ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ আদালতে সমান তালে চলছে ডিজিটাল আর কাগুজে কজলিস্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৭

উচ্চ আদালতে সমান তালে চলছে ডিজিটাল আর কাগুজে কজলিস্ট

আরাফাত মুন্না ॥ সুপ্রীমকোর্টের দৈনন্দিন কার্যতালিকার (কজলিস্ট) মুদ্রণ বন্ধ করে শুধু অনলাইনে রাখতে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি এক বছরেও। এখন অনলাইন কার্য তালিকার সঙ্গে কাগজে মুদ্রিত কজলিস্টও চলছে সমান গতিতে। অন্যদিকে, অনলাইন কার্যতালিকায় মামলার আদেশের সঙ্গে সঙ্গে তা প্রদর্শনের কথা থাকলেও কার্যত তা হচ্ছে না। আপীল বিভাগের মামলাগুলোর ফল দ্রুত অনলাইনে প্রদর্শন করলেও হাইকোর্টে উল্টো চিত্র। গত বছর ২৮ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের (আপীল ও হাইকোর্ট) কাগজে মুদ্রিত কার্যতালিকা (কজলিস্ট) বন্ধের ঘোষণা দেয় সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ হয়ে যাবে কাগজের কজলিস্ট। থাকবে শুধু অনলাইনে। আইনজীবীরা চাইলে সুপ্রীমকোর্টের ওয়বেসাইট থেকেই কজলিস্ট প্রিন্ট নিতে পারবেন। ওই সময় তাদের যুক্তি ছিল, মুদ্রণ বন্ধ করলে বছরে ২০ কোটি টাকা বাঁচবে। তবে সেই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি এক বছরেও। সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন বলছে, অনলাইন কজলিস্ট পুরোপুরি চালু থাকলেও আইনজীবীদের চরম আপত্তির মুখে কার্যতালিকা কাগজেও ছাপানো হচ্ছে। সুপ্রীমকোর্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি রাতে অনলাইনে আপলোডের পরদিন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনলাইন কজলিস্ট চালু করে কাগজে ছাপানো কজলিস্ট বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল। সেই পরিকল্পনার আজও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। সূত্র জানায়, অনলাইনে কার্যতালিকা থেকে বিচারপ্রার্থীরা দেশের যেকোন প্রান্তে বসে মামলার সর্বশেষ তথ্য জানতে পারবেন। এতে বিচারপ্রার্থীর অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হয়। এছাড়া বিচারপ্রার্থীদের নিজ মামলার শুনানির বিষয় প্রয়োজনমতো ওয়বেসাইট থেকে প্রিন্ট করেও নিতে পারবেন। কোন মামলা কি অবস্থায় আছে, তার তথ্যও কার্যতালিকায় দেখা যাবে। এতে আইনজীবী, সহকারী ও সুপ্রীমকোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎকোচ নেয়া বন্ধ হবে, এটাই ছিল সুপ্রীমকোর্টের উদ্দেশ্য। তবে আইনজীবীরা তা মানতে নারাজ। অন্যদিকে, আইনজীবীদের যুক্তি হচ্ছে সুপ্রীমকোর্টের প্রায় ছয় হাজার আইনজীবীর সবাই তো আর ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ নয়। ফলে এখনই কাগজে ছাপা কার্যতালিকা বন্ধ করে দেয়া উচিত হবে না। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক এবং বর্তমান নেতারা জানান, আদালতের মামলার কার্যতালিকা দেখেন আইনজীবীদের সহকারীরা। তারা ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ নন। তাই কজলিস্ট অনলাইনে প্রকাশ হলে তারা তা বুঝতে পারবেন না। আইনজীবীদের আপত্তির বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের এক কর্মকর্তা জানান, আইনজীবীদের শঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কেননা, ওয়েবসাইট থেকে যে কোন সময় কার্যতালিকা প্রিন্ট করা যাবে। আইনজীবীদের সহায়তার জন্য ‘সাপোর্ট সেন্টার’ রয়েছে। খুব জরুরী হলে এক্ষেত্রে হয়ত কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট করে কিছু কপি দেব। এর পরও বিশেষ করে সিনিয়র আইনজীবীদের চরম বিরোধিতার মুখে অনলাইন কজলিস্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে অনলাইন কার্যতালিকা মনিটরের জন্য প্রধান বিচারপতি ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার (জেলা জজ) বেগম হোসনে আরা আক্তারের নেতৃত্বে মনিটরিং কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার এস এম এরশাদুল আলম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আজিজুল হক, গবেষণা ও তথ্য কর্মকর্তা শামীম সুফী এবং বেঞ্চ ও ডিক্রী শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার বেগম মহোনাজ সিদ্দিকী। ওয়েবসাইটটি সব সময় সচল রাখতে ব্যাকআপ সার্ভার এবং সাবমেরিন কেবল কেটে গেলেও অনলাইন কজলিস্ট যাতে ইনপুট দেয়া যায় এজন্য স্যাটেলাইট বেজড ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যাকআপ রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া আইসিটি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল হার্ডওয়্যার সাপোর্ট দিতে এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এ টু আই প্রজেক্ট থেকে সফটওয়্যার সাপোর্টের জন্য একটি প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছিল। তবে এখন সবই ভেস্তে যাচ্ছে। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুধু অনলাইনে আপলোডের সিদ্ধান্ত জানানো হলেও আইনজীবীদের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে প্রতিটি কজলিস্ট ছাপাতে প্রায় ৪০০ টাকা খরচ পড়ে, এতে বছরে মোট খরচ হয় প্রায় ২১ কোটি টাকা। অথচ গ্রাহক চাঁদা বাবদ বছরে আয় হয় মাত্র ৬০-৭০ লাখ টাকা। বাকি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। তিনি বলেন, পুরোপুরি অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়া আমরা চাই আদালতের কার্য প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলার জট কমাতে, যেন জনগণের কষ্ট লাঘব হয়। সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন জানায়, আপীল বিভাগে দুটি এবং হাইকোর্টে অর্ধশত বেঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে হাইকোর্টে দ্বৈত ও একক বেঞ্চও রয়েছে। প্রতিটি বেঞ্চের প্রতিদিনের মামলার কার্যতালিকা হয় কয়েক শ’ পৃষ্ঠার। আর আপীল বিভাগের কার্যতালিকা হয় ৭-৮ পৃষ্ঠার।
×