ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেবাচিমের পরিত্যক্ত ভবনে অপরাধীদের হাট

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

শেবাচিমের পরিত্যক্ত ভবনে অপরাধীদের হাট

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ শেবাচিম হাসপাতালের বর্ধিত পাঁচ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ আট বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে অর্ধনির্মিত ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যার কারণে ভবনটি অপরাধীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। রোগীরা উপকৃত না হলেও মাদক সেবন, বিক্রয়, অনৈতিক কাজসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকা- হচ্ছে ভবনটিতে। জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে পাঁচ শ’ শয্যা নিয়ে শেবাচিম হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে এ হাসপাতালটি ১৫ শ’ শষ্যায় রূপান্তরিত হলেও প্রতিদিন কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব বাড়তি রোগী হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় শয্যা পেতে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। একেকটি ওয়ার্ডে পা ফেলারও স্থান নেই। এ অবস্থা উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত অর্থে ‘মর্ডানাইজেশন এ্যান্ড এক্সটেনশন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০৮ সালে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে বর্ধিত পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের জন্য গণপূর্ত বিভাগ থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ভবনের নিচতলায় রোগীদের জন্য আউটডোর, দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক বক ও রোগীদের সাধারণ শয্যা, তৃতীয় তলায় পোস্ট অপারেটিভ ও কেবিন, চতুর্থ তলায় অপারেশন থিয়েটার, পঞ্চম তলায় ওঠানামার জন্য চারটি লিফট ও পাঁচটি সিঁড়ির ব্যবস্থা রাখা হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, ওই বছরের ৭ মার্চ কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আজাদ কন্সট্রাকশন ৩০ শতক জমির ওপর ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২০১০ সালের জুন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নের সময় বেঁধে দেয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভবন নির্মাণের অর্ধেক কাজও সম্পন্ন করতে পারেনি। তখন গণপূর্ত বিভাগ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করে আরও ছয় মাস সময় বাড়িয়ে চিঠি দেয়। এরপরও কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে কার্যাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। তখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে রিট করায় ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে রিট ও স্বাস্থ্য, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালির মধ্যদিয়ে আট বছর ধরে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ভবনের কাজ চালু করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওই ভবন সংলগ্ন বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে পরিত্যক্ত ভবনটিতে মাদক বিকিকিনির হাট বসে। কখনও দিনে আবার কখনও রাতে ওই ভবনটিতে অনৈতিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। এছাড়াও ভবনটিতে জুয়ার জমজমাট আসর বসে। পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় কখনও পুলিশসহ আইন-শৃংখলারক্ষাকারী বাহিনী ভবনে উঁকি দিয়েও দেখে না। যার কারণে অপরাধীরা ওই ভবনটিতে নিরাপদে অপকর্ম করে যাচ্ছে। সূত্রমতে, এসব অপকর্ম বন্ধে হাসপাতালের পরিচালকসহ সংশিষ্টদের কাছে এলাকাবাসী একাধিকবার অভিযোগ দেয়ার পরেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান বলেন, ভবন নির্মাণ কাজ এখন অনিশ্চিত। মন্ত্রণালয় থেকে কার্যাদেশের মূল্যায়ন অনুমোদন করলে কাজটি বাস্তবায়নে আর কোন বাধা থাকত না।
×