ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে জেএমবি’র ৩ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:৪২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের অভিযানে জেএমবি’র ৩ সদস্য গ্রেফতার

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর র‌্যাব-১১ সদস্যরা সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ও মোগড়াপাড়া এলাকা থেকে জেএমবির মূল ধারার তিন সদস্যকে জিহাদী বই, লিফলেট ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার করেছে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭টি জিহাদী বই, ৪৬টি লিফলেট, ৫টি দেশী অস্ত্র (চাপাতি ও চাকু), ৫টি ককটেল, কিছু বৈামা তৈরির সরঞ্জাম ও ২টি স্কচটেপ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার মোস্তফা ওরফে শামীম (২৫), ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ার আবু রায়হান ওরফে হিমেল (২৪) ও ঢাকার ধামরাইয়ের শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন (২১)। সোমবার ভোর ৪টা থেকে সকাল পৌঁনে ৬টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন গায়রে এহসান সদস্য। সোমবার দুপুর দেড়টায় সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীর রযাছ র‌্যাব-১১ এর ব্যাটেলিয়ন সদর দফতরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্ণেল কামরুল হাসান এসব তথ্য জানান। এ সময় র‌্যাবের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমজি) এর সক্রিয় সদস্য এবং সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তারা এও স্বীকার করে যে, জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন আমীর এবং মৃত্যুদন্ডে সাজাপ্রাপ্ত ও মৃত্যুদন্ড সাজা কার্যকর হওয়া শায়েখ আব্দুর রহমানের পথ অনুস্বরণকারী। উক্ত ৩ জন সদস্য নিজ নিজ এলাকা ও এলাকার বাহিরেও সাংগঠনিক বিভিন্ন ছদ্ব নাম ব্যবহার করে সংগঠনের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল। র‌্যাব আরও জানায়, আবু রায়হান ওরফে হিমেল বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সরকারি সফর আলী কলেজে সমাজ কর্ম বিষয়ে অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সে তৌহিদের (৩২) মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। তৌহিদের মাধ্যমে তার জেএমবির অপর সদস্য সাকিবের (২৫) সাথে তার পরিচয় হয়। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বাজারে সাকিব প্রায় তার সাথে দেখা করতে আসত এবং সাংগঠনিক বিষয়ে তারা আলোচনা করত। সে সাকিবকে ইয়ানত বাবদ ২শ টাকা মাসিক হারে চাঁদা দিত। সাকিবের মাধ্যমে অন্যান্য জেএমবির সদস্য আকাশ, রোকন ও আমিনদের পরিচয় হয়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সে ২০১৬ সালের মার্চ মাস হতে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাত। র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ওরফে শামীম ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করে তার এলাকার মাদ্রাসায় ভর্তি হয় এবং সংসারের অভাব অনটনের কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে জীবিকা নির্বাহের জন্য বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকে। ২০১৩ সালের শেষের দিকে সে নব্য মুসলিম হাসমত (৩০) নামক একটি অপরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে দীক্ষিত হয়। তখন থেকে নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যোগ এবং সে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হয়। এরপর ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার নিজ গ্রামের সাকিব (২৫) এর মাধ্যমে জেএমবিেিত যোগদান করে। ২০১৫ সালের ১ম দিকে সাকিবের মাধ্যমে গাজীপুর শালবাড়ী/শালনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সে সহ মোট ৬ জন মিলে ২৫ দিনের জিহাদী প্রশিক্ষণ নেয়। সাকিব এর মাধ্যমে সে মোবাইলে ধর্মীয় উগ্রবাদিতার ভিডিও ও লেকচার পেত। সে সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনের জন্য প্রতি মাসে ইয়ানত বাবদ ৫০/১০০ টাকা দিত। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনের অপর এক সদস্যের সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে সে ইয়ানত বাবদ টাকা সাকিবের পরিবর্তে ঐ সদস্যের কাছে দিত। প্রশিক্ষণ গ্রহণকালে আসাদ (২৫), শিমুল (২৬) এবং সাইদুল (২৬) তাদের প্রশিক্ষণ দিত। সংগঠনের জন্য সে এলাকার বাছেদ ও সিদ্দিক ওরফে আকাশ ও সোহেল রানাকে প্রশিক্ষণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে সাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকা পাঠায়। সে ২০১৫ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে সে হিজরতের উদ্দেশ্যে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়। র‌্যাব আরও জানায়, গ্রেফাতারকৃত শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন ধামরইয়ের শরফ বাগ ইসলামিয়া কামেল মাদ্রাসা থেকে ৯ম শ্রেণী পাশ করে। সে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করার জন্য ঘাটাইলে একটি কাঠের দোকানে কাজ করে। ২০১৫ সালে মোস্তফা ও সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করে এবং সংগঠনের সিদ্ধান্তে সে ধৃত মোস্তফার শ্যালিকাকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে সে বাটা জুতার কোম্পানীতে কিছুদিন কাজ করে। সে সংগঠনের জন্য নিয়মিত ইয়ানত দিত। সে অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর জঙ্গীবিরোধী অভিযানের কারণে সে নবেম্বরর মাসে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত তিন জেএমবি’র সদসদ্যের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের প্রস্তুতি চলছে।
×