ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষকে জিম্মি করা নয়

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ২২ এপ্রিল ২০১৭

মানুষকে জিম্মি করা নয়

পেশী শক্তির বিরুদ্ধে সব সময়েই সোচ্চার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। যারা মূল্যবোধসম্পন্ন, নীতি ও আদর্শে বিশ্বাসী, তারা পেশী শক্তির মতো যে কোন অনৈতিক অন্যায্য জবরদস্তির বিপরীতেই অবস্থান গ্রহণ করবেন। সরকার চাইছে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে, সর্বস্তরে একটা সুষ্ঠু নিয়ম শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে। কিন্তু ভাল কিছু করতে গেলেই বাধা আসছে। আগে ছিল পেশী শক্তি। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সঙ্ঘশক্তি। সংগঠন এককাট্টা হয়ে সুস্থ ধারাকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিচ্ছে না। এরা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন গড়ে তোলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। সেটি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হোক, কিংবা হোক গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায়। সরকারের শুভ উদ্যোগ এভাবেই বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি হৃদরোগীদের হার্টের রিং নিয়ে নৈরাজ্য কমাতে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই ‘প্রতিবাদে’ রিং ব্যবসায়ীরা এ ধর্মঘট শুরু করে দিয়েছে। কেবল ঢাকায়ই নয়, ধর্মঘটের কারণে সারাদেশে চার শতাধিক রোগী জিম্মি হয়ে পড়েছে রিং বিক্রেতাদের কাছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকের রিং পরানো নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করার বিষয়টি দীর্ঘদিনের আলোচিত বিষয়। লাগামহীন মুনাফায় টান পড়লেই রোগগ্রস্ত অসহায় মানুষকে জিম্মি করতে হবে! এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনের প্রাণহানির মামলায় ঘাতক বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাভারে এক নারীকে ট্রাকচাপায় হত্যার দায়ে ট্রাকচালকের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। এর প্রতিবাদে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে ৩৯ ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করে পরিবহন শ্রমিক-মালিক সংগঠনগুলো। অর্থাৎ আদালতের বিরুদ্ধেই তারা অবস্থান নেয়! এটা কত বড় নৈরাজ্য! এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের মানুষকে। সর্বশেষ সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের পকেট কাটার দৌরাত্ম্য কমাতে সম্প্রতি সিটিং সার্ভিস বন্ধে উদ্যোগ নেয়া হয়। এর ফলস্বরূপ ঢাকা মহানগরীতে বাস-মিনিবাসের সংখ্যা রাতারাতি ভীষণভাবে কমে যায়। এমনিতেই গণপরিবহনের ঘাটতি রয়েছে, তার ওপর বেআইনীভাবে বাস-মিনিবাস রাস্তায় না নামানোর ফলে যাত্রীভোগান্তি হঠাৎ করেই আরও বেড়ে যায়। পরে পরিবহন মালিক, পুলিশ প্রতিনিধি ও বিআরটিএর কর্মকর্তারা বৈঠক করে সাময়িকভাবে সিটিং সার্ভিস বহালের সিদ্ধান্ত নেয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সত্যোচ্চারণ করে বলেছেন, পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা অত্যন্ত প্রভাবশালী। আমরা আগেও বলেছি, মালিক-যাত্রী-পরিবহন শ্রমিকÑ সব পক্ষেরই স্বার্থের সুরক্ষা সরকারকে দিতে হবে। এই সুরক্ষাদানের বিষয়টিও হতে হয় ভারসাম্যপূর্ণ ও জনমুখী। যাত্রীসাধারণ যেখানে অসংগঠিত অসহায়, সেখানে মালিক শ্রেণী প্রভাবশালী ও সংঘবদ্ধ। তাই সরকারকেই পরিবহন সেক্টরে সুষ্ঠু নীতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। যাত্রীসুবিধার দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রভাবশালী কজন রাজনীতিক গণপরিবহন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ফলে গণপরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরগুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থের কাছে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। মানুষের জন্য যে কোন ধরনের হয়রানিমূলক ও ক্ষতিকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অনৈতিক। মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করবেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, ভাল কথা। কিন্তু অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য মানুষকে জিম্মি করা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। সরকারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দেশকে যারা মগের মুল্লুক মনে করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার বলিষ্ঠতার পরিচয় দেবেÑ এটাই প্রত্যাশা সবার।
×