ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যমেকে আউটসোর্সিং কর্মচারী ॥ নিয়ন্ত্রণে হ-য-ব-র-ল

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১০ মার্চ ২০১৭

যমেকে আউটসোর্সিং কর্মচারী ॥ নিয়ন্ত্রণে হ-য-ব-র-ল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর মেডিক্যাল কলেজে প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার কাজের জন্য আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ধস নেমেছে। রোস্টার অনুযায়ী কর্মচারী কর্মে যোগ না দেয়া, এমনকি মাসের পর মাস কেউ কেউ অনুপস্থিত থাকছে। কয়েকজন শিক্ষক ব্যক্তিগত কাজে কর্মচারীদের নিয়োজিত রেখেছেন। অনুপস্থিত ও কলেজের কাজে অংশ না নিয়ে শিক্ষকদের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা বেতন নিচ্ছে। এ সবকিছুই হচ্ছে- কলেজ কর্তৃপক্ষের অগোচরে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১০ সালে যশোর মেডিক্যাল কলেজের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার পর ২০১১-২০১২ অর্থবছরে প্রথম দফায় ৪র্থ শ্রেণীর ৪৫ কর্মচারী আউটসোর্র্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেট থেকে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নির্বাচনের মাধ্যমে কর্মচারীদের কাজে লাগায় কলেজ কর্তৃপক্ষ। ২০১২-২০১৩ ও ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরেও কর্মচারীর সংখ্যা ঠিক রেখে পুনরায় ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। পরপর ৩ বছর ঢাকার গালফ্ সিকিউরিটিজ লিমিটেড নামে কোম্পানি কর্মচারী সরবরাহ করে। ওই বছরগুলোতে কর্মচারী নিয়োগ ও তাদের বেতনভাতাদি প্রদানে কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে প্রচার আছে। কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক এনায়েত করিমের উদার মনোভাবের সুযোগ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও কলেজের কতিপয় কর্মকর্তা লুটপাটে অংশ নেন। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে গালফ্ সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কর্মচারী সরবরাহের কাজ পায় উষা এসসি লিমিটেড। কোম্পানিটির প্রতিনিধি ও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন টাকার লেনদেন হয়নি। স্বচ্ছতার সঙ্গে ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে কর্মচারী নিয়োগ ও তাদের বেতনভাতাদি পরিশোধ করা হয়েছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে রাজস্ব বাজেটের পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদফতরের উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ১০ জন কর্মচারীর পদ বৃদ্ধি করা হয়। ৫৫ কর্মচারী সরবরাহের দায়িত্ব পায় উষা এসসি লিমিটেড। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে আরও ১০ জনের পদ সৃষ্টি করে যশোর মেডিক্যাল কলেজে আউটসোর্সিং কর্মচারী পদ সংখ্যা এখন ৬৫ জন। গেল বছরের ১১ অক্টোবর কর্মচারীর সরবরাহের জন্য ঠিকাদার নির্বাচনের দরপত্র আহ্বান করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে কার্যাদেশ দেয়া থেকে বিরত থাকে কর্তৃপক্ষ। অবশেষে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষে প্রকাশ করা হয় তৃতীয়বারের মতো উষা এসসি লিমিটেড কর্মচারী সরবরাহের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক নোংরা ঘটনা ঘটে গেছে। মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাড়ি ভাড়া নিয়ে হোস্টেল বানানো হয়েছে। সেটি ছাত্র হোস্টেল ২ নামে পরিচিত। সেখানে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব দেয়া ছিল এনামুল ও কামরুল নামে দু’জন প্রহরীকে। মেডিক্যাল কলেজে নিয়োগ পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কারও কারও কাছ থেকে ২ লাখ টাকা করে হাতিয়েছে। কিন্তু নিয়োগ দিতে পারেনি। যারা টাকা দিয়েছে তাদের চাপে পড়ে গেল বছরের নবেম্বর থেকে এনামুল ও কামরুল পলাতক রয়েছে। তারা হোস্টেলের নিরাপত্তা কাজে যোগ না দিলেও কর্তৃপক্ষকে কিছু জানায়নি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এনামুল ও কামরুলের অনুপস্থিতি ধামাচাপা দিয়েছেন কলেজের স্টোর কিপার আতিয়ার রহমান। ওই দু’জন তার আত্মীয় বলেও প্রচার রয়েছে। পরিতোষ নামে একজনকে দিনে প্রতি শিফটে ২শ’ টাকার বিনিময়ে ডিউটি করানো হয়েছে। দু’কর্মচারী গেল বছরের নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে অনুপস্থিত থেকেও বেতনের চেক পেয়েছে। স্টোর কিপার আতিয়ার ওই চেক তাদের পক্ষে গ্রহণ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে ওই টাকা তারা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ যাতে তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি ধরতে না পারে তার জন্য গোপনে হাজিরার খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে এনেছেন স্টোর কিপার আতিয়ার। এমনকি ওই দু’কর্মচারীর নামে চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতনের চেক নেয়ার পাঁয়তারা করছিলেন তিনি। সম্প্রতি স্ত্রীর নারী নির্যাতন মামলায় এনামুল আটক হয়েছে। বর্তমানে সে জেলহেফাজতে রয়েছে। অপর কর্মচারী কামরুল আত্মগোপনে থাকার বিষয়টিও চাউর হয়ে গেছে। চলতি সপ্তাহে বিষয়টি টের পেয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান উষা এসসি লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য চেষ্টা করছেন স্টোর কিপার আতিয়ার। বুধবার তিনি ওই দু’কর্মচারীর অনুপস্থিতির বিষয়ে লিখিতভাবে কলেজ অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন। তাতেও তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। অধ্যক্ষের কাছে দেয়া পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন একজন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আরেকজন ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুপস্থিত রয়েছেন। সার্বিক বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার এ এইচ এম মাহবুব উল মওলা চৌধুরী বলেন, কর্মচারী অনুপস্থিতির বিষয়টি অবগত হয়েছি। আরও যেসব অভিযোগ উঠছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে পরিস্থিতি সামলে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×