ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেলায় স্বাচ্ছন্দ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পেরে করদাতারা খুশি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩ নভেম্বর ২০১৬

মেলায় স্বাচ্ছন্দ্যে রিটার্ন দাখিল করতে পেরে করদাতারা খুশি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘ঘরে বসে অনলাইনে কর শনাক্তকরণ নম্বর (ই-টিআইএন) খুলেছি। মেলায় এসেছি রিটার্ন দাখিল করতে। এখানে এসে দেখি এক ছাদের নিচে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সবাই খুব আন্তরিক।’- কথাগুলো বলছিলেন প্রথমবারের মতো রিটার্ন দাখিল করতে আসা নিপুন কুমার সাহা। আর সবে রিটান দাখিল শেষ করেছেন এমন একজন কার্তিক চন্দ্র দাস। পাঁচ সহকর্মীকে একসঙ্গে নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি। সেবা পেয়ে আত্মতৃপ্তির সঙ্গে কার্তিক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর মেলায় এবারই প্রথম এসেছি। রিটার্ন দাখিল করেছি প্রথমবারের মতো। আগে অনেক হয়রানির কথা শুনলেও এখানে এসে দেখি কোন ঝামেলা নেই। বেশ ভাল সেবা দিচ্ছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।’- সপ্তাহব্যাপী চলমান আয়কর মেলার দ্বিতীয় দিনে সেবাগ্রহণকারীদের মুখে মুখে এমনই সন্তুষ্টির কথা শোনা গেছে। প্রথমবারের মতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে আয়োজিত আয়কর মেলা ২০১৬’র দ্বিতীয় দিনে ছিল উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গণ ছিল করদাতাদের পদচারণায় মুখর। শুধু করদাতারই নন, স্কুলের শিক্ষার্থীরও অংশ নেয় কর শিক্ষণ ফোরামে। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে কর সম্পর্কিত নানা তথ্য জেনেছেন ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। পরে তারা অংশ নেয় কুইজ প্রতিযোগিতায়। সেখান থেকে বিজয়ী ১০ জনকে দেয়া হয় সনদ ও পুরস্কার। এমনই উৎসব মুখর ছিল সারাদেশে চলমান আয়কর মেলার দ্বিতীয় দিন। ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ সেøাগানে শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে ৭ নবেম্বর। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেলা উন্মুক্ত থাকবে। সপ্তাহব্যাপী সরাদেশে চলমান এবারে মেলার প্রতিপাদ্য ‘সুখী স্বদেশ গড়তে ভাই, আয়করের বিকল্প নাই’। মেলার দ্বিতীয় দিনে নগরীর রাস্তায় দেখা গেছে আয়কর মেলার বিশেষ বাস। এসব বাসে করে করদাতারা মেলায় আসতে পারছেন বিনা ভাড়ায়। ৪টি রুটে ৮টি বাস চলছে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে ঢাবি, বেইলি রোড, মিরপুর ও উত্তরা রুটে এ বাস চলাচল করছে। বুধবার দুপুর থেকে এ বাস সার্ভিস চালু করে এনবিআর। বাসের গায়ে লাগানো আছে আয়কর মেলার বিশেষ স্টিকার। করদাতারা একটি পাটের ব্যাগসহ কিছু উপহার সামগ্রী পাচ্ছেন। মেলা থেকে বের হয়ে আসা অধিকাংশের হাতেই শোভা পাচ্ছে শোভাবর্ধক এসব ব্যাগ। বুুধবার মেলায় কথা হয় কয়েকজন করদাতার সঙ্গে। তাদের একজন উত্তরার ষাটোর্ধ বাসিন্দা মোঃ নুরুল ইসলাম। কর জোন-৯’র কর প্রদানকারী তিনি। বিকেল ৪টায় জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘খুব সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি।’ এখন বাকি সেবা গ্রহণের অপেক্ষা। প্রথমবারের মতো রিটার্ন জমা দিতে এসেছিলেন মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ‘হাতে সময় কম থাকায় নির্দেশিকা নিয়ে যাচ্ছি। পরে এসে রিটার্ন জমা দেব।’ মেলায় রয়েছে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা বুথ। অনেকটাই ফাঁকা। প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না তেমন। প্রতিবন্ধী বুথের পাশেই ৬৫ নম্বর বুথ। এটি সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য। এখানে কথা হয় নগরীর ফার্মগেট থেকে আসা হেলাল হাফিজের সঙ্গে। তার বয়স ৭০। আলাদা বুথ পেয়ে তিনি খুব খুশি। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, ৬৫ বছরের অধিক যাদের বয়স তাদের জন্যই এই বুথ। এখানে আয়কর সংক্রান্ত সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এই বুথে সেবা গ্রহণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। এবারের মেলায় করদাতার আয়কর বিররণীর ফরম থেকে শুরু করে কর পরিশোধের জন্য ব্যাংক বুথও রয়েছে। করদাতাদের সহায়তা করার জন্য আছে সহায়তা কেন্দ্র। একই ছাদের নিচে ইটিআইএন, পুনর্নিবন্ধন, রিটার্ন জমাসহ সব সেবা মিলছে। শুধু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে আনলেই চলছে। এছাড়া নারী, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। এবারই প্রথমবারের মতো অনলাইনে জমা দেয়া যাচ্ছে রিটার্ন। মোট ১০৯টি বুথ থেকে এসব সেবা দিচ্ছে এনবিআর। এবারের মেলার নতুনত্ব কর শিক্ষণ ফোরাম। যেখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এসে কর সম্পর্কে জানতে পারছেন নানা তথ্য। প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও ছিল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। এদিন সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কর শিক্ষণ ফোরামে অংশ নেয়। শিক্ষকদের সঙ্গে তারা ঘুরে দেখেন বিভিন্ন স্টল। পরে তাদের নিয়ে আয়োজিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে কর সম্পর্কিত কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ শিক্ষার্থীকে দেয়া হয় সনদ ও পুরস্কার। এছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেন্ট জোসেফ স্কুলকেও পুরস্কৃত করা হয়।
×