ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কুসুম ॥ অনুগল্প

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কুসুম ॥ অনুগল্প

নোটবুকটা আস্তে করে বালিশের নিচে পাচার করে দেয় ও। নতুন কিছু না। শফিককে ঘরে ঢুকতে দেখলে বরাবরই নোটবুকটা আড়াল করে কুসুম। আর সব সময়ই চায় শফিক খেয়াল করুক বিষয়টা। টেনে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখুক, পাতা উল্টে পড়ুক মেয়েটার দেড় বছরের বৈবাহিক জীবনের অনুভূতিগুলো। কুসুম যে দু’-চার কলি লিখতে জানে, শফিক কি জানে সে কথা? অলস দিন রাত হয়, অবসান হয় অপেক্ষার। তবু কোন বৈচিত্র্য আসে না কুসুমের রাতগুলোতে। বাবার মৃত্যুর পর আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি। অল্প বয়সে বিয়ে, এখানে তিন রুমের ফ্ল্যাটে পরিচিত আসবাব, কাপ পিরিচ, নতুন গোলাপি শাড়িটা, দু’-চার লাইন ছন্দ এগুলোই কুসুমের জীবনের অনুষঙ্গ। ফোনটা ওকে তেমন সঙ্গ দেয় না। বন্ধুবান্ধব নেই ওর, কথা বলারও বিশেষ কেউ নেই। শফিক তো সারাদিন ব্যস্ত। তাই মন টানলেও ফোন টেনে কথা বলা হয় না। ঘর ছেড়ে বিশেষ কোথাও থাক, শপিংমলে গেলেই ওর সঙ্কোচের অন্ত থাকে না। অথচ শফিককে নিয়ে রিক্সায় করে অনেকটা পথ ঘুরতে ইচ্ছে হয় না তাও কিন্তু না। শফিক বরাবরই ক্যারিয়ার সচেতন। ফার্স্টক্লাস রেজাল্ট, ফার্স্টক্লাস জব কি নেই ওর? সুসমিতার সঙ্গ সম্পর্কটা বাড়াবাড়ি কিছু ছিল না। তবু তো এমবিবিএস ডাক্তার, স্মার্টনেসের জুড়ি নেই। কুসুম হোক হাজার সুন্দরী, সুসমিতার ছায়া মাড়ানোরও যোগ্যতা রাখে না। শফিকের জগতে কুসুমের অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। কুসুমও বাজতে আসে না। ঘরের সময়টুকু ল্যাপটপ নিয়েই পড়ে থাকে শফিক। কুসুম আস্তে করে চায়ের কাপটা রেখে যায় শুধু। শফিক ওয়াসরুমে গেলে ল্যাপটপটা নেড়েচেড়ে দেখে ক্ষাণিক। কী করে ল্যাপটপে? থিসিসগুলো পড়ে নাকি? যোগ্যতা থাকলে বুঝে পড়ুক অবজ্ঞার হাসি হাসে শফিক। অফিসে গিয়ে মেজাজটা বিগড়ে যায় শফিকের। ল্যাপটপের স্ক্রীনে কুসুমের ছবি একটা। বিরক্ত হলেও কি মনে করে চেঞ্জ করা হয় না ছবিটা। লাঞ্চ আওয়ারে শফিক ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকে, কিছুই করে না। কেন যেন খেতে ইচ্ছে হয় না সে রাতে শফিকের ঘুম আসে না। ডিম লাইটের নীল আলো গায়ে মেখে বেঘোরে ঘুমিয়ে থাকে কুসুম। অবাকের ওপর অবাক হয় শফিক। মানুষ এত মিষ্টি ভঙ্গিতে ঘুমায়! ঘঁভৎধঃ তধৎববহ@ণধযড়ড়.ঈড়স
×