ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্রামে থাকবেন ক্রিকেটাররা। এরপর একমাত্র টেস্টটি খেলতে ভারত যাত্রা

আজ দেশে ফিরছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৭

আজ দেশে ফিরছে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করে আজ দেশে ফিরছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। শুরুতে ক্রাইস্টচার্চ থেকে অকল্যান্ডে পৌঁছাবেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। আজ রাত ১১টার মধ্যে ঢাকার মাটিতে পা রাখার কথা রয়েছে তামিম, সাকিব, মাহমুদুল্লাহদের। দেশে ফিরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্রামে থাকবেন ক্রিকেটাররা। এরপর একমাত্র টেস্টটি খেলতে ভারত যাবেন। যদি ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদে তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ হয়, তাহলে ১ ফেব্রুয়ারি হায়দরাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন। আর যদি প্রস্তুতি ম্যাচ কোন কারণে না হয়, তাহলে এক-দুইদিন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রস্তুতি সেরে নিয়ে হায়দরাবাদে যাবেন। সেখানে ৯ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের একমাত্র টেস্ট ম্যাচ রয়েছে। হায়দরাবাদের মাটিতে এক-দুইদিন প্রস্তুতি শেষেই আবার টেস্ট খেলতে নামবেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট শুরু হতে এখনও ১৫ দিন বাকি। দল ভারতের বিপক্ষে কি করবে, তা এখনই কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন ভরাডুবি হওয়ার পর ভারতের বিপক্ষেও দল যে কঠিন পরীক্ষার সামনে পড়বে, তা বোঝাই যাচ্ছে। আবার এটাও ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের কন্ডিশন, উইকেট সবই বাংলাদেশের মতোই। তাই নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন, উইকেটের সঙ্গে কুলিয়ে ওঠা না গেলেও ভারতের বিপক্ষে ভাল করার সম্ভাবনা আছে। তার মানে ভারতের বিপক্ষে দলের ভাল করার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সেই প্রত্যাশা এখন মিটলেই হয়। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্টটি নিয়ে চিন্তা করার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে, তিন ম্যাচের টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ময়না তদন্তও চলছে। সেই ময়না তদন্তে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহেও সামিল হয়েছেন। মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। টেস্ট দলে থাকা ক্রিকেটাররা সবাই আজ দেশে ফিরছেন। তবে হাতুরাসিংহে ফিরবেন না। কারণ তিনি ক্রাইস্টচার্চ থেকে সিডনি যাবেন। পরিবারের সঙ্গে কয়েকদিন সময় কাটিয়ে ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফিরবেন। এরপরই ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচের জন্য পরিকল্পনা করতে শুরু করে দেবেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যতই দলের ভরাডুবি হোক, হাতুরাসিংহে দলে বড় কোন ধরনের রদবদল করতে রাজি নন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি ওদের পারফর্মেন্সে সন্তুষ্ট। এটা চূড়ান্ত রকমের বাজে কিছু নয় যে এর থেকে উন্নতি করা সম্ভব না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ইতিবাচক দিকই আছে। যা হয়েছে তারজন্য সোজা একেবারে ওদের বাদ করে দিতে পারেন না পরের বিদেশ সফরগুলোতে। এই সফরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতে আরও ভাল করতেও সাহায্য করবে। রাব্বি-মিরাজদের মতো নতুনরা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সিরিজ থেকে এই সফরে অনেক উন্নতি করেছে। আমি ওদের দ্রুত শিখতেই দেখছি।’ দুই বছর পর বিদেশ সফরে গিয়ে ভরাডুবি। সামনে বিদেশ সফর আছে অনেকগুলো। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট শেষে শ্রীলঙ্কা সফর রয়েছে। এরপর আয়ারল্যান্ডে তিনজাতি সিরিজ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতিমূলক সিরিজ সেটি। তারপর রয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এ টুর্নামেন্ট শেষ হলে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সিরিজ খেলতে যাবে বাংলাদেশ। হাতুরাসিংহে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের সম্ভবত একটু বিশ্রাম দিয়ে খেলাতে চান। কিংবা দলে যে ক্রিকেটাররা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের চাপে রেখে খেলাতে চান না। সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগ পর্যন্ত ওদের যথাসম্ভব বিশ্রাম দিয়ে রাখতে হবে। কোন খেলোয়াড়ের ওপর চাপ বেশি যাচ্ছে। যাদের বেশি বিশ্রাম দরকার। ?তাদের ?কিছু কিছু ম্যাচ থেকে আমরা সরিয়ে রাখব। আবার কারও কারও আরও বেশি ম্যাচ অনুশীলনের দরকার। তাদের বিসিএলে (প্রথম শ্রেণীর ফ্র্যাঞ্চাইজি ঘরোয়া টুর্নামেন্ট) পাঠানো হবে।’ দলের অপরিহার্য ক্রিকেটাররা আবার বিদেশী লীগগুলোতেও ব্যস্ত থাকবেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততার মধ্যে পাকিস্তানের পিএসএল, ভারতের আইপিএলও থাকছে। ক্রিকেটাররা কি তাহলে এ লীগগুলো খেলবেন না? হাতুরাসিংহে ক্রিকেটারদের ওপরই সেই সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এটা শরীরের ওপর অনেক ধকল ফেলবে। এই চাপগুলো ওদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সামলাতে হবে। তবে এটা আমরা খেলোয়াড়দের ওপরই ছেড়ে দেব কিভাবে সব ঠিক রেখে সব ম্যাচের জন্য নিজেদের ফিট রাখতে পারে।’ নিউজিল্যান্ড সিরিজে যে কোচের লক্ষ্য পূরন হয়নি, তা নিজেই জানালেন হাতুরাসিংহে, ‘সব ম্যাচ হারলে তৃপ্ত হওয়ার কথা না। সে আলোকে বলা, সফর শুরুর আগে যে টার্গেট ছিল আমার, সে লক্ষ্য পূরণ হয়নি।’ সঙ্গে একেবারেই দল খারাপ করেছে, সেটি যেন মানতে নারাজ কোচ, ‘ফলাফলের দিকে তাকালে হতাশই মনে হবে। কারণ আমরা সব ম্যাচই হেরেছি। কিছু পজিটিভও আছে। আমরা পুরো সফরের বেশিরভাগ সময় ও ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছি। বেশ কয়েকবার সাফল্যের পথও খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু নিজেদের সৃষ্ট সে জেতার সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগিয়ে সাফল্যের মঞ্চে ওঠা সম্ভব হয়নি। মানছি সবারই প্রত্যাশা ছিল। সব ম্যাচ হার হয়তো অনেকেই আশা করেননি। তবে এটাও সত্য, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বেশ ক’বছর পর হঠাৎ এসে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করা সহজ না।’ ক্রিকেটাররা আজ দেশে ফিরেও হয়ত একইরকম কথা বলবেন।
×