ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ রেখে সংসদে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল পাস

প্রকাশিত: ০২:২৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ রেখে সংসদে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন মহলের আপত্তির মুখে বিশেষ প্রেক্ষাপটে নারী-পুরুষের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ বিল-২০১৭’ সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে কন্ঠভোটে তা পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। সংসদে পাসকৃত বিলের বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়, “এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং মাতা-পিতার সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।” এখানে সংসদীয় কমিটি ‘কোনো নারীর’ শব্দটি বাদ দিয়ে শুধু ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ এবং ‘মাতা-পিতা’র সঙ্গে ‘প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের’ সম্মতির শব্দটি যোগ করেছে। ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত বিলটি সংসদে ওঠে গত ৮ ডিসেম্বর। পরে বিলটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শেষে প্রস্তাবিত আইনে, ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিষয়টি শুধু নারীদের মধ্যেই আটকে না রেখে পুরুষকেও এ সুবিধার আওতায় আনার সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিলের প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন হয়। সোমবার বিলটি সংসদে স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ পাস হয়। ফলে নারীর পাশাপাশি পুরুষের ক্ষেত্রেও বিশেষ প্রেক্ষাপটের বিধান প্রযোজ্য হবে। একইসঙ্গে ওই বিধানে বাবা-মা বা যেখানে প্রয়োজন সেখানে অভিভাবকের সম্মতির বিধানও রাখা হয়েছে। এছাড়া পাস হওয়া বিলে ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধি দ্বারা নির্ধারিত রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে, যা সংসদে উত্থাপিত খসড়া আইনে উল্লেখ ছিল না। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, কোনো অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ এক মাসের কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজারের বদলে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডের সম্মুখীন হওয়ারও বিধান রাখা হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট এ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়। প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যুনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, “বাল্যবিবাহ সারা বিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বেও দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গার্লস সামিটে ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের নীচে বিয়ের হার শূন্যে, ১৫-১৮ বছর বয়সীদের বিয়ের হার এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।” এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।”
×