ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজপথ জনসমুদ্র ॥ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১ অক্টোবর ২০১৬

রাজপথ জনসমুদ্র ॥ প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিমানবন্দর থেকে গণভবন। সর্বত্রই এক অন্যরকম পরিবেশ। দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ যেন জনারণ্য। উৎসবের আমেজে চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। জনতার ঢলে রাজপথ যেন জনসমুদ্র। আর এ দীর্ঘ পথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে পুষ্পবৃষ্টি ছিটিয়ে, বাদ্য-বাজনার তালে সেøাগানে সেøাগানে লাখো মানুষ বরণ করে নিয়েছেন তাদের প্রিয় নেত্রীকে। গণসংবর্ধনায় হাতি-ঘোড়া, টমটম, অত্যাধুনিক সাউন্ড সিস্টেমের বাস-ট্রাকসহ কোন কিছুরই কমতি ছিল না। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত ও ঢাকার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের নেতৃত্বে হাতি-ঘোড়া টমটমসহ আশিটি বাস-ট্রাকের মহড়া জনতার দৃষ্টি কাড়ে। এছাড়া র‌্যাংগস ভবন মোড় থেকে গণভবন পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের বিপুলসংখ্যক এমপির উপস্থিতি নতুন মাত্রা যোগ করে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শেষে দেশে ফেরার পর শুক্রবার এভাবেই লাখো মানুষের পুষ্পবৃষ্টি আর হƒদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত হন শেখ হাসিনা। ১৭ দিনব্যাপী কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সফর শেষে দেশে ফিরে নিজ সরকারী বাসভবন গণভবনেও উষ্ণ সংবর্ধনায় সিক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবনে পৌঁছার পর ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে, কখন আপনি তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী, ওগো মা তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে, তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে’Ñ দেশবরেণ্য রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার এই গানে এবং বরেণ্য নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ ও শামিম আরা নিপার নৃত্যের তালে তালে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করা হয়। নৃত্যগীত আর ফুলে ফুলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করেছেন লেখক-কবি, শিক্ষাবিদ, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা। বিমানবন্দর থেকে গণভবনের গেট পর্যন্ত ফুলে ফুলে সিক্ত প্রধানমন্ত্রী গাড়ি থেকে নামার পর জাতির পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী নাসির উদ্দিন ইউসুফ, সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, নৃত্যশিল্পী শামিম আরা নিপা ও শিবলী মহম্মদ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। এ সময় এসব বরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে গণভবনে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছাবিনিময় করেন। এমনই উষ্ণ অভ্যর্থনা আর মায়াবী ভালবাসায় মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নির্বাক থাকেন। প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় বেশ উচ্ছ্বসিত, আনন্দিত দেখা যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, অসীম কুমার উকিল, মির্জা আজম, খায়রুজ্জামান লিটন, এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন, লিয়াকত সিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, বদিউজ্জামান সোহাগ প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে নামার পর বোর্ডিং ব্রিজেই তাঁকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানান জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আবদুল মান্নান, দীপু মনি, আবদুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আসাদুজ্জামান নূর, মুজিবুল হক, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আসাদুজ্জামান খান কামাল, হাবিবুর রহমান সিরাজ, তারানা হালিম, মেহের আফরোজ চুমকি, ইসমত আরা সাদেক, নাহিম রাজ্জাকসহ অসংখ্য নেতাকর্মী। প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে মোহাম্মদ নাসিমের নেতৃত্বে দিলীপ বড়ুয়া, শাহাদাত হোসেন, ইসমাইল হোসেনসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ গণভবনের সামনে এবং জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি)সহ অন্যান্য কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও রাজপথে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এদিকে বিকেল পাঁচটা ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই খবর আসে ফ্লাইটটি দেড় ঘণ্টা বিলম্ব ঘটবে। কিন্তু বিকেল তিনটা থেকেই রাজপথে অবস্থান নেয়া স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের মধ্যে এতটুকু বিরক্তি ছিল না। বরং এ দীর্ঘ সময় এই ১৪ কিলোমিটার পথে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে সেøাগানে সেøাগানে মুখর করে রাখে লাখো মানুষ। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে বৃষ্টির মতো ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা দেয় জনতা। আর এ বিপুল সংবর্ধনা ও ভালবাসায় উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত গাড়িতে বসে দু’হাত নেড়ে তাঁকে গণসংবর্ধনা দিতে আসা মানুষকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশন থেকে ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ এ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ১৭ দিন সফর শেষে শুক্রবার দেশে ফিরেছেন। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত আটটা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ডালেস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন। দুবাইয়ে যাত্রাবিরতি শেষে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা ৪২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ফ্লাইটটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ঢাকায় পৌঁছার পর প্রধানমন্ত্রীকে বর্ণাঢ্য ও আন্তরিক গণসংবর্ধনা দেয়া হয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর ধীরে ধীরে বিমানবন্দর হয়ে গণভবনের দিকে রওনা দিলে হাজার হাজার নেতাকর্মী জয়বাংলা সেøাগানে ও করতালি দিয়ে চারদিক মুখর করে তোলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীও রাস্তার দুই পাশে অবস্থানকারী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গাড়ির ভেতর থেকেই হাত নাড়েন। দীর্ঘ প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশই ছিল লোকে-লোকারণ্য। চারদিকে উৎসবের আমেজে শুধু মানুষ আর মানুষ। শত শত পুলিশ, র‌্যাব, সোয়াতসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয়। আর নিরাপত্তায় ছিল এসএসএফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই টেকেনি তীব্র জনস্রোতের কাছে। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি দুবাই থেকে স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি দুপুর বারোটা ১৪ মিনিটে ছাড়ে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটটি পূর্বনির্ধারিত সময়ের (বিকেল পাঁচটা ২০ মিনিট) চেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা দেরিতে ঢাকায় অবতরণ করে। তবে এতে গণসংবর্ধনা জানাতে রাস্তায় নামা মানুষের চোখে-মুখে কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না। তাদের মাঝে আনন্দ-উচ্ছ্বাসেরও কোন কমতি ছিল না। বরং গণসংবর্ধনা দিতে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত ছিল রীতিমতো জনতার ঢল। জাতীয় ও দলীয় পতাকা এবং ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও বেলুনসহ ফুল হাতে সমবেত এসব মানুষ দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেছেন প্রধানমন্ত্রীর জন্য। রাস্তার দু’ধারে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সাফল্যে তুলে ধরে বড় বড় বিলবোর্ড ও ব্যানার শোভা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে সমবেত মানুষ গান ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্য-বাজনার পাশাপাশি সেøাগানে মুখরিত রেখেছেন গোটা এলাকা। মাইকে বেজেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণসহ মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেরণামূলক দেশাত্মবোধক গান। হাজার হাজার নেতাকর্মীর কণ্ঠে ছিল প্রায় অভিন্ন সেøাগান- ‘শেখ হাসিনার জন্য, বাংলাদেশ ধন্য’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার’, ‘যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনা’, ‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’ ইত্যাদি। দীর্ঘ রাস্তার দু’পাশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ও বিশিষ্টজনরা জাতীয় পতাকা নেড়ে ও ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। অনেকটাই ‘মানব প্রাচীরের’ আদলে হাতে হাত ধরে বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘপথে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে গণসংবর্ধনা জানানো হয়। বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত, কুড়িল ফ্লাইওভার, হোটেল রেডিসন, কাকলী মোড়, বনানী, জাহাঙ্গীর গেট, র‌্যাংগস ভবন, জাতীয় সংসদ ভবন হয়ে গণভবন যাওয়ার পথে সর্বস্তরের মানুষের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এ সময় হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাড়ির ভেতর থেকে হাত নেড়ে লাখো মানুষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের জবাব নেন। প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা সাতটায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গণভবনের উদ্দেশে রওনা দেন। দীর্ঘ এ পথে জনতার অভিনন্দন, শুভেচ্ছা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে প্রায় ২২ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে গণভবনে পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে পথে পথে উপচেপড়া উচ্ছ্বসিত মানুষের হƒদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যা সাতটা ২২ মিনিটে গণভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ছাড়াও লেখক-কবি, সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দসহ অগণিত দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশের বিশিষ্টজনরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অভূতপূর্ব সংবর্ধনা এবং মানুষের আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত প্রধানমন্ত্রী আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায়ের পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকেই আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সড়কগুলোর দু’পাশে সমবেত হয়। বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাকর্মী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতিকর্মী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, নারী সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের।
×