ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আশকোনার আস্তানায় অভিযানে হত ২ ;###;জঙ্গীর ৭ বছরের কন্যা গুরুতর আহত ;###;গ্রেনেড পিস্তল, বিস্ফোরক সুইসাইডাল ভেস্ট উদ্ধার ;###;১৬ ঘণ্টার অভিযান

আত্মঘাতী নারী জঙ্গী ॥ কোমরে বাঁধা বিস্ফোরকে- নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬

আত্মঘাতী নারী জঙ্গী ॥ কোমরে বাঁধা বিস্ফোরকে- নিহত

শংকর কুমার দে/গাফফার খান চৌধুরী ॥ রাজধানীর দক্ষিণখানে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানকালে এক কিশোর ও এক নারী জঙ্গী নিহত হয়েছে। আত্মঘাতী নারী জঙ্গীর হ্যান্ডগ্রেনেডের বিস্ফোরণে জঙ্গী ইকবালের সাত বছরের কন্যাশিশু মারাত্মক আহত হয়েছে। তাকে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অভিযানকালে আত্মসমর্পণ করেছে দুই নারী জঙ্গীসহ চারজন। আত্মঘাতী জঙ্গীদের হামলায় আহত হয়েছেন পুলিশের এক পরিদর্শক। শনিবার বিকেল চারটা নাগাদ টানা প্রায় ষোলো ঘণ্টা পর অপারেশন ‘রিপল-২৪’ সফলভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। আস্তানাটি আত্মঘাতী নারী জঙ্গী ও ইতোপূর্বে নিহত ও পলাতক জঙ্গীদের ছেলেমেয়েদের জন্য গড়ে তুলেছিল জঙ্গীরা। আস্তানা থেকে পিস্তল, হ্যান্ডগ্রেনেড, বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্টসহ (আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য ব্যবহৃত গ্রেনেড রাখার বিশেষ বেল্ট) উদ্ধার হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শকসহ উর্ধতন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে নানা ধরনের আলামত। যেভাবে অভিযান চালানো হয় ॥ শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণখান থানাধীন পূর্ব আশকোনার আল বাছির জামে মসজিদ রোডের ৫০ নম্বর তিনতলা ৫০ নম্বর সূর্য ভিলা নামের বাড়িটির চারদিকে অবস্থান নেয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। বাড়িটিতে মেজর মাইনুদ্দিন মুসা ওরফে মেজর মুসা ছিল, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। মুসা সেনাবাহিনীর মেজর ছিল নাকি এটি তার ছদ্মনাম, তা নিশ্চিত নয়। অভিযানে মুসাকে পায়নি পুলিশ। বাড়িতে নারী ও শিশু থাকায় রাতে আর অভিযান চালানো হয়নি। সকালের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে পুলিশ। সকাল হওয়ার পর বাড়িটি পুলিশে ঘিরে ফেলার দৃশ্য দেখে হতবাক স্থানীয়রা। পুলিশ এ সময় আশপাশের দোকানপাট বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করে। রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান শুরু করে। অভিযানকালে ওই এলাকার প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। তবে এমন বিপত্তিতে কেউ আপত্তি করেননি। তারা জঙ্গী দমনে বরং প্রশংসা করেছেন। ডিবির বম্ব ডিসপোজাল টিম প্রধানের বক্তব্য ॥ অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকেই তারা হ্যান্ডমাইকযোগে বাড়ির বাসিন্দাদের নিচে নেমে পড়তে বলেন। এরপর বাড়িটির দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় তলার বাসিন্দারা সকাল আটটা নাগাদ পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে নিচে নেমে যান। কিন্তু নিচ তলায় থাকা জঙ্গী আস্তানার কেউ দরজা খোলে না। এ সময় নিচতলায় থাকা জঙ্গী আস্তানার সকলকে আত্মসমর্পণের কথা বলা হয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আস্তে আস্তে দুই নারী জঙ্গী দুই শিশুসন্তান নিয়ে আত্মসর্মপণ করে। এরা হচ্ছে, রাজধানীর রূপনগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা ও তার এক সন্তান, পলাতক শীর্ষ জঙ্গী মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তার এক সন্তান। তারা প্রথমে সুইসাইডাল ভেস্ট পরিধান করে পুলিশের মুখোমুখি হয়। এরপর পুলিশ তাদের সুইসাইডাল ভেস্ট খুলে ফেলতে বলে। অন্যথায় পুলিশ এ্যাকশনে যেতে বাধ্য হবে। আর তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এমন কথায় এবং পুলিশের কথায় শেষ পর্যন্ত দুই নারী জঙ্গী শিশুদের নিয়ে সুইসাইডাল ভেস্ট খুলে আত্মসর্মপণ করে। সুইডাল ভেস্টে হ্যান্ডগ্রেনেড ছিল। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, আত্মসমর্পণের পর মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা ও তার সন্তান এবং জঙ্গী মুসার স্ত্রী তৃষা ও তার সন্তানকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, বাড়ি ভাড়া নেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজই করত মুসা। বাড়ির একমাত্র পুরুষ সদস্যও ছিল মুসাই। মূলত পলাতক জঙ্গীদের স্ত্রী-সন্তানদের নিরাপদ আস্তানা ছিল ফ্ল্যাটটি। পাশাপাশি ফ্ল্যাটটি থেকে আত্মঘাতী নারী ও পুরুষ জঙ্গীরা জঙ্গী কার্যক্রম চালাত। দ্বিতীয় দফায় অভিযান ॥ আত্মসমর্পণের পর বাড়িটির জঙ্গী আস্তানাটিতে আরও তিনজন রয়ে যায়। আত্মসমর্পণকারীরা জানান, আস্তানায় আগ্নেয়াস্ত্র ও হ্যান্ডগ্রেনেড নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত জঙ্গী ইকবালের মেয়ে সাবিনা (৭), জঙ্গী সুমনের স্ত্রী ও আজিমপুরে পুলিশের অভিযানের সময় আত্মহত্যা করা তানভীর কাদেরীর ছেলে আবির কাদেরী ওরফে আফিফ কাদেরী ওরফে আদর (১৪) রয়েছে। তিনজনের মধ্যে আদর ও সুমনের পেটে সুইসাইডাল ভেস্ট এবং কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। এর পর আবার হ্যান্ডমাইকযোগে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ করতে নারাজ। এভাবে দুপুর সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। কিন্তু তারা কোনক্রমেই তাতে রাজি হয়নি। সাড়ে বারোটার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালাতে যায়। এ সময় সুমনের স্ত্রী জঙ্গী ইকবালের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বোরখা পরে বের হয়। দরজা খুলে বের হওয়ামাত্র তাকে হাত উঁচু করে এগোতে বলা হয়। কিন্তু আচমকা সে তার পেটে বাঁধা সুইসাইডাল ভেস্ট থেকে হ্যান্ডগ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। সঙ্গে সঙ্গে ইকবালের মেয়ে সাবিনা আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। সেই সঙ্গে সুমনের স্ত্রীও আহত হয়ে বাড়িটির নিচতলার গ্যারেজে পড়ে থাকে। বিস্ফোরণে অভিযানকারী পুলিশ পরিদর্শক শফি আহত হন। অন্য পুলিশ সদস্যরা শফিসহ ওই শিশুকে দ্রুত উদ্ধার করে। শরীরে গ্রেনেডের স্পিøন্টার বিদ্ধ হওয়ায় তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। তাদের অবস্থা গুরুতর। পরে অবশ্য তারা অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সুমনের স্ত্রীর নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। সে গ্রেনেডের বিস্ফোরণে নিহত হয়ে গ্যারেজেই পড়ে ছিল। এর পর তানভীর কাদেরীর ছেলেকেও আত্মসমর্র্পণ করতে বহুবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সে রাজি না হয়ে উল্টো গুলি চালায়, গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এক পর্যায়ে পুলিশ সরে এসে সে যাতে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়, এজন্য ঘরের মধ্যে গ্যাস ভর্তি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এতে হ্যান্ডগ্রেনেডের বিস্ফোরণে ও গ্যাসে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে কষ্টের এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত তার লাশ ঘরেই পড়েছিল। তানভীরের ছেলের লাশ ভেতরের একটি কক্ষে পাওয়া যায়। গুলি চালানোর পর গ্রেনেড বিস্ফোরণের এক পর্যায়ে তার হাতে থাকা পিস্তলটি রুমের বেসিনের কাছে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে বিস্ফোরিত গ্রেনেড ও বিস্ফোরকগুলো ওই বাড়িতে তৈরি হয়নি বলে প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে। এগুলো অন্য কোথাও তৈরি করে এনে আস্তানায় মজুদ করা হয়েছিল অথবা নিজেদের নিরাপত্তার কারণেও তারা এসব রাখত। নিহত জঙ্গী কিশোর আবির জঙ্গী তৎপরতা চালাত ॥ তানভীর কাদেরীর ছেলে নিজেকে শহীদ কাদেরী পরিচয় দিত। নিয়মিত পাড়ার বিভিন্ন মসজিদে নামাজ আদায় করত। নামাজ শেষে সমবয়সীদের মধ্যে জিহাদের কথা প্রচার করত। স্থানীয় এক কিশোরের কাছে জঙ্গীবাদের কথা বলত আবির। ওই কিশোর বহুবার আবিরদের বাসায় গেছে। সেখানে আবিরকে অস্ত্র ও গ্রেনেড চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে দেখেছে। ওই কিশোরকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে নিহত জঙ্গীদের সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, নিহত আবিরের মা ফাতেমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে লেখাপড়া শেষ করেন। চাকরি নেন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘ সেভ দ্য চিলড্রেন’এ। ২০১৪ সালে হজ করতে সপরিবারে সৌদি আরবে যান তানভীর। সেখান থেকে ফেরার পরেই ধর্মীয় উগ্র মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন। ফাতেমাও তখন থেকেই হিজাব পরা শুরু করেন। হজ থেকে ফিরে ২০১৪ সালে ডাচ-বাংলার চাকরি ছেড়ে ‘আল সাকিনা হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ নামে একটি ব্যবসা শুরু করেন তানভীর কাদেরী। পাশাপাশি জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েন। স্বামীর কারণেই তিনি জঙ্গীবাদের পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন। বাড়ির মালিকের মেয়ের বক্তব্য ॥ বাড়িটির মালিক জামাল উদ্দিন। কুয়েত প্রবাসী। স্ত্রী চায়না বেগম। দুই মেয়ে। জোনাকি রাসেল বলেন, তিনি সামনের ৮৯১ নম্বর তিন তলা বাড়িতে থাকেন। গত ১ সেপ্টেম্বর মাসিক দশ হাজার টাকায় ভাড়া নেয় ফ্ল্যাটটি। একমাসের টাকা অগ্রিম দেয়। মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ পরিচয়ে বাড়িটি ভাড়া নেয়। ইমতিয়াজ নিজেকে অনলাইনের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। ইমতিয়াজ নামের ওই ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় বলেন, তিনি, তার স্ত্রী ও এক বাচ্চা থাকবে। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর বোন এসে থাকবেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর পরিবার নিয়ে তিনি বাড়িতে ওঠেন। তিনি আরও জানান, তারা ভাড়াটিয়া ফরম পূরণ করে পুলিশের কাছে দিয়েছিল এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের একটা কপিও জমা দিয়েছিল। নিচতলার ভাড়াটিয়ারা তেমন বের হতেন না। বাসায় ল্যাপটপ, খাট, ড্রেসিং টেবিল, ফ্রিজ ছিল। বাড়ি থেকে বের না হওয়ার বিষয়ে ভাড়াটিয়ারা তাদের জানিয়েছিল, বাচ্চা দেখলে হিজড়ারা টাকা চায়। এজন্য ভাড়াটিয়ারা বের হতেন না বলে তার কাছে দাবি করেছিলেন। তবে মাঝে মাঝে দুজন নারী ওই বাসায় যাতায়াত করতেন। তারা গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন বলে জানাতেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ॥ আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে ঘটনাস্থলে যান। তিনি অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করেন। বলেন, এই অভিযানে চারজন আত্মসমর্পণ করেছেন। নিহত হয়েছেন দুজন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন নারী জঙ্গী। যিনি জঙ্গী সুমনের স্ত্রী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আহত অবস্থায় জঙ্গী ইকবালের কন্যাশিশুকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎ?সা দেয়া হচ্ছে। আস্তানার ভেতরে তাজা গ্রেনেড, বোমা ও বিস্ফোরক পড়ে আছে। পর্যায়ক্রমে এসব সরানো হবে। অভিযানে দুই জঙ্গী নিহত হয়েছে। আত্মসমর্পণ করেছেন দুই নারী জঙ্গী ও তাদের দুই সন্তান। পুলিশ মহাপরিদর্শকের বক্তব্য ॥ ঘটনাস্থল পরিদর্শক করে এ কে এম শহীদুল হক বলেন, এই অপারেশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘রিপল ২৪’। রিপল হচ্ছে, ঢেউয়ের মতো প্রসারিত হওয়া। আর এই অভিযানও প্রসারিত হয়েছে। এজন্যই এমন নাম। ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য ॥ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, নিহত নারী জঙ্গী সুমন নামের একজনের স্ত্রী। তবে সুমন জঙ্গী হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও পুলিশের কাছে সুমন নামের ওই ব্যক্তি সম্পর্র্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য নেই। সুমনের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। এজন্য আত্মসমর্র্পণকারীদের পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। শিলা সম্পর্কে যা জানা গেছে ॥ গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুরের রূপনগরের একটি বাসায় পুলিশের অভিযানে সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম নিহত হন। আশকোনায় এক সন্তান নিয়ে আত্মসমর্পণকারী জেবুন্নাহার শিলার স্বামী এই মেজর জাহিদ। গত ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার বাসায় নব্য জেএমবির নেতা তামিম চৌধুরী পুলিশী অভিযানে নিহত হন। সেই বাসা ভাড়া করে দিয়েছিল জাহিদ। জঙ্গী গোষ্ঠীটিতে তামিমের পরেই ছিল তার অবস্থান। আজিমপুরে যে ‘জঙ্গী আস্তানায়’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়েছিল সেখানেই অন্য জঙ্গী ও তাদের পরিবারের সঙ্গে দুই সন্তানকে নিয়ে ছিলেন জেবুন্নাহার শিলা। তবে অভিযানের চারদিন আগে সেখান থেকে সরে যায়। গত ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকার আজিমপুরে বিজিবি ২ নম্বর গেটের পাশে এক বাড়িতে অভিযানকালে নব্য জেএমবির সমন্বয়ক তানভীর কাদেরী আত্মহত্যা করে। তিন শিশুকে উদ্ধারের পাশাপাশি তানভীর কাদেরীর স্ত্রী আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা, গুলশান হামলায় জড়িত নুরুল ইসলাম মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি এবং আরেক জেএমবি নেতা বাসারুজ্জামান ওরফে চকলেটের স্ত্রী শারমিন ওরফে শায়লা আফরিনকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হওয়া তিন নারী জঙ্গীর সঙ্গেই দুই মেয়েকে নিয়ে আজিমপুরের ওই আস্তানাতেই ছিলেন আশকোনার আস্তানা থেকে আত্মসমর্র্পণকারী মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা। সাম্প্রতিক অভিযানে শনিবারের দুজন নিয়ে ৩৭ জঙ্গী নিহত হলো। নারী জঙ্গীর লাশ ঢামেক হাসপাতালে ॥ জঙ্গীবিরোধী ‘রিপল ২৪’ অভিযানে নিহত নারী জঙ্গীর মরদেহ ঢামেক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শনিবার রাত দশটার দিকে ঢামেকে তার মরদেহ নেয়া হয়। গ্রেনেডে আহত শিশুর শরীরে সফল অস্ত্রোপচার ॥ গ্রেনেডে আহত শিশুর শরীরে সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। শনিবার রাতে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হওয়ার পর ঢামেক হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের আইএমও ডাঃ মোশতাক আহমেদ জানিয়েছেন তার বুকের চামড়ার ওপর একটু আঘাত আছে। বাঁ হাত ভাঙ্গা। তবে পেটের আঘাত গুরুতর। পেটে স্পিøন্টার ঢুকে তার খাদ্যনালীর কয়েক জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। আমরা জায়গাগুলো রিপেয়ার করেছি। এখন তাকে পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না। শিশুটির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক। তবে তার জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে। নব্য জেএমবির কোটি টাকার জঙ্গী তহবিল ॥ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তুরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গী হামলায় জড়িত নব্য জেএমবি তাদের কর্মকা- চালিয়ে নিতে কয়েক শীর্ষ নেতার চাঁদায় কয়েক কোটি টাকার তহবিল গড়েছিল। সাবেক মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়ার পর পাওয়া প্রায় কোটি টাকা জমা দিয়েছিলেন নব্য জেএমবির এই তহবিলে। সাবেক ব্যাংকার তানভীর কাদেরী তার উত্তরার ফ্ল্যাট বিক্রি করে পাওয়া কোটি টাকাও সংগঠনে দিয়েছিলেন। এছাড়া পুরো পরিবার নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া খিলগাঁওয়ের চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন নব্য জেএমবির তহবিলে ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। এছাড়া গত ৮ অক্টোবর ঢাকার আশুলিয়ার এক বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানে নিহত আব্দুর রহমান আয়নাল (৩০) নামে এক জেএমবি নেতা জেএমবির অন্যতম অর্থদাতা ছিলেন। অভিযানকালে আব্দুর রহমানের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়।
×