ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধাঞ্জলি

তোমাদের কথা বলছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

তোমাদের কথা বলছে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বজন হারানোর বেদনা আর বুদ্ধিজীবী হন্তারকদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে রায় কার্যকরের স্বস্তি- এই ভিন্ন আবহেই বুধবার জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করল কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যার দায়ে বদর বাহিনীর সর্বোচ্চ নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর এবার প্রথম বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করল বাংলাদেশ। দীর্ঘ চার দশকের বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর দেশী-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের হন্তারকদের বিচারের রায় কার্যকরের তৃপ্তি নিয়েই গোটা জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় পালন করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসের প্রতিটি কর্মসূচীতে সকল যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি, একাত্তরের ঘাতক সংগঠন জামায়াত নিষিদ্ধ এবং পরাজিত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের দাবি ছিল প্রচণ্ড। জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নির্মূল করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার আর যুদ্ধাপরাধীমুক্ত দেশ বিনির্মাণে এবার দিবসটিতে নতুন প্রজন্মের জোয়ার নেমেছিল সর্বত্র। রাজাকার-আলবদর-আলশামস ও তাদের দোসরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে যেন একাত্তরের মতোই জেগে উঠেছিল দেশের মানুষ। পথে পথে ছিল নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানিয়ে ‘সচেতন নতুন প্রজন্ম’ গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা। শহীদদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক, বৈষম্যহীন ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সর্বস্তরের জনগণও। জাতীয় জীবনের বেদনাঘন দিনটিতে রাজধানীতে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন লাখো মানুষ। তাদের হাতে ছিল ফুল, কণ্ঠে ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের মোকাবেলার দৃপ্ত শপথ। বুদ্ধিজীবী হন্তারক যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি প্রবল ঘৃণা-ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি দেশে-বিদেশে পালিয়ে থাকা সব যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের দাবিও ছিল প্রচণ্ড। ‘রাষ্ট্রদ্রোহী হায়েনা রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধী, বাঙালী তোদের ক্ষমা করবে না, তোদের সকলের বিচার হবেই এ বাংলায়’- মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের প্রবেশ পথেই একটি সাদাকালো ব্যানারে লেখা ছিল এই দীপ্ত শপথের বাণী। শুধু ব্যানার নয়, বুধবার দিনভর হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসার সঙ্গে স্মরণ করতে আসা লাখো শোকার্ত মানুষের কণ্ঠেও ছিল সেই একই দাবি। পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গী অপশক্তি ও তাদের মদদদাতাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা-ধিক্কার জানিয়েছেন নানাভাবেই। মানুষের বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল মিরপুর ও রায়েরবাজার শহীদ বৃদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মুল বেদিমূল। এ দুটি স্থানে একাত্তরে পাক হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর হায়েনাদের দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নৃশংসভাবে হত্যার পর বধ্যভূমিতে ফেলে রাখার অসংখ্য নিষ্ঠুর ও ভয়াবহ আলোকচিত্র এবং প্রতীকী বধ্যভূমি বানিয়ে তা প্রদর্শন- শ্রদ্ধা জানাতে আসা লাখো বাঙালীকে শিহরিত করে তুলেছিল। শহীদ পরিবারের সদস্যরা বধ্যভূমি প্রাঙ্গণে এসে স্বজনদের স্মরণ করার পাশাপাশি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একই সঙ্গে আলবদর নেতা আলী আহসান মুজাহিদসহ যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা ॥ সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টা ১০ মিনিটে শহীদ বেদিতে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল শহীদদের স্মরণে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- তোফায়েল আহমেদ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, ওবায়দুল কাদের, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পৌঁছে প্রথমেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতিও শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অপেক্ষমাণ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের নিয়ে ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর স্মৃতিস্তম্ভ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খুলে দেয়া হয়। পরে একে একে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানায়- কেন্দ্রীয় ১৪ দল, শহীদ পরিবারের সন্তান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা, ঢাকার দুই মেয়র, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। একে একে সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি, রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বে ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে জাসদ, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম, অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। সকাল সাড়ে ১০টায় দলের নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ফারজানা ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য মীজানুর রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য হারুন অর রশিদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান শ্রদ্ধা জানান স্মৃতিসৌধে। এছাড়াও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, জাতীয় জাদুঘর, বাসদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অজস্র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানায়। মঈন-আশরাফকে ফেরাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে -ওবায়দুল কাদের ॥ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘যারা দেশের সেরা সন্তানদের হত্যা করেছে, তাদের মধ্যে যারা শীর্ষস্থানীয়, তাদের বিচারকাজ শুধু সম্পন্নই হয়নি, তাদের রায়ও কার্যকর করা হয়েছে। বাইরে যারা আছে তাদেরও দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার সক্রিয় প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে।’ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা জুলাইয়ে -মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ॥ রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘আশা করি আগামী জুলাই মাসে আমরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাব। জেলা পর্যায় থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা সংগ্রহের কাজ চলছে, আগামী জুলাইয়ে যার গেজেট প্রকাশ হবে।’ তিনি আরও বলেন, আমরা সব জেলা থেকে তালিকা সংগ্রহ করছি, এখন সংকলন করে তা বই আকারে প্রকাশ করব। বিভিন্ন জেলা, প্রশাসন ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করছে, লালন করছে, তাদের মাধ্যমে আমরা জেলাভিত্তিক সেই তালিকাগুলো গ্রহণ করছি। সচেতন নতুন প্রজন্ম চান বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা বুদ্ধিজীবীদের সন্তানরা স্মরণ করেন তাদের পূর্বসূরীদের মহান আত্মত্যাগের কথা। শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনির তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, খুব বেশি লেখা বই নেই যেখানে আমাদের ছোটরা নিহত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু ফেসবুকিং করে ভাল মানুষ হওয়া যায় না। দিবসটি উপলক্ষে সকাল সাড়ে ১০টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি, দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নও (ডিইউজে) পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করে। ডিইউজের সভাপতি শাবান মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় বিএফইউজের মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×