ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজ্ঞদের প্রশংসায় মুশফিক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২১ মার্চ ২০১৭

অভিজ্ঞদের প্রশংসায় মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে নিউজিল্যান্ড সফরে তেমন সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে বিপর্যস্ত ছিল দলের ব্যাটিং। দ্বিতীয় টেস্টেও একই পরিস্থিতি। ওই সময় দলের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্টে বিজয়ের ম্যাচে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যাটিংয়েই জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। এমনটাই দাবি করেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এবার শ্রীলঙ্কা সফরের আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন স্বাগতিকদের বিরুদ্ধে প্রথম জয়ের ব্যাপারে। কিন্তু গলে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে সেটা হয়নি। বরং সবদিক থেকে এগিয়ে থাকা লঙ্কানরাই জয় তুলে নেয়। প্রথম ইনিংসে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মধ্যে তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহীম রান পেলেও বাকিরা ছিলেন ব্যর্থ। দ্বিতীয় ইনিংসে ছিল আরও বেহাল পরিস্থিতি। কিন্তু পি. সারা ওভালে ছিল এক ঐতিহাসিক ম্যাচ। বাংলাদেশের শততম টেস্ট। সেই ম্যাচে দারুণ কিছু করতে মুখিয়ে ছিলেন ক্রিকেটাররা। তবে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করার পর ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভাল করতে পারলেও বিপদের মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ। তামিম ৪৯ রানের একটি মাঝারি ইনিংস খেলেছিলেন। ইমরুল কায়েস মাত্র ৩৪ রানে সাজঘরে ফেরেন। ২ উইকেটে ১৯২ রান থেকে ৫ উইকেটে ১৯৮ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। মাত্র ৬ রানের মধ্যে ৩ উইকেটের পতন ঘটে। সে সময় হাল ধরেন দলের মিডলঅর্ডারের স্তম্ভ মুশফিক ও সাকিব আল হাসান। যদিও সাকিব এমন বিপর্যয়ের মধ্যে উল্টাপাল্টা ব্যাটিং করে শঙ্কার জন্ম দিয়েছিলেন। পরদিন তিনিও নিজেকে সামলে ১১৬ রানের একটি অবিস্মরণীয় ইনিংস খেলেন। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-মুশফিকের জুটিতে আসে ৯২ রান। লিড নেয়ার একটি রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। মুশফিক অবশ্য ৫২ রান করে ফিরে গেছেন, তবে এর আগে দলকে বাজে পরিস্থিতি থেকে টেনে তুলেছেন। সাকিব-মুশফিকের এই প্রতিরোধেই শেষ পর্যন্ত পরের দিকে অভিষেক হওয়া তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৭৫ রানের একটি ভাল ইনিংস উপহার দিতে পেরেছেন ভারমুক্ত হয়ে খেলে। শেষ পর্যন্ত ১২৯ রানের লিড নিয়ে ৪৬৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে ৮২ রানের একটি মহাগুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলে দলকে জয়ের রাস্তা দেখিয়ে যান। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘ম্যাচটার কত গুরুত্ব সেটা আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এ বিষয়টাই আমাকে সবচেয়ে আনন্দিতই করেছে। বিশেষ করে যখন আমরা এগিয়ে ছিলাম এবং পিছিয়ে ছিলাম উভয় মুহূর্তে ম্যাচের মূল্যটা সবাই উপলব্ধি করেছে। আমরা বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম যে অতি ক্ষুদ্র বিষয়গুলোও শেষ পর্যন্ত আমাদের অনেক বড় কিছু এনে দিতে পারে। ব্যাটসম্যান আর বোলাররা খুবই দায়িত্বশীল হয়ে খেলেছে।’ আর এ দায়িত্ব নিয়ে খেলার কারণে প্রথম ইনিংসে বড় একটা লিড নিয়ে ম্যাচে ভাল অবস্থানে চলে যায় বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য সাকিব-মুশফিক জুটি মাত্র ১৯ রান যোগ করতে পেরেছিলেন। তবে সেটাও দীর্ঘক্ষণ টেস্ট মেজাজে ব্যাট চালিয়ে বাকিদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের যোগান দিয়েছেন। ম্যাচের পঞ্চমদিনে হাতের মুঠোয় থাকা এমন জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করার অভিজ্ঞতটা নতুন বাংলাদেশ দলের জন্য। এর আগে রান তাড়া অনেকবারই করতে হয়েছে, তবে প্রায় সবগুলো লক্ষ্যই ছিল অনেক বড়। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি টেস্ট ক্রিকেটে আর কখনও হইনি। এটা আমাদের সবার কাছেই ছিল নতুন। এ ধরনের উইকেটে পঞ্চমদিনে রান তাড়া করাটা সত্যিই কঠিন। কিন্তু তামিম ও সাব্বির যেভাবে ব্যাট করেছে সেটা বাকিদের জন্য সহজতর করে তুলেছে। তাদের ১০৯ রানের জুটি খুবই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু কোন প্রতিপক্ষই এ অবস্থায় আমাদের জন্য কাজটা সহজ হতে দিত না। আমরা শেষদিকে আত্মবিশ্বাসী হতে পেরেছি। যদি আমরা দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাকিবকে হারিয়েছি। কিন্তু আমরা জানতাম মোসাদ্দেক ও মিরাজ আছে আমাদের এবং শুধু সিঙ্গেলস নিয়েই আমরা জিতে যেতে পারব।’
×