ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড় ছাঁটাইয়ের পথে আনন্দবাজার গ্রুপ

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

বড় ছাঁটাইয়ের পথে  আনন্দবাজার  গ্রুপ

বিডিনিউজ ॥ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ও ইংরেজী ভাষার অন্যতম শীর্ষ দুই সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা ও দ্য টেলিগ্রাফে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে বলে খবর দিয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য কুইন্ট।শনিবার কুইন্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুই পত্রিকার মালিক প্রতিষ্ঠান আনন্দবাজার গ্রুপ তাদের কর্মী বাহিনীর ৪০ শতাংশকে ছাঁটাই করতে পারে, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে ‘অনানুষ্ঠানিকভাবে’ কর্মীদের জানানো হয়েছে। ভারতের ‘ওয়ার্কিং জার্নালিস্ট এ্যাক্টের’ অধীনে মজুরি বোর্ড নির্ধারিত বেতন কাঠামোয় কর্মরত সাংবাদিকদের ওই নোটিস দেয়ার পর বুধবার আনন্দবাজার গ্রুপের এই ছাঁটাই পরিকল্পনার খবর প্রকাশিত হয় বলে কুইন্টের তথ্য। ওই নোটিসে বলা হয়েছে, সাংবাদিক ও অন্য বিভাগের যে কর্মীদের আর প্রয়োজন নেই, তারা অবসরে যাওয়ার সময় পর্যন্ত বর্তমান হারে মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন। যারা মজুরি বোর্ডের অধীনে রয়েছেন তাদের কোম্পানির প্রস্তাব গ্রহণ করে ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। কুইন্ট লিখেছে, এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা বলতে তারা যোগাযোগ করলেও আনন্দবাজার পত্রিকা গ্রুপের কোন সাড়া পায়নি। ই-মেইলে তাদের লিখিত প্রশ্নেরও কোন উত্তর আসেনি। চার পৃষ্ঠার আনন্দবাজার পত্রিকা নিয়ে ১৯২২ সালে যাত্রা শুরু করে এবিপি গ্রুপ। বর্তমানে এই গ্রুপের হাতে রয়েছে বাংলা ট্যাবলয়েড এবেলা, ইংরেজী দৈনিক টেলিগ্রাফ, দেশ ও সানন্দাসহ আটটি ম্যাগাজিন এবং এবিপি নামে বিভিন্ন ভাষার ছয়টি টেলিভিশন চ্যানেল। এদিকে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদনে লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক হাজার ও ৫০০ রুপীর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আর্থিক সঙ্কট তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন কোম্পানি বিজ্ঞাপন খাতে খরচ কমিয়ে দিয়েছে, যার ধাক্কা লেগেছে সংবাদ মাধ্যমে। টেলিগ্রাফ ও আনন্দবাজার প্রত্রিকার প্রকাশক এবিপি গ্রুপ তাদের প্রকাশনাগুলোর পাতা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিভাগীয় প্রধানদের কর্মী ছাঁটাই করতে নির্দেশ দিয়েছে বলে ‘সংশ্লিষ্ট সূত্রের’ বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবরে। পত্রিকাটি জানিয়েছে, মজুরি বোর্ডের অধীনে থাকা কর্মীদের জন্য এবিপি গ্রুপ স্বেচ্ছা অবসরের প্রস্তাব দিয়েছে। কর্মীদের অবসরের বয়স ৬০ বছর থেকে কমিয়ে ৫৮ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে। আনন্দবাজার ও টেলিগ্রাফের সাংবাদিকদের বরাত দিয়ে কুইন্ট লিখেছে, এবিপি গ্রুপ তাদের পত্রিকা, সাময়িকী ও টিভি চ্যানেলগুলোকে ‘আরও সময়োপযোগী করতে এবং ব্যয় কমাতে’ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হে কন্সালটেন্সি লিমিটেডকে দায়িত্ব দেয়। ছয় মাস কাজ করে হে কনসালটেন্সির সম্প্রতি যে সুপারিশ তুলে ধরেছে, তাতে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী বাড়তি বলে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়। আনন্দবাজার ও টেলিগ্রাফ মিলে কর্মীর সংখ্যা বারশর বেশি। এর বাইরে চ্যানেলগুলোরও বেশ কিছু কর্মী রয়েছে। ঠিক কতজন কর্মী ছাঁটাই করা হবে, তা স্পষ্ট না হলেও কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগে হতাশার ছায়া পড়েছে সাংবাদিক ও অন্যান্য বিভাগের কর্মীদের ওপর। এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে কুইন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এত বড় সংখ্যক সংবাদকর্মীর জন্য নতুন কাজ পাওয়া এই বাজারে এমনিতেই কঠিন। পশ্চিমবঙ্গে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে, কারণ পত্রিকা আর টিভি- দুই মাধ্যমেই বেশ কিছু দিন ধরে মন্দা যাচ্ছে।’ এর আগেও ১৯৯৯ সালে পরামর্শকের সুপারিশ নিয়ে কর্মী ছাঁটাই করেছিল এবিপি গ্রুপ। তবে সে সময় ছাঁটাইয়ের সংখ্যা তত বেশি ছিল না। কুইন্ট লিখেছে, ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গত দু’বছর ধরে এবিপি গ্রুপের সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না। এবিপির প্রকাশনায় সরকারী বিজ্ঞাপনও বন্ধ রয়েছে।
×