ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৬

হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর বাড্ডায় এক গারো তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) চিকিৎসাধীন আছেন ওই তরুণী। মূলত হবু স্বামীর সঙ্গে দেখা করে ফেরার সময় ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলার প্রধান আসামি রুবেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সালাহউদ্দিন নামে একজনকে আটক করে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এদিকে আসামি রুবেলকে আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করে আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র ফেডারেশন। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কথাও জানানো হয়েছে বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে। গত ২৫ অক্টোবর উত্তর বাড্ডার পুরান থানা রোডে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে হবু স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করার পর গত ২৮ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ওই তরুণী। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শুক্রবারই সন্ধ্যায় পুলিশ ওই তরুণীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করে। ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কিনা সে বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ওসিসি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মন্তব্য করেননি। তরুণীর দায়েরকৃত মামলায় রুবেলসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ রুবেলকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। রুবেল বাড্ডা থানায় দায়েরকৃত এ ধরনের বেশ কয়েকটি মামলার পলাতক আসামি। স্থানীয় বখাটে যুবক হিসেবে চিহ্নিত। পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামিও সে। তার বিরুদ্ধে আদালত কয়েকটি ওয়ারেন্টও জারি করেছে। রুবেলকে গ্রেফতারে চালানো অভিযানে সালাহউদ্দিন নামে রুবেলের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী আটক হয়। তাকে থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বাড্ডা থানা পুলিশ। বাড্ডা থানার ওসি এমএ জলিল জানান, ওই তরুণী গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানাধীন গাজীপুরা এলাকার একটি বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। বসবাস করেন রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকায়। বাড়ি জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে। মামলার বরাত দিয়ে বাড্ডা থানার এসআই ফারুক আহমেদ জানান, গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে বাড্ডার পুরান থানা রোডের ৬ নম্বর লেনের একটি বাড়িতে ওই তরুণী গারো তরুণ হবু স্বামী রিপন ম্রংয়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। রিপনের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়িতে। বাড্ডার ওই বাড়িতে রিপন ম্রংসহ ৫-৬ গারো তরুণ বসবাস করেন। ওই তরুণী বাড়িতে যাওয়ার পর তিনি রিপন ম্রংয়ের হবু স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। কিন্তু বাড়ির কেয়ারটেকার ওই তরুণীর দেয়া পরিচয় বিশ্বাস করেননি। কেয়ারটেকার তাকে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। একপর্যায়ে তরুণী বাধ্য হয়ে বাড়ির বাইরে বের হন। হবু স্বামীকে দ্রুত প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে আসতে বলেন। হবু স্বামীর জন্য বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিলেন। তাদের একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। এ সময় বাড়ির সামনে দাঁড়ানো ছিল এক যুবক। পরে তার নাম রুবেল বলে ওই তরুণী জানতে পারেন। তরুণীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ডাক দেয় রুবেল। ভদ্রতার খাতিরে কাছে গিয়ে তার কথা শুনতে যায় ওই তরুণী। এ সময় রুবেলের সঙ্গে আরও তিনজন ছিল। তারা ভয় দেখিয়ে জোর করে ওই তরুণীর মুখ চেপে ধরে পাশের একটি বস্তিঘরে নিয়ে যায়। বস্তির ওই ঘরের বাসিন্দাদের বের করে দেয় রুবেল ও তার সহযোগীরা। অনেক সময় ধরে ধস্তাধস্তি ও চিৎকার চেঁচামেচি চলে সেই ঘরে। এ সময় রিপনসহ তার রুমমেট ও স্থানীয়রা সেখানে গেলে রুবেল ও তার সহযোগীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে ওই তরুণীকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি সম্পর্কে হবু স্বামী ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেন ওই তরুণী। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ওই তরুণী নিজেই বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। এমন ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) ও ছাত্র ফেডারেশন। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আসামি রুবেলকে আগামী সাত দিনের মধ্যে গ্রেফতারের পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। অন্যথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে।
×