ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহুরে পরিবেশ উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির দুটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৯ এপ্রিল ২০১৭

শহুরে পরিবেশ উন্নয়ন ও তথ্য প্রযুক্তির দুটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ঋণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশ ও শহুরে পরিবেশ উন্নয়নবিষয়ক দুটি প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য বাংলাদেশকে সহজ শর্তে মোট ৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। এর মধ্যে লিভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড গবর্ন্যান্স (এলআইসিটি) প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য পাওয়া যাবে ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার (প্রায় ৩১২ কোটি টাকা)। আর নির্মল বায়ু এবং টেকসই পরিবেশ (কেস) শীর্ষক প্রকল্পে পাওয়া যাবে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার (প্রায় ২৮০ কোটি টাকা)। মঙ্গলবার সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে এ-সংক্রান্ত দুটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ঢাকা অফিসের অপারেশন ম্যানেজার রাজশ্রী এস পারলকার ঋণ চুক্তি দুটিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় দুই প্রকল্পের পরিচালক, ইআরডি এবং বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, এলআইসিটি মূল প্রকল্পে ৭ কোটি ডলার এবং কেস মূল প্রকল্পে ৬ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে মাহমুদা বেগম বলেন, দুটি প্রকল্পের মূল কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ইতিবাচক বিবেচনায় প্রকল্প দুটির কার্যক্রম বাড়ানো হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কেস প্রকল্পের আওতায় রাজধানীতে নির্মিত সবুজায়িত ফুটওভার ব্রিজ এবং ওয়াকওয়ে (পায়ে হাঁটার পথ) বায়ু দূষণ রোধ এবং যানজট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে। দুটি প্রকল্পে অতিরিক্ত অর্থায়নের ফলে আরও বেশি সুফল মিলবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। রাজশ্রী পারলকার বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ইতোমধ্যেই জাতীয় পরিচয়পত্র প্রকল্প, স্মাটকার্ড বিতরণ, এনবিআর অটোমেশন এবং ইজিপি বাস্তবায়ন প্রকল্প সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সেই ধারাবাহিকতায় তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত প্রকল্পে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কেস প্রকল্প ঢাকার বাতাসের মান উন্নয়ন এবং যানজট ব্যবস্থাপনায় আরও বেশি ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, দুটি প্রকল্পে যে ঋণ দেয়া হচ্ছে তা ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরে পরিশোধ করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ছাড় করা অর্থের ওপর বার্ষিক শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ দিতে হবে। ঋণের অনুত্তোলিত অর্থের (আনডিসবার্সড এ্যামাউন্ট) ওপর শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি প্রদান করতে হয়। তবে বিশ্বব্যাংক গত কয়েক বছর ধরে এ ফি স্থগিত রেখেছে। সূত্র জানায়, এলআইসিটি প্রকল্পের আওতায় সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য কাঠামোগত উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় ডাটাবেস সেন্টার এবং জাতীয় ই-আর্কিটেকচার সার্ভিস প্রদান করা হবে। এছাড়া জাতীয় ই-গবর্নমেন্ট অবকাঠামো সুবিধা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় সাহায্য করা এবং আইটি-আইটিইএস সার্ভিস বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম এ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। অন্যদিকে ক্লিন এয়ার এ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট (কেস) প্রকল্পটির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্প এবং ঋণচুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গণপরিবহন ব্যবস্থা এবং গতানুগতিক পদ্ধতিতে উৎপাদন ব্যবস্থা ঢাকা মহানগরী বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিবহন এবং ইট উৎপাদন ব্যবস্থায় উপযুক্ত পরিবর্তন আনার মাধ্যমে বায়ুমান ও যান চলাচলের ক্ষেত্রে গুণগত মান উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পের প্রধান দুটি অংশ হলোÑ পরিবেশ এবং যানবাহন। পরিবেশ অংশটি পরিবেশ অধিদফতর এবং যানবাহন অংশটি ডিএনসিসি ও ডিএনসিসি এবং ডিটিসিএ কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পের আওতায় অন্য কার্যক্রমগুলো হচ্ছেÑ বায়ুমান ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি, ইটভাটা নিঃসরণ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সচেতনতা ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, ঢাকা মহানগরীতে পরিবহন গতিশীলতার উন্নয়নে বাস রুট নেটওয়ার্ক যুক্তকরণ, ঢাকা শহরে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম, খসড়া নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন ইত্যাদি।
×