ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতিমন্ত্রী যাচ্ছেন আগামীকাল

সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী মহাস্থানগড়ে উদ্বোধন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২ ডিসেম্বর ২০১৬

সার্ক সাংস্কৃতিক রাজধানী মহাস্থানগড়ে উদ্বোধন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি

সমুদ্র হক ॥ মহাস্থানগড়ে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও কার্যক্রম ঘিরে ঢেলে সাজানোর সকল প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাল শনিবার বিকেলে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর মহাস্থানগড়ে উদ্বোধনী আয়োজনের ব্যবস্থাপনা দেখে বগুড়ায় সুধীজনের সঙ্গে সার্কিট হাউসে মতবিনিময় করবেন। প্রধানমন্ত্রী মহাস্থানগড়ে আগামী ২১ জানুয়ারি সার্ক কালচারাল রাজধানীর উদ্বোধন করবেন। ইতোমধ্যে মহাস্থান জাদুঘরকে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে দৃষ্টিনন্দন করতে আধুনিকায়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে জাদুঘর আধুনিকায়ন হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তা উন্মুক্ত করা হবে। গত তিন মাস ধরে মহাস্থান জাদুঘরের আধুনিকায়ন, মেরামত ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এ জাদুঘর স্থাপিত হয়েছে ১৯৬৭ সালে। সেখানে ২ হাজার ৬শ’ ৮৭ প্রতœসম্পদ দর্শনার্থীদের জন্য রাখা আছে। এই প্রতœ নিদর্শনগুলো দৃষ্টিনন্দন শোকেসে ডিসপ্লের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতিহাসের লিখনী যাতে ভালভাবে পাঠ করা যায় সেজন্য পর্যাপ্ত বাতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহাস্থানগড়ে পথঘাটের উন্নয়ন, অবকাশ কেন্দ্র, উন্নতমানের রেস্তরাঁ, বাংলো, নকশী সড়ক, বসবার স্থানে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। সাউথ এশিয়া টুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প এসব কাজ বাস্তবায়ন করছে। পর্যটন কর্পোরেশন ও প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানায়, মহাস্থানগড়ে দেশী-বিদেশী পর্যটক আগমনের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে। ’১৫ সালের জুলাই থেকে ১৬ সালের জুন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার পর্যটক মহাস্থানগড় ঘুরে দেখেছেন। যাদের বড় একটি অংশ বিদেশী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত ফ্রান্স চীন জাপান দক্ষিণ কোরিয়া শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের নানা দেশের পর্যটক দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী পু-্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী পু-্রনগর খ্যাত মহাস্থানগড়ে এসেছেন। তারা মহাস্থানগড়ের গোবিন্দ ভিটা, গোকুলের মেধ, ভাসু বিহারসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখেন। সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী থাকাকালীন অন্তত একটি বছর পর্যটক আগমনের এ সংখ্যা বেড়ে কয়েকগুণ হবে। সার্কভুক্ত ৮ দেশের পর্যটক ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশের পর্যটকেরও আগমন ঘটবে। সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণার পর হতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় সকল অধিদফতর ও বিভাগ বছরজুড়ে মহাস্থানগড়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও কর্মসূচী প্রণয়নে ব্যস্ত সময় পার করছে। সূত্র জানায়, এ ব্যস্ততা আগামী বছরের (২০১৭) পুরো সময় ধরেই থাকবে। ইতোমধ্যে শিল্পকলা একাডেমি উদ্বোধনী দিনেই মহাস্থানগড়ের গোবিন্দভিটার চারধারে বিশেষ ধরনের আলোকসজ্জায় প্রতœ নাটক প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। ইতিহাসভিত্তিক এই প্রতœ নাটকে প্রাচীন নগরীর সকল বিষয় তুলে ধরা হবে। প্রাচীন ইতিহাসের মানুষের জীবনাচার, কয়েকটি যুগের অধ্যায় নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে। পুরো গোবিন্দভিটা হবে মঞ্চ। হাতি ঘোড়া প্রবেশ করবে ভিটার মঞ্চে প্রতœ নাটকে। এই প্রতœ নাটকের প্রস্ততি ও রিহার্সাল শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় এ নাটক প্রদর্শিত হবে। সূত্র জানায়, সার্কের কালচারাল রাজধানী ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক দলগুলো নাটক সঙ্গীত লোকজ অনুষ্ঠানসহ নানান কিছু প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশের সংস্কৃতি ও লোকজ সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে ডিজিটাল প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি ও লোকজ সংস্কৃতি তুলে ধরা হবে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালীর শিকড়ের অনুষ্ঠান যেমন- পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুনের অনুষ্ঠান, মেলা, একুশে ফেব্রুয়ারি, একুশের বইমেলা, স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বিজয় দিবস ইত্যাদি সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানীর কর্মসূচীর সঙ্গে যোগ হবে। বগুড়া শহরের মিলনায়তনেও সার্কের অনুষ্ঠান হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাদের মধ্যে টুরিস্ট পুলিশও থাকবে।
×