ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্নীতি মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারি সাফাই সাক্ষ্য, পুনঃতদন্তের আবেদন খারিজ

বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানালেন খালেদা জিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানালেন খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য না দিয়ে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে আদালত তার ওই আবেদন নাকচ করে দিয়ে সাফাই সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করেছে। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পুনঃতদন্ত চেয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ওই আবেদনও খারিজ করে দেয় আদালত। বৃহস্পতিবার ঢকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমদ জমাদার এ আদেশ দেন। পুরান ঢাকার বকশিবাজারে কারা অধিদফতরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাশে মামলা দুটির বিচার চলছে। এর আগে মামলা দুটিতে হাজিরা দিতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে পৌঁছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। পরে দুই পক্ষের আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোলের মধ্য দিয়ে বিকেলে শুনানি শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার শুনানির শুরুতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৩২ জন সাক্ষীর জবানবন্দী পড়ে শোনান বিচারক। এ সময় বিচারক তাকে (খালেদা) প্রশ্ন করেন আপনি দোষী না নির্দোষী। তখন খালেদা জিয়া বলেন, আমার আইনজীবীরা আপনার প্রতি অনাস্থা দিয়েছেন। আমিও আনুষ্ঠানিকভাবে আপনার প্রতি অনাস্থা দিলাম। আপনি জোর করে আত্মপক্ষ সমর্থন করাচ্ছেন। তা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। পরে দুপুরে বিরতির আগে জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক অনাস্থা আবেদনটি নাকচ করে দেন। বিচারক তার আদেশে বলেন, এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছে প্রায় তিন বছর হতে চলল। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন অনুযায়ী ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হয়। মামলার শেষপর্যায়ে এসে এ ধরনের আবেদনের সুযোগ নেই। তাই আবেদন নাকচ করা হলো এবং মুলতবি করার আবেদনও নাকচ করা হলো। পরে এ মামলায় সাফাই সাক্ষী দেয়ার জন্য আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ঠিক করে দেন বিচারক। এর আগে গত সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত চেয়ে আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই দিন আদালত ওই আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার বিস্তারিত শুনানির দিন ধার্য করে। এ মামলার পরবর্তী দিনও ৯ ফেব্রুয়ারিই রাখেন বিচারক। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোন বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ। ওই মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। অন্যদিকে, ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়। দুই মামলারই বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান। এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। পরে ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন তিনি।
×