ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুনাম ও মেধা হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সরকারী কলেজগুলো

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ মার্চ ২০১৭

সুনাম ও মেধা হারাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সরকারী কলেজগুলো

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সুনাম ও মেধাবী হারাচ্ছে দেশের ঐতিহ্যবাহী সরকারী কলেজগুলো। ভাল ফল ও শিক্ষাদানে এক সময় সর্বোচ্চ সুনামের অধিকারী হলেও হারাচ্ছে সেই সুনাম। প্রতিবছরই খারাপ হচ্ছে সর্বোচ্চ মেধাবীদের ফল। এদিকে সঙ্কট বেঁধেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় কলেজ হিসেবে পরিচিতি প্রতিষ্ঠানের ফলেও। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পছন্দের কয়েকটি কলেজই যে কোন মূল্যে ভর্তির জন্য চলে রীতিমতো যুদ্ধ। অথচ ভাল প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত সেই কলেজের অধিকাংশই এসএসসির সর্বোচ্চ মেধাবিদের ভর্তি করালেও এইচএসসিতে সর্বোচ্চ ফল করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এসব কলেজে গিয়ে আগের জিপিএ ৫ হারিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা! গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, সরকারের এ গবেষণা প্রতিবেদন পরিষ্কার করেছে নানা কারণে নামী কলেজের স্বীকৃতি পাওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান ভাল শিক্ষার্থীদের বেঁচে বেছে ভর্তি করালেও তাদের শিক্ষাদান পরিস্থিতি ভাল নয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের একাধিক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ঐহিত্যবাহী সরকারী কলেজ ছাড়াও ‘ভাল’ কলেজ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বহু প্রতিষ্ঠানের সঙ্কটের চিত্র। সম্প্রতি রাজধানীতে শেষ হয়েছে সরকারী কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে অধিদফতর আয়োজিত অধ্যক্ষ সম্মেলন। তার আগেই তথ্য চাওয়া হয় কলেজগুলোর কাছে। জানাতে বলা হয় তাদের শিক্ষা সঙ্কটের কথা। অধ্যক্ষরা লিখিতভাবে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন অধিদফতরের কাছে। এছাড়া সরকারীভাবেও সংগ্রহ করা হয়েছে নানা তথ্য। বিশেষজ্ঞ ও অভিভাবকরা বলছেন, সরকারী কলেজের এমন চিত্র খুবই ভয়াবহ তথ্য। এ কলেজগুলো সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধা পেয়েও শিক্ষার মান ধরে রাখতে পারছে। এসব কলেজে শিক্ষার মান ধীরে ধীরে কমছে যা প্রমাণ মিলেছে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টেই। সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ানো হয় এমন ৩২৭টি সরকারী কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ফল মূল্যায়ন জরিপ চালায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে দেখা গেছে জিপিএ-৫ পেয়ে সরকারী কলেজে ভর্তি হয়ে দুই বছরে সেই জিপিএ-৫ ধরে রাখতে পারেনি কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ফেল করছে এমন তথ্য মিলেছে। কম মেধাবীদের ভর্তি করিয়েও এইচএসসিতে ভাল ফল করার কারণ হিসেবে ক্যামব্রিয়ান কলেজের কর্ণধার লায়ন এম কে বাশার বলছিলেন, আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছিলাম কোন প্রতিষ্ঠান কম মেধাবীদের নিয়েও ভাল ফল করছে, ফলের উন্নতি হচ্ছে তা দেখা দরকার। কারণ অনেকে প্রতিষ্ঠান নিজেদের নামী-দামী বলে দাবি করে কিন্তু বেছে বেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে ঠিকই। কিন্তু ভর্তি করিয়ে স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে তারা। পড়ালেখা দিতে তাদের সেখাবে আর দায়িত্ব থাকে বলে মনে হয়না। কিন্তু আমরা সব সময় খেয়াল রাখি চেষ্টা করি কম মেধাবীরা ভর্তি হলেও যেন তারা এখানে আসার পর আরো ভাল করে। আমরা চেষ্টা করি, বাড়তি দায়িত্ব নেই। আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এটাই একটা লক্ষ্য যে, আমাদের যেহেতু কম জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে সেহেতু আমাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে যাতে জিপিএ-৫ বাড়ে। সরকারের গবেষণার প্রেক্ষিতে ভর্তি পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছেন অনেকে। জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ একরামূল কবীর বলছিলেন, আমার মনে হয় নামী-দামী হিসেবে যাদের আমরা চিনি জানি তাদের অনেকেই শিক্ষার্থী ভর্তির পর তাদের প্রতি সেভাবে যতœবান হচ্ছেন না। এ কারণে জিপিএ-৫ সেখানে কমছে। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে ভাল পড়ালেখা হচ্ছে সেখানে ভাল ফল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এখন যেহেতু ফলের ভিত্তিতে ভর্তি সেহেতু সব ধরনের স্কোরধারীদের ভাগ করে ভর্তি করা দরকার। যেমন একটি কলেজে কেবল জিপিএ-৫ নয়। বলা দরকার সমপরিমাণ ৪ পাওয়া শিক্ষার্থী, সাড়ে ৪ বা তিন ও সাড়ে তিন বা অন্য স্তরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে হবে। তাহলে সব স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়েই পড়ালেখা চালাতে হতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কম মেধাবীদের ভর্তি করে যদি বেশি ভাল ফল করা যায় তবেই তো সেটা ভাল প্রতিষ্ঠান।
×