ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৯ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

নেত্রকোনা নিজস্ব সংবাদদাতা নেত্রকোনা থেকে জানান, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিন সকালে শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনা। হাজারো মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী মানুষের ‘জয়বাংলা’ স্লোাগানে প্রকম্পিত হয় নেত্রকোনা মহকুমা শহর, ওড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। মুক্তিযুদ্ধকালে ন’মাসই নেত্রকোনা শহর ছিল পাক বাহিনীর ঘাঁটি। দালাল-রাজাকারদের সহযোগিতায় শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল পাক হানাদাররা। ৮ ডিসেম্বর রাত থেকেই তারা কোম্পানির আবু সিদ্দিক আহমেদ ও আশরাফ আলী খান খসরুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে টার্গেট করে শহরের কৃষি ফার্ম এলাকায় এ্যাম্বুশ পাতেন। তাঁদের অবস্থান টের পেয়ে ৯ ডিসেম্বর সকালে ময়মনসিংহের পথ ধরে পালাতে শুরু করে পাকবাহিনী ঠিক এমন সময় গর্জে ওঠে মুক্তিসেনাদের রাইফেল। পাকসেনারাও পাল্টা গুলি চালায়। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। আবু খাঁ ও আব্দুস সাত্তার নামে দুই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন সে যুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের শেষ প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায়। আর এভাবেই শত্রুমুক্ত হয় নেত্রকোনা। প্রতি বছরের মতো এবারও গভীর শ্রদ্ধায় পালিত হচ্ছে দিনটি। এ উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে : সকালে স্থানীয় শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পতাকা উত্তোলন, বিজয় র‌্যালি, দুপুরে পাবলিক হলে আলোচনা সভা এবং বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দাউদকান্দি নিজস্ব সংবাদদাতা দাউদকান্দি থেকে জানান, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী হটতে শুরু করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহিদনগর ওয়ারলেস কেন্দ্রে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাউদকান্দি ডাকবাংলোতে অবস্থানরত পাক সেনাদের টার্গেট করে উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব হতে একযোগে আক্রমণ শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধাকে। মোহাম্মদপুর, ডাকখোলা, গোয়ালমারী, বাতাকান্দি প্রভৃতি এলাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকেন, পূর্ব দিক হতে মিত্র বাহিনীর আর্টিলারির কাভারিং ফায়ার ফ্রন্টে থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাক সেনারা পশ্চিম দিকে হটতে থাকে। মিত্র বাহিনীর সেলিংয়ের কারণে শহিদনগর ওয়ারলেস এলাকা ছেড়ে পাক সেনারা দাউদকান্দি সদরের দিকে দৌড়াতে থাকে। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলির জনসাধারণ উত্তর দিকে গোমতী নদীতে আতঙ্কিত অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর রাত এবং ৯ ডিসেম্বর বেলা ১১টা পর্যন্ত যুদ্ধের পর পাক সেনারা দাউদকান্দিতে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল সড়ক ও জনপথের বাংলোতে ওঠে এবং সেখান থেকে লঞ্চযোগে মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি পৌঁছে হানাদারমুক্ত দাউদকান্দিতে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা ওড়ায়। দাউদকান্দি মুক্ত দিবস উপলক্ষে দাউদকান্দি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে বিকেল ৩টায় দাউদকান্দি সদর যারিফ আলী শিশু পার্কে মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ খোরশেদ আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূইয়া এমপি, দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজর (অব) মোহাম্মদ আলী সুমন। নাজিরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা ফটিকছড়ি থেকে জানান, আজ নাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ। এ দিনে পাক বাহিনীর সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং মুক্তিবাহিনীর সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ঐ দিন সকালে পাক বাহিনী নাজিরহাট ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্তিবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী জনতা আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হয়। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খবর পেয়ে পাক বাহিনী সাজোয়া যান নিয়ে অতর্কিতভাবে মুক্তিবাহিনীর উপর হামলা চালায়। সংঘটিত হয় সম্মুখযুদ্ধ। এ যুদ্ধে ১১ মুক্তিবাহিনীসহ অসংখ্য জনতা প্রাণ হারায়। এ দিবসটি পালনে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।
×