ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজ ১৭ তরুণের নামে রেড নোটিস পাঠানো হচ্ছে ইন্টারপোলে

জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, পালিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৯ অক্টোবর ২০১৬

জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, পালিয়ে যাচ্ছে

শংকর কুমার দে ॥ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর জঙ্গী দমনে ধারাবাহিক সাফল্যে নব্য জেএমবির জঙ্গী এখন কোণঠাসা। এসব জঙ্গী বিদেশে পালাচ্ছে নয়ত আত্মগোপনে থাকা জঙ্গীরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। পুরস্কার ঘোষণা করে জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বানে পলাতক জঙ্গীদের অনেকেই সাড়া দেয়ার খবর পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাব এ পর্যন্ত এক হাজার ২১৬ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ৬৪৩ জনের সরাসরি জেএমবি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এছাড়াও নব্য জেএমবির দুর্ধর্ষ ও আত্মঘাতী এমন মোস্ট ওয়ান্টেড ৮০ জঙ্গীর জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন গোয়েন্দারা। এর মধ্যে নিখোঁজ অন্তত ১৭ তরুণের নামে রেড নোটিস পাঠানো হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার সময় আহতাবস্থায় গ্রেফতারকৃত (পরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত) শফিউল ইসলাম ডন, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানায় পুলিশ অভিযানের সময় আহতাবস্থায় গ্রেফতার হওয়া রাকিবুল হাসান রিগ্যান, টঙ্গী থেকে গ্রেফতার হওয়া সালাউদ্দিন কামরান, আজিমপুর জঙ্গী আস্তানা থেকে গ্রেফতার হওয়া কিশোর জঙ্গী তাহরিম কাদেরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও অনুসন্ধানে অন্তত ৮০ নব্য জেএমবি জঙ্গীর নাম পাওয়া গেছে। এ তালিকায় নাম আসা ৮০ জনের মধ্যে কেউ হামলাকারী, কেউ ব্যাকআপ পার্টি এবং কেউ নিয়োজিত থাকে রেকি করার কাজে। তবে তারা সবাই প্রশিক্ষিত। এছাড়াও প্রগতিশীল লেখক, ব্লগার, ধর্মযাজক, পুরোহিত, বিদেশী নাগরিক, পুলিশ হত্যাসহ ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করে আরও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নব্য জেএমবির নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আত্মগোপনে থাকা ছাড়াও অনেকেই বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার সময় ধরা পড়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার আগে শফিউল ইসলাম ডন নতুন ধারার নব্য জেএমবির অনেক কিলারের নাম বলে গেছে- এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। শোলাকিয়া হামলায় জড়িত ওই জঙ্গী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তখন সে নব্য জেএমবির কিলারদের সবার নাম বলে দেয়। এদের মধ্যে দু’জন ভারতে পালিয়ে আছে আর তিনজন রয়েছে কারাগারে। একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বাকিরা নিখোঁজ। গত ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে জঙ্গী শফিউল ইসলাম ডন। নব্য জেএমবিতে তার সাংগঠনিক নাম ছিল আবু মোকাতিল। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দক্ষিণ দেবীপুরের সিংড়া এলাকায়। তার বাবার নাম আবদুল হাই। পেশায় টিভি মেকার আবদুল হাই স্থানীয় জামায়াতের সমর্থক। শফিউল নিজেও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। জঙ্গী শফিউল নিহত হওয়ার আগে যে জবানবন্দী দিয়ে গেছে তাতে তাদের ‘স্যার’ তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছে (নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত) কিলারদের সবার তালিকা ছিল। এদের প্রায় সবার সঙ্গেই তামিম বৈঠকও করেছিল। এমনকি শোলাকিয়া হামলার আগে তামিমই জঙ্গী শফিউল ও আবিরকে (নিহত) ঘটনাস্থলের অদূরে রেখে যায় বলে স্বীকার করেছে সে (শফিউল)। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ৪৭ কিলারের নাম আসে, যারা নব্য জেএমবির সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই বাড়ি ত্যাগ করে কথিত হিজরতে বের হয়েছে। নব্য জেএমবির শফিউল ইসলাম ডন, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, কিশোর জঙ্গী তাহরিম কাদেরী, সালাউদ্দিন কামরানসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব জঙ্গীর নাম পাওয়া গেছে তাদের তালিকায় আছেÑ বগুড়ার শাজাহানপুরের বাদল মিয়া ওরফে ওস্তাদ বাদল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আজাদুল কবিরাজ, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের আবদুল খালেক ওরফে মামা খালেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম খালিদ (ভারতে), রাজশাহীর মামুনুর রশিদ রিপন (ভারতে), বগুড়ার শাজাহানপুরের বিজয় ওরফে বাচাল বিজয়, দিনাজপুরের আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, গাইবান্ধার সাঘাটার জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে বড়ভাই, কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানা থেকে আটক বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান (কারাগারে), দিনাজপুর দক্ষিণের স্থানীয় জামায়াত নেতা সাজ্জাদ হোসেন, দিনাজপুরের রানীগঞ্জের আক্তারুল ওরফে আনারুল (কারাগারে), একই জেলার ঘোড়াঘাটের হাফেজ মাসুদ, একই এলাকার মোঃ মাসুদ মিয়া, ঘোড়াঘাটের নূরপুরের রঞ্জু, একই জেলার নবাবগঞ্জের টুপিরহাটের শফিক, একই এলাকার ছাদেকুল, হাকিমপুরের বিজুল এলাকার মোত্তামিন, ঘোড়াঘাটের ভেরভেরী এলাকার মোজাহিদুন, ঘোড়াঘাটের জয়রামপুরের আকতারুল ইসলাম, একই থানার নবাবগঞ্জের টুপিরহাটের আদিল ও মিজান, রংপুর জেলার পীরগঞ্জের কুমারপুরের আরিফুল (কারাগারে), রাজধানীর উত্তরার সবুজ, গাজীপুরের ইব্রাহিম ও আবদুল ওয়াহিদ, কুড়িগ্রামের আবু হামজা আল মুহাজির, লালমনিরহাটের আবদুল ওয়াহেদ, গাইবান্ধার সাইদুল ইসলাম, বগুড়ার আকিফ কাইফি ওরফে জিহাদী, বগুড়ার গাবতলী এলাকার ছোট বাবু, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দেরচর এলাকার সাদ্দাম ওরফে চঞ্চল, কুড়িগ্রামের ফরকেরহাটের গোলাম রব্বানী, নাককাটি দারুল উলুম মাদ্রাসা এলাকার রিয়াজুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জের হিমেল, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের সোনাহার এলাকার পুরস্কার ঘোষিত বাইক হাসান ওরফে নজরুল (রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত), রাজধানীর কলাবাগান এলাকার ফরহাদ, টঙ্গীর আশরাফুল ইসলাম, নাটোরের আবু রোহানা ও পরাগ, দিনাজপুর সদরের মিজান ও হৃদয়, গাজীপুর সাইনবোর্ড এলাকার বকুল খান, লালমনিরহাটের জহিরুল, ময়মনসিংহের শিপন ও শফিক এবং সিরাজগঞ্জের কাদের ও রহমান। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, জঙ্গী রিগ্যান, শফিউল, সালাউদ্দিন কামরান ও কিশোর জঙ্গী তাহরিম কাদেরীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন ধারার জেএমবির কয়েকটি সেলের বেশকিছু সদস্যের নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কয়েকজন কল্যাণপুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি। এছাড়া অন্য যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সবার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা মিলেছে। কেবলমাত্র জঙ্গী শফিউলের কাছ থেকে পাওয়া জঙ্গীদের তালিকার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ জন নব্য জেএমবির কমান্ডার। এছাড়া নতুন করে খোঁজা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নেতা জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীকে। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে হামলায় জড়িত এই রাজীবের নাম গুলশান হামলার পর জানা যায়। সে জঙ্গীদের গ্রেনেড ও অস্ত্র সরবরাহ করত। এ তালিকায় নাম আসা ৪৭ জনের মধ্যে কেউ হামলাকারী, কেউ ব্যাকআপ পার্টি এবং কেউ নিয়োজিত থাকে রেকি করার কাজে। তবে তারা সবাই প্রশিক্ষিত। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, নব্য জেএমবির অনেকে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন অভিযানে নব্য জেএমবির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ক্ষমতা ক্ষয় হয়েছে। তবে এখনও এ জঙ্গী সংগঠনের কমান্ডিং পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বাইরে রয়েছে। অর্থ যোগানদাতা ও অস্ত্র দেশে নিয়ে আসার রুটও চিহ্নিত করা হয়েছে। কারা অস্ত্র এনেছে এবং কারা অস্ত্র গ্রহণ করেছে, তার সবই এখন স্পষ্ট। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। অর্থ যোগানদাতা হিসেবে বাংলাদেশের তিন ব্যবসায়ীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের ব্যাপারে আরও তদন্ত চলছে। এছাড়া পাকিস্তান ও ভারতের আরও দুই ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে হুন্ডিতে টাকা পাঠিয়েছে বাংলাদেশে। দুবাই থেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় দুই নাগরিক প্রথম দফায় ২০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় ১৮ লাখ এবং তৃতীয় দফায় ১০ লাখ টাকা হুন্ডিতে দেশে পাঠায়। বাংলাদেশী দুই হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে এ টাকা গ্রহণ করে বাশারুজ্জামান এবং রাজীব গান্ধী। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেছেন, নব্য জেএমবির জঙ্গী সদস্যদের বিদেশে প্রশিক্ষণ হয় মাসের পর মাস। দেশের চরাঞ্চলে, ভাড়া করা বাড়িতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও মালয়েশিয়া, তুরস্ক, সিরিয়াসহ নানা দেশে যাচ্ছে-আসছে তারা। হামলায় ব্যবহার হচ্ছে অত্যাধুনিক সব অস্ত্র। শূন্যহাতে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়া তরুণ জঙ্গীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে অস্ত্র ও অর্থ। জঙ্গী অর্থায়ন করছে এমন বাংলাদেশী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে শোলাকিয়া ও গুলশান হামলায় জড়িত তিনজনের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জঙ্গীদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে। মূলত তামিম চৌধুরী এ অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করে ভারত থেকে। দুর্ধর্ষ জঙ্গী বোমা মিজান অস্ত্রগুলো নিয়ে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ অস্ত্রগুলো গ্রহণ করে জঙ্গী সদস্য ছোট মিজান। প্রথম সারির আত্মঘাতী জঙ্গীদের মধ্যে নুরুল ইসলাম মারজান ছাড়াও এমন ১৫ জনকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা যে কোন ধরনের অস্ত্র পরিচালনায় পারদর্শী। দেশ-বিদেশে এদের প্রশিক্ষণ রয়েছে। এরা হলেনÑ মোঃ বাশারুজ্জামান ওরফে বাশার চকলেট, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, রিপন, মানিক, বাদল, আজাদুল কবিরাজ, খালেদ, ইয়াসিন তালুকদার, গালিব, ইকবাল এবং সালাউদ্দিন। এদের মধ্যে মোঃ নুরুল ইসলাম মারজান, মোঃ বাশারুজ্জামান ওরফে বাশার চকলেট, রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ গান্ধী ওরফে গান্ধী, রিপন ও খালিদ অন্যতম। রিপন এবং খালিদ শোলাকিয়া হামলার পর ভারতে পালিয়ে গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নব্য জেএমবি বা নিউ জেএমবির সদস্যরা কয়েক স্তরে বিভক্ত। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরটি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। এরা প্রত্যেকেই আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য। দ্বিতীয় স্তরের আত্মঘাতী সদস্যদের মধ্যে ইতোমধ্যে ২০ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুলশান হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে মীর সামিহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গীঘাঁটির অভিযানে নিহত হয়েছে রংপুরের রায়হান কবির তারেক, দিনাজপুরের আবদুল্লাহ, পটুয়াখালীর আবু হাকিম নাঈম, সাতক্ষীরার মতিউর রহমান, নোয়াখালীর জোবায়ের হোসেন, ঢাকার ধানম-ির তাজ উল হক রসিক, গুলশানের আকিফুজ্জামান এবং ভাটারা এলাকার মার্কিন নাগরিক শেহজাদ রউফ অর্ক। ঈদের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ জামাতের কাছে হামলা চালানোর সময় নিহত হয়েছে আবির রহমান এবং শফিকুল ইসলাম সোহান ওরফে আবু মুক্তাদির। মিরপুরের রূপনগরে নিহত হয়েছে মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মেজর মুরাদ। আজিমপুরে নিহত হয়েছে আবদুল করিম ওরফে তানভীর কাদেরী। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার দেওয়ানবাড়িতে অভিযান চলাকালে তামিম চৌধুরীসহ নিহত হয়েছে তাওসিফ হাসান এবং কাজী ফজলে রাব্বি। তামিম চৌধুরীর সবচেয়ে অনুগত ছিল তাওসিফ ও ফজলে রাব্বি। এ দুজনের একজনকেই সংগঠনের দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবছিল তামিম চৌধুরী। কিন্তু এরা একসঙ্গেই নিহত হয়। ছদ্মনামে আত্মঘাতী স্কোয়াডের আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে, যাদের বিষয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছে। ইতোমধ্যে ৪০ নিখোঁজ যুবকের নাম জানা গেছে, যাদের অধিকাংশই জঙ্গী সংগঠনে যোগ দিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে। এরা আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্য হয়েছে কি-না তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল কাউন্সিল ব্যুরোর এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিকভাবে ১৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্কেত পেলেই ইন্টারপোলকে তাদের বিরুদ্ধে রেড ওয়ান্টেড নোটিস জারির জন্য অনুরোধ জানানো হবে। ইতোমধ্যেই তাদের প্রোফাইল তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিন মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ আছে এসব তরুণ। রাজধানীর গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গী হামলার পর নিখোঁজ তরুণদের কয়েকজন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করার তথ্য মেলে। তাদের মধ্যে আছেÑ রাজধানীর তেজগাঁওয়ের মোহাম্মদ বাশারুজ্জামান, বাড্ডার জুনায়েদ খান, ঢাকার আশরাফ মোহাম্মদ ইসলাম, ঢাকার ইব্রাহীম হাসান খান, ধানম-ির জুবায়েদুর রহিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নজিবুল্লাহ আনসারী, সিলেটের তামিম আহমেদ চৌধুরী (নারায়ণগঞ্জে নিহত), লক্ষ্মীপুরের এটিএম তাজউদ্দিন, সিলেটের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ ওজাকি ও জুনুন শিকদার। এছাড়াও গ্রামীণফোনের সাবেক কর্মকর্তা তাহমিদ রহমান শফি, আইবিএর সাবেক ছাত্র তৌসিফ হাসান ও প্রয়াত মেজর (অব) ওয়াসিকুর রহমানের ছেলে আরাফাত ওরফে তুষার অন্যতম। নব্য জেএমবির বাইরে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হক ও তার কয়েকজন অনুসারীও পলাতক রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হতে পারে। গত বুধবার বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যাশায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে বগুড়ার আব্দুল হাকিম (২২) ও গাইবান্ধার মাহমুদুল হাসান বিজয় (১৭)। এ সময় অন্ধকার রাস্তা ছেড়ে সৎ জীবনযাপনের জন্য সরকারের পূর্বঘোষিত পুরস্কারের পাঁচ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকার চেক তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। দুই জঙ্গীর আত্মসমর্পণ উপলক্ষে জঙ্গীবিরোধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জঙ্গীবিরোধী সমাবেশে বলেছেন, আমরা কাউকে হত্যা করতে চাই না। আমরা চাই সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, সব মানুষ ভাল থাকবে। জঙ্গীদের উদ্দেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তোমরা যারা বিপথগামী, তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সব ব্যবস্থা করা হবে। আত্মসমর্পণের দরজা সব সময় খোলা থাকবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, বিনা কারণে রক্তপাত ইসলাম সমর্থন করে না। যারা দেশে অশান্তি করছে ওই শকুনিদের ডানা ও কলিজা ছিঁড়ে ফেলা হবে। র‌্যাব তার জন্মলগ্ন থেকে জঙ্গী দমনে কাজ করছে। এ পর্যন্ত এক হাজার ২১৬ জনকে আটক করা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৪৩ জনের সরাসরি জেএমবি সম্পৃক্ততা রয়েছে। র‌্যাব মহাপরিচালক রাজধানীতে বলেছেন, জঙ্গীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, পালিয়ে যাচ্ছে।
×