ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

তরুণ প্রাণ জাগানোর সংঘ

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

তরুণ প্রাণ জাগানোর সংঘ

করভী রাকশান্দ ২০০৭ সালে বাংলাদেশে জাগো ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। অনগ্রসর এলাকায় অবকাঠামো ও শিশুদের শিক্ষা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে জাগো ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদেরকে বিনামূল্যে শিক্ষাদান করে আসছে জাগো। বস্তির শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেশে দারিদ্র্য দূর করার অঙ্গীকার করেছিলেন করভী রাকসান্দ। আর এ জন্য বস্তির একটি ঘর ভাড়া করেছিলেন পাঠদান কার্যক্রমের জন্য। প্রতিদিন বস্তির ওই শিশুদের বাবা-মাকে আধা কেজি করে চাল দিতেন যাতে তারা সন্তানদের ওই স্কুলে পাঠায়। সেই থেকে শুরু, করভীর সেই কাজ আজ নেশায় পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করেছেন ১০টি অনলাইন স্কুল। এছাড়া নির্মাণ করেছেন স্কুল। এসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে হাজারো শিশুর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে করভীর ‘জাগো ফাউন্ডেশন’ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আইসিটি সুবিধা ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিয়েছে জাগো ফাউন্ডেশন। আর তা সম্পন্ন করা হয়েছে অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে। জাগো ফাউন্ডেশনের এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেল ইউনেস্কো পুরস্কার। গত ২১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) সফল ব্যবহারের জন্য ইউনেস্কোর হেড কোয়ার্টার- প্যারিস, ফ্রান্সে জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাকশান্দ ‘ইউনেস্কো কিং হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা’ পুরস্কার গ্রহণ করেন। ২০০৫ সাল থেকেই ‘ইউনেস্কো কিং হামাদ বিন ইসা আল-খলিফা পুরস্কার’টি শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির সফল ব্যবহারকে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। এই পুরস্কারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি ) ব্যবহারের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করা। ইউনেস্কোর মহা পরিচালক ইরিনা বকোভা, একটি ৫ সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক জুরি বোর্ড এবং আইসিটি খাতে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় জাগো ফাউন্ডেশন এবং আর কিছু সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আইসিটির (ভিডিও কনফারেন্স) মাধ্যমে গুণগত মানের শিক্ষা প্রদান করাই হচ্ছে অনলাইন স্কুলের মূল উদ্দেশ্য। এই পুরস্কারটি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক জুরির চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল বারগশ এবং ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বকোভা। জাগোর প্রচলিত ধারার তিনটি স্কুলও রয়েছে, যেখানে দেশের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর শিশুরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গুণগত মানসম্মত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সুশিক্ষিত ও দায়িত্বশীল সুনাগরিকে পরিণত হচ্ছে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের ভেতরে থাকা শিশুদের শিক্ষা পৌঁছে দেয়া সম্ভব- এই ধারণা থেকে শুরু হয় ‘অনলাইন স্কুল’ নামের নতুন একটি সম্ভাবনা। এ ধারণা বাস্তবায়নে অবকাঠামোগত সহায়তার জন্য এগিয়ে আসে গ্রামীণফোন এবং অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেড। সেই সময় জাগো ফাউন্ডেশন পাঠ্যক্রম এবং কারিকুলাম গঠনে এগিয়ে যায়, পাশাপাশি স্পন্সর এ চাইল্ড প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাধারণ বাংলাদেশীরা এগিয়ে আসেন আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে। একটি অনলাইন স্কুল দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে বর্তমানে ১০টি অনলাইন স্কুল রয়েছে, যেসব স্কুলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ১৫০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশু বিনামূল্যে শিক্ষা অর্জন করছে। অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে ঢাকার দূরবর্তী একটি গ্রামের ক্লাস রুমে বসে থাকা শিশুরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় বসে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়। অন্যদিকে সেই গ্রামের স্কুলে আরও দুজন সহকারী শিক্ষক শ্রেণীকক্ষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করেন।
×