করতে হবে বলা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বরিশাল বিআডিবিব্লউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু জানান, নিমজ্জিত কার্গোটির স্থান নিশ্চিত হওয়ার পর রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমভি গ্রীন লাইন-২ শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে যাতে পুরোপুরি ডুবে না যায়। জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, কারও না কারও অবহেলার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কেননা দিনের বেলা আকাশ পরিষ্কার ছিল আর নৌ-পথও ছিলো স্বাভাবিক। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে শনিবার রাতেই পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ জাকির হোসেন। এছাড়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নৌ-পুলিশের প্রতিনিধি, বিআইডব্লিউটিএ’র একজন প্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিসের একজন প্রতিনিধিসহ পাঁচ সদস্য রয়েছেন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন, যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য গ্রহণসহ দুর্ঘটনার কারণ, কারও অবহেলা ছিলো কিনা, আগামীতে এ ধরনের দুর্ঘটনারোধে কী করণীয় সেসব বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। যার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকা সংলগ্ন কীর্তনখোলা নদীতে গ্রীনলাইন ও কার্গোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কার্গোটি ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে আসছিল। অপরদিকে বরিশাল থেকে প্রায় চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল যাত্রীবাহি দ্রুত নৌ-যান এমভি গ্রীন লাইন-২। এটি চরবাড়িয়ার ভাঙন কবলিত এলাকা পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা কার্গোটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে কার্গোটি মুহুর্তের মধ্যে ডুবে যায়। সংঘর্ষে গ্রীন লাইনের সামনের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলা ফেটে অর্ধ নিমজ্জিত হয়। কার্গোটিতে ছয়জন শ্রমিক ছিলো। তারা সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে গ্রীন লাইন-২ লঞ্চের সামনের নিচের অংশের তলা ফেটে পানি উঠতে শুরু করলে যাত্রীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি করে কোনোভাবে চরে উঠে জীবন রক্ষা করেন।
×