ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাইপোস্পাডিয়াস

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

হাইপোস্পাডিয়াস

হাইপোস্পাডিয়াস একটি জন্মগত রোগ যাতে মূত্রনালীর বহির্মুখ স্বাভাবিক স্থানে না হয়ে পুরুষাঙ্গের তলদেশে অবস্থান করে। এই সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুরুষাঙ্গ নিচের দিকে বাঁকা হয়ে থাকে ঈড়ৎফবব. মাতৃগর্ভে মূত্রনালীর অসম্পূর্ণ গঠনের জন্য এ রোগ হয়। মূত্রনালীর মুখ কত নিচে অবস্থিত তার উপর ভিত্তি করে হাইপোস্পাডিয়াসের মাত্রা নির্ণয় করা হয়। মাত্রার শ্রেণী বিভাগ হচ্ছে অগ্রভাগ (৫০%), মধ্যভাগ (৪০%) এবং পশ্চাৎ ভাগ (৩০%)। হাইপোস্পাডিয়াসের জন্য পুরুষাঙ্গ বাঁকা হতে পারে। অধিক বাঁকা পুরুষাঙ্গ যৌন মিলনে অক্ষমতার কারণ হতে পারে। যথাযথ শল্যচিকিৎসা ছাড়া অতিমাত্রার হাইপোস্পাইডিয়াস প্রস্রাবে গতির দিক নিয়ন্ত্রণ করা যায় না এবং এজন্য পুরুষের যৌন এবং প্রজনন ক্ষমতা খর্ব হতে পারে। রোগাক্রান্তের সংখ্যা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩০০ পুরুষের মধ্যে ১ জন এবং প্রতি ৫,০০,০০০ মহিলাদের মধ্যে ১ জন এ ধরনের জন্মগত সমস্যায় ভুগতে পারে। ইহুদি এবং ইটালি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে এ রোগের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। রোগের কারণ সমূহ : এ রোগের প্রকৃত কারণ অজানা, তবে জেনেটিক, এন্ডোক্রাইন এবং পরিবেশগত কিছু উপাদান এ রোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরিবারে একজনের এ রোগ থাকলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ২০ ভাগ। এন্ড্রোলজিক্যাল উপাদান হচ্ছে শরীরে কম পরিমাণ এন্ড্রোজেন অথবা দেহকোষের এন্ড্রোজেন ব্যবহার করতে না পারা মায়ের শরীরে প্রজেস্টেরন বেশি পরিমাণে থাকলেও হাইপোস্পাডিয়াসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মূত্রনালী গঠনের সময় মায়ের শরীরে বেশি ইস্ট্রোজেন থাকলেও এ রোগ হতে পারে। ইস্ট্রোজেন, কীটনাশকমিশ্রিত ফল ও শাকসবজি অথবা গর্ভবতী গাভীর দুধ থেকে মায়ের শরীরে এ রোগ প্রবেশ করতে পারে। রোগের লক্ষণ সমূহ হাইপোস্পাডিয়াসে মূত্রনালীর মুখ পুরুষাঙ্গের শীর্ষে না থেকে তলদেশে অবস্থিত থাকে। মূত্রনালীর মুখ পুরুষাঙ্গের মু-ের নিচের দিকে, পুরুষাঙ্গের দেহে অ-কোষের থলি অথবা অ-কোষের থলি ও পায়ুপথের মধ্যবর্তী স্থানে হতে পারে। মূত্রনালীর মুখ পুরুষাঙ্গের শীর্ষ হতে যত দূরে অবস্থান করবে পুরুষাঙ্গ তত বেশি বাঁকা হবে। অল্পমাত্রার হাইপোস্পাডিয়াস রোগে নিচের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। হাইপোস্পাডিয়াসের সঙ্গে আরও কতগুলো জন্মগত সমস্যা থাকতে পারে যেমন, অ-কোষ থলিতে না নামা (টহফবংপবফবহঃ ঃবংঃরং). কুচকিতে হারনিয়া (ওহমঁরহহধষ যবৎহরধ),কিডনির অস্বাভাবিক গঠন, ভেসিকো ইউরোটেরাল রিফ্লাক্স (ঠবংরপড়ঁৎবঃবৎধষ জবভষঁং) ইত্যাদি। রোগ নির্ণয় কখনও কখনও মাতৃগর্ভে আলট্রাসাউন্ড দ্বারা হাইপোস্পাডিয়াস নির্ণয় করা যায় কিন্তু ছেলেদের বেলায় জন্মের পর পরই সাধারণত এ রোগ ধরা পড়ে। এতে মূত্রনালীর মুখ নিচের দিকে থাকে আর পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের চামড়া অসম্পূর্ণ থাকে। অল্পমাত্রার হাইপোস্পাডিয়াস কেবল অগ্রভাগের চামড়া ব্যবচ্ছেদের পরই দৃশ্যমান হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ রোগ নির্ণয়ের জন্য খুব তীক্ষè ও সূক্ষ্ম শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন। চিকিৎসা অল্পমাত্রার হাইপোস্পাডিয়াস যেখানে মূত্রনালীর মুখ পুরুষাঙ্গের শীর্ষের কাছাকাছি থাকে, প্রস্রাব সম্মুখে প্রবাহিত হয় এবং পুরুষাঙ্গ বাঁকা নয় এক্ষেত্রে সাধারণ ছোট শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। মধ্যম এবং অতিমাত্রার হাইপোস্পাডিয়াসের জন্য জটিল শল্য চিকিৎসা প্রযোজন হয়। অনেক সময় ২ বা ৩ ধাপে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে হতে পারে। তবে অসংখ্য গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে আজকাল সহজেই বেশির ভাগ হাইপোস্পাডিয়াস প্রথম ধাপেই সফল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে। শল্য চিকিৎসার উদ্দেশ্য * প্রস্রাবের গতি সম্মুখ দিকে করা : * বাঁকা পুরুষাঙ্গ সোজা করা * গ্রহণযোগ্য সুন্দর পুরুষাঙ্গ গঠন * বন্ধ্যাত্ব নিঃসরণ শিশুর বয়স ৬-১৮ মাস হলো চিকিৎসার উপযুক্ত সময়। শল্য চিকিৎসার পূর্বে পুরুষাঙ্গ বড় করার জন্য টেস্টস্টেরন ইনজেকশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। হাইপোস্পাডিয়াস প্রতিরোধযোগ্য নয়। শল্য চিকিৎসায় জটিলতা হাইপোস্পাডিয়াস চিকিৎসার জটিলতা প্রায়ই দেখা যায়। হাইপোস্পাডিয়াস চিকিৎসার জটিলতার মধ্যে ফিস্টুলা বা নতুন তৈরি করা মূত্রনালীর মধ্যে ছিদ্রের সৃষ্টি হওয়া সমস্যাটাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য পুনরায় অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। মূত্রনালীর সংকোচন আরও একটি সমস্যা প্রায়ই ফিস্টুলার সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়। অনেক সময় মূত্রনালীর সংকোচন (ঝঃৎরপঃঁৎব) মূত্রনালীর ছিদ্র তৈরিতে সাহায্যে করতে পারে। মূত্রনালীর সংকোচনের জন্য পুনঃ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। মানসিক সমস্যা ছাড়াও আবার হাইপোস্পাডিয়াস ফিস্টুলা, ইনফেকশন, কর্ডি, স্ট্রিকচার হতে পারে অ-থলির (ঝপৎড়ঃঁস) চামড়া দিয়ে মূত্রনালী তৈরি করলে মূত্রনালীতে চুল তৈরি হয়। বারবার বিফল অস্ত্রোপচারের ফলে লিঙ্গের কলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আশার কথা এই যে প্রায় সব ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতার ভাল চিকিৎসা আছে। আধুনিক শল্যচিকিৎসার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেরও হাইপোস্পাডিয়াস চিকিৎসা সফলতা ক্ষেত্রে দারুণ অগ্রগতি হয়েছে। তাই এই সমস্ত জটিলতা এখন কমই দেখা যায়। আপনার ডাক্তার প্রতিবেদক
×