ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাতুয়াইলে আধুনিক পদ্ধতির ল্যান্ডফিল তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

মাতুয়াইলে আধুনিক পদ্ধতির ল্যান্ডফিল তৈরির উদ্যোগ

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীর ডেমরার মাতুয়াইলে অবস্থিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি ল্যান্ডফিলটিকে প্রায় দ্বিগুণ সম্প্রসারণ করে আধুনিক পদ্ধতির পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। এজন্য নতুন করে পূর্বের এক শ’ একর জমির আশপাশে নতুন করে আরও ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এতে করে ল্যান্ডফিলটির মোট আয়তন ১শ’ ৮১ একরে পৌঁছাবে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও শুরু করেছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। নতুন প্রকল্পে আগামী ৫০ বছরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যাতে কোন প্রকার জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন না হয় সেজন্য একসাথে নতুন করে ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। তবে প্রকল্প সূত্র জানায়, নতুন করে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াধীন ৮১ একর জমিকে সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে কিভাবে কম স্থানে আরও বেশি পরিমাণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা যায় সেজন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এর পাশাপাশি ল্যান্ডফিলের জন্য বর্তমান এক শ’ একর জমিকে কমিয়ে কিভাবে কম জমিতে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় তারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২১শ’ টন বর্জ্য জমা হচ্ছে। বর্তমান ল্যান্ডফিলটিতে আর কিছুদিন পর আর কোন প্রকার বর্জ্য রাখা সম্ভব হবে না। এ বিষয়টি চিন্তা করেই ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলটি অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এরশাদ সরকারের আমলে স্থাপনকৃত এই ল্যান্ডফিলটি বর্জ্যে প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পুরাতন পদ্ধতিতে আরও কমপক্ষে ৩০ বছর অনায়াসে বর্জ্য রাখা সম্ভব হবে এবং নতুন পদ্ধতি কার্যকর হলে একই জমিতে আরও ৫০ বছর পর্যন্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৭শ’ ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ৪ বছরে বাস্তবায়িতব্য এ প্রকল্পটি সম্প্রতি অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নে উন্নত বিশ্বের ন্যয় আধুনিক করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশের সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব ও সুশৃঙ্খল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর মাতুয়াইলে এ বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পর্যায়ক্রমে চার বছরে এই প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে বর্জ্য না রেখে তা পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে পুড়িয়ে ছাই করে ও বর্জ্যরে মধ্যে থাকা সকল বস্তুকে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ যেন কোন প্রকার বর্জ্য খালি চোখে দেখা না যায় এবং বর্জ্যকে দুর্গন্ধযুক্ত বোঝা নয়, সম্পদে পরিণত করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত করা হবে। পরবর্তীতে সকল সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায়ও এরকম আরও পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ল্যান্ডফিলের পাশে ৮১ একর জায়গা ইতোমধ্যেই অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জমি অধিগ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবস্থা নিতে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। ৮১ একর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫শ’ ১৫ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে মোট এক শ’ ৮১ একর জায়গাতে একটি আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব ল্যন্ডফিল হিসাবে গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সংস্থাটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল গড়ে তুলতে বর্তমান এক শ’ একর জায়গার উপর থাকা ল্যান্ডফিলটির প্রায় অর্ধেক জায়গা জুড়ে ৭০ ফুট উঁচু আবর্জনার পাহাড় জমেছে। এটি ধসে পড়লে যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই এই পাহাড়সম আবর্জনার স্তূপে ধাপে ধাপে সংস্কার করে ঝুঁকিমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে প্রতি ধাপে ধাপে বড় আকারের ড্রেন তৈরি করা হবে। এরপর ছোট ছোট রাইডস দিয়ে জায়গাটির চূড়া সাজানো হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে অসংখ্য ফুলগাছসহ নানা ধরনের গাছ লাগানো হবে। মূলত দুর্গন্ধযুক্ত ময়লার ভাগাড় নয়, সম্পূর্ণ দুর্গন্ধমুক্ত দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে এটিকে একটি মিনি পার্কের মতো করে সাজানোর কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, প্রকল্পটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে ল্যান্ডফিলটিতে দৈনিক জমা হওয়া সকল বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করার জন্য একটি বার্ন প্ল্যান্ট বা ফায়ার প্লেস নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘রিফিউজ ডিরাইভড ফুয়েল’ বা ‘প্রত্যাখ্যাত উদ্ভূত জ্বালানি’ নামক প্রকল্পটি বাস্তাবয়নে একাধিক বিদেশী প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান বাধা হিসেবে জানা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ দেখালেও এজন্য ডিএসসিসির সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য ঋণ নিতে চান। তবে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব প্রতিষ্ঠানকে শুধুমাত্র বর্জ্য প্রদান করা ছাড়া আর কোন ভবন বা স্থাপনা নির্মাণসহ ঋণ প্রদানে কোন প্রকার সহযোগিতা না করাসহ কোন কিছুই করতে রাজি নয়। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রকল্প তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েও সরে আসতে দেখা গেছে। জানা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত, বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) দিয়ে দেয়া হবে। পরবর্তীতে পিডিবির মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হবে। তবে মেয়র সাঈদ খোকন বর্জ্য থেকে তৈরি বিদ্যুত থেকে রাস্তার বাতি ও পার্কের আলোর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুত ব্যবহারের ইচ্ছা পোষণ করেছেন। এ বিদ্যুতের ফলে কখনও রাস্তার বাতি কখনও নিভবে না বলে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন তিনি। সূত্র জানায়, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বিদেশী অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব জমা দিয়েছে। ডিএসসিসি’র কাছেও কমপক্ষে ১৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এসব প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই-বাছাইয়ের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। অতি দ্রুত ওই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী ফরাজি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী একজন প্রতিনিধি ও এলজিইডি’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী একজন প্রতিনিধিকে কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এসব সদস্য বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য কোন প্রকল্প পরিবেশবান্ধব ও নাগরিক সুবিধার জন্য হবে তা বাছাই করবেন। জানা গেছে, নতুন অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে বড় ধরনের বার্ন প্ল্যান্ট বা ফায়ার প্লেস নির্মাণ করা হবে।
×