ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা

প্রকাশিত: ০২:২১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকলেও তাঁর জন্মদিন ব্যাপকভাবে পালনে প্রস্তুতির কোন কমতি ছিল না। তবে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের গৃহীত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এ কারণে কেক কাটা, আলোচনা সভা, শোভাযাত্রার কর্মসূচি এবার পালিত হয়নি। তবে দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উদযাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত এক মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার সমকক্ষ আর কেউ নেই। তিনি তাঁর যোগ্যতা, বুদ্ধিদীপ্ততা, বিচক্ষণতার মাধ্যমে তাঁর সিনিয়র রাজনীতিবিদদেরও হার মানিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে দেওয়া রাষ্ট্রনায়ক উপাধীকে নিয়ে যারা হাসি-ঠাট্টা করেছিল, তাঁরাই আজ হাসি-ঠাট্টার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয় সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগ আয়োজিত ‘সময়রেখায় রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পরিবর্তনের মূল কারিগর শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বে আজ বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে শেখ হাসিনার জন্যই। দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নন্দিত নেতা শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানস্থলে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবন ভিত্তিক সংবাদচিত্র প্রদর্শনী, শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্যতা এবং সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী লেখক ও কবি সৈয়দ শামসুল হকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া, মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সভার শুরুতে কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন যুবলীগ ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম। যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত, মজিবুর রহমান চৌধুরী, মো. ফারুক হোসেন, মাহবুবুর রহমান হিরণ, আব্দুস সাত্তার মাসুদ, আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল, দক্ষিণ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, উত্তর সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির ও প্যাগোডাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় কুরআনখানি শুরু হয়ে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মিলাদ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা এহসানুল হক। মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়। সকল ধরনের ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে হেফাজতের জন্য দোয়া করা হয়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়। মোনাজাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ও মার্কেট বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার, দীনী দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, উপ-পরিচালক আনিছুর রহমান সরকার, লাইব্রেরীয়ান শফিকুল ইসলাম তালুকদার, বিক্রয় শাখার উপ-পরিচালক ড. মু. হারুনুর রশীদ, মুফাসসির ড. মাওলানা আবু ছালেহ পাটোয়ারী ও সহকারী পরিচালক হারেস সিনহাসহ ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭০ তম জন্মদিন তাঁর দীর্ঘায়ু ও শারিরীক সুস্বাস্থ্য কামনায় মিলাদ ও দোয়া মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপনসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মী ও বিপুল সংখ্যক মুসল্লিরা মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেন। দোয়ায় শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি পচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ নিহত সকল শহীদদের মাগফেরাত কামনা করা হয়। দুপুর ১২ টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ প্রার্থণা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সুজিত রায় নন্দিসহ কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের উদ্যোগে সকাল ১০টায় ফার্মগেটস্থ আনন্দ সিনেমা হল সম্মুখে যুবলীগ চত্বরে শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্থ্যতা এবং সদ্য প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মদিন করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত দুই মেয়াদ পূর্ণ করে তিন মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বোন শেখ রেহানাসহ মেয়ে, ভাগ্নে-ভাগ্নি, নাতি-নাতনীদের সঙ্গে পারিবারিক সময় কাটাচ্ছেন তিনি। নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এবার জাতিসংঘ কর্তৃক ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অফ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন হিসাবে জাতিসংঘ উইমেন স্বীকৃতি অর্জন করেন। আগামীকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দেশের ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ব্যাপক গণসংবর্ধনা দেবে।
×