ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দরিদ্র থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার

তেভেজের পাল্টে যাওয়া জীবন...

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ জানুয়ারি ২০১৭

তেভেজের পাল্টে যাওয়া জীবন...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জীবনের মোড়টা ঘুরে গেছে অনেক আগেই। ফুটবলের দক্ষতা, ক্যারিশমা দেখিয়ে বিশ্বের কাছে নিজেকে চিনিয়েছেন। আর্জেন্টাইন তারকা কার্লোস তেভেজ বিশ্বের নামীদামী সব ক্লাবে খেলে অনেক আগেই কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ কামিয়েছেন। আর এখন হয়ে গেছেন তিনিই বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে দামী ফুটবলার। চাইনিজ ক্লাব সাংহাই শিনহুয়া এ বছর তাকে কিনেছে বার্ষিক ৩৮ মিলিয়ন ইউরো মূল্যে। পারিশ্রমিকের দিক থেকে তেভেজের পেছনে এখন ব্রাজিলিয়ান তারকা অস্কার (২০.৮ মিলিয়ন পাউন্ড), ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (১৯ মিলিয়ন পাউন্ড), লিওনেল মেসি (১৯ মিলিয়ন পাউন্ড) ও গ্যারেথ বেল (১৮ মিলিয়ন পাউন্ড) অথচ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের এক কুখ্যাত এলাকা ফোর্ট এ্যাপাচির ভয়ঙ্করতম রাস্তার পাশে এক বস্তিতে বেড়ে উঠেছেন তেভেজ! ছিল না এমনকি এক জোড়া বুট কেনার সামর্থ্য, মা ছিলেন মদ্যপ- বাবার ছিল না কোন খবর। সেই তেভেজের জীবনের রং পাল্টে গেছে। এখন তার জীবনটাই সবচেয়ে রঙিন, ৩২ বছর বয়সী তেভেজ ধনী ফুটবলার। চীনা ক্লাব শিনহুয়ার প্রস্তাবিত অর্থে সপ্তাহে কার্লোস তেভেজের মূল্য দাঁড়ায় ৬ লাখ ১৫ হাজার পাউন্ড। বার্ষিক হিসেবে তা ৩১.৯৮ মিলিয়ন পাউন্ড। বর্তমান বিশ্বফুটবলের সবচেয়ে দামী যে ১০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সেখানে তিন ও চার নম্বরে অবস্থান যথাক্রমে রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগীজ ফরোয়ার্ড রোনাল্ডো এবং তেভেজেরই স্বদেশী বার্সিলেনার সুপারস্টার মেসির। দুইয়ে জায়গা করে নিয়েছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান বিস্ময় অস্কার। প্রিমিয়ার লীগের জায়ান্ট ক্লাব চেলসি ছেড়ে অস্কারও পথ ধরেছেন চীনের। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্কারের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হওয়ার বিষয়টিই ছিল আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু এবার অস্কারকেও সরিয়ে সবার ওপরে তেভেজ। অস্কারকে বার্ষিক ২০.৮ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভিড়িয়েছে চাইনিজ সুপার লীগের আরেক ক্লাব সাংহাই এসআইপিজি। রোনাল্ডো, মেসি ও বেলের পর ষষ্ঠস্থানে সাংহাই এসআইপিজির ব্রাজিলিয়ান তারকা হাল্ক। যার বার্ষিক আয় ১৬.৫ মিলিয়ন পাউন্ড। তারপর রয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পল পোগবা, ব্রাজিলিয়ান সেনসেশন নেইমার, গ্র্যাজিয়ানো পেল্লে এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইংলিশ স্ট্রাইকার ওয়েন রুনি। তেভেজ নিজেও হয়ত ঘুণাক্ষরে ভাবতে পারেননি এভাবে পাল্টে যাবে তার জীবনযাত্রা। নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য আর ফুটবল শৈলীতে বিশ্ববাসীকে মুগ্ধ করেছেন। তবে আরও অনেক তারকার ভিড়ে (বিশেষ করে মেসি-রোনাল্ডো-নেইমার-সুয়ারেজ) যেন কমই আলোকিত ও আলোচিত হয়েছেন তেভেজ অথচ বাবা-মা পরিত্যক্ত করেছিলেন তেভেজকে। তার চাচা সেগুনডো তেভেজ তাকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। যখন ‘বাবা’ ডাকতে শুরু করেছিলেন, তখন চাচাকেই সেটা ডেকেছেন তেভেজ। যে পরিবেশে প্রতিবেশীরা রক্তক্ষয়ী মারামারি, ঝগড়া, ফ্যাসাদে প্রতিটা দিন পার করত, যে রাস্তায় প্রতিদিন ছিল সন্ত্রাসী আর অপরাধের কর্মকা-ে ভরপুরÑ সেখান থেকেই ফুটবলার হয়ে বের হয়ে এসেছেন তেভেজ। এমন একটি ঘটনায় সবচেয়ে বাল্যকালের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও গুলি খেয়ে মরতে দেখেছেন দিন-দুপুরে শহরটির এক ক্যাসিনোয় সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ চলার সময়। সেগুন্ডোর ইচ্ছাতেই জীবন পাল্টে যাওয়ার রাস্তা পেয়ে গেছেন তেভেজ। ১৯৮৯ সালের নবেম্বরে মাত্র ৬ বছর বয়সে অল বয়েজ ইয়ুথ টিমের কোচ নোরবার্তো প্রোপাতো পথ করে দিয়েছিলেন। তিনি তেভেজের চাচাকে রাজি করান ক্লাবের ফুটবল স্কুলে ছোট্ট তেভেজকে ভর্তি করানোর ব্যাপারে। কিন্তু সেটাতে চাচা রাজি হলেও একজোড়া বুট কিনে দেয়ার সামর্থ্য ছিল না সেগুনডোর। কারণ তিনি স্বল্প বেতনে পাথর কাটা মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। কোনক্রমে দিনাতিপাত করতেন সেগুনডো। ১২ বছর পর বোকা জুনিয়র্সের অনুশীলন থেকে ফিরে আসেন তেভেজ একজন ভাল ফুটবলার হিসেবে। ততদিনে সেগুনডো চাকরিও হারিয়েছিলেন যখন তেভেজ ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে ৫ সন্তানকে খাওয়ানোর মতো সঙ্গতিও হতো না, সেগুনডো তার স্ত্রীকে নিয়ে অভুক্ত থাকতেন দিনের পর দিন। কিন্তু তেভেজ যখন ফিরে আসেন তখন মাসিক ২০০ ডলার করে বেতন পেতেন তিনি এবং চাচার পরিবারের আলো হয়ে ওঠেন। অন্তত প্রতি বেলা খাবারের জোগানদাতা হয়ে যান তেভেজ। আর এভাবেই ধীরে ধীরে বিশ্বমানের তারকায় পরিণত হয়েছেন তেভেজ। আর এখন কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থের মালিক ছোট্টবেলার ভাগ্যহত এ তারকা ফুটবলার।
×