ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী মৌসুমে ভারতে তুলা আবাদ কমছে ১০ শতাংশ

এ বছর বিশ্বে তুলা উৎপাদন বেড়েছে ৬ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

এ বছর বিশ্বে তুলা উৎপাদন বেড়েছে ৬ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী মৌসুমে ভারতে তুলা আবাদে জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ কমেছে। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদনশীলতা থাকবে বাড়তির দিকে। তবে চলতি ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী তুলা উৎপাদন ৬ শতাংশ বাড়ছে। কটন এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিএআই) ২০১৬-১৭ মৌসুমে শস্য উৎপাদন-সংক্রান্ত প্রথম পূর্বাভাস দিয়েছে। এ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতিক পূর্বাভাসে ২০১৬-১৭ মৌসুমে দেশটিতে ৩ কোটি ৩৬ লাখ বেল (প্রতি বেল ১৭০ কেজি) তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে, যেখানে চলতি মৌসুমে ভারতে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৫০ হাজার বেল তুলা উৎপাদনের পূর্বাভাস রয়েছে। এ্যাসোসিয়েশন আগামী মৌসুমে ভারতে মোট চার কোটি বেল তুলা সরবরাহের পূর্বাভাস দিয়েছে, যেখানে চলতি মৌসুমে দেশটিতে ৪ কোটি ২০ লাখ বেল তুলা সরবরাহ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা যায়, আগামী ২০১৬-১৭ মৌসুমে ভারতে তুলা আবাদে জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ হ্রাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমের তুলনায় এবার তুলা আবাদে জমির পরিমাণ কমলেও উৎপাদনশীলতা বাড়তির দিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা ভারতের তুলা উৎপাদনকারী সব অঞ্চলে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভাল রয়েছে। ফলে আগামীবার ২০১৫-১৬ মৌসুমের সমপরিমাণ তুলা উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিএআইয়ের সভাপতি ধীরেন শেঠ। ভারতের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে তুলা বপন শেষ হয়েছে; ২০১৫ সালের একই সময়ে যেখানে ১ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পণ্যটির বপন হয়েছিল। সে হিসাবে ২০১৫ সালের তুলনায় এবার তুলা আবাদে জমির পরিমাণ ৮ শতাংশ কমেছে। এদিকে আগামী মৌসুমে ভারতে অভ্যন্তরীণ তুলার ব্যবহার অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সিএআই ২০১৬-১৭ মৌসুমে দেশটিতে স্থানীয়ভাবে ৩ কোটি ৮ লাখ বেল তুলা ব্যবহারের পূর্বাভাস দিয়েছে। যদিও আগামী মৌসুমে ভারতে অভ্যন্তরীণ তুলা উৎপাদন ও ব্যবহারে উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন আসবে না। তা সত্ত্বেও পণ্যটির আমদানি বাড়তির দিকে থাকবে। এ্যাসোসিয়েশন ২০১৬-১৭ মৌসুমে ২০ লাখ বেল তুলা আমদানির পূর্বাভাস দিয়েছে, যেখানে চলতি মৌসুমে ভারত ১৫ লাখ বেল তুলা আমদানি করেছে। ভারতের গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি তুলা উৎপাদন হয়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে এ তিন রাজ্যে ১ কোটি ৯৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যেখানে চলতি মৌসুমে এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৭০ হাজার বেল। অন্যদিকে দেশটির উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ২০১৬-১৭ মৌসুমে যথাক্রমে ৪২ লাখ ও ৯৩ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। গত বছর দেশটির উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছিল। এ সময় দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদন হয় ১ কোটি সাড়ে ৭ লাখ বেল তুলা। সিএআইয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাজারে বিক্রির জন্য সবররাহ হয় ৩ কোটি ৩৪ লাখ বেল তুলা। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে তুলার দাম রয়েছে বাড়তির দিকে। পাকিস্তানের মতো শীর্ষ ক্রেতা দেশগুলো ভারত থেকে পণ্যটির আমদানি কমিয়ে দিয়েছে। মূলত দেশটিতে তুলা উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা স্থানীয় বাজারে এর দামকে উর্ধমুখী করে তুলছে। চলতি তুলা বর্ষে ভারত থেকে তুলা রফতানির প্রায় ৩৭ শতাংশ হতে পারে পাকিস্তানে। ভারতে বর্তমানে দাম বেড়ে প্রতি ক্যান্ডি তুলা ৫০ হাজার রুপীতে লেনদেন হচ্ছে। ইন্ডিয়ান কটন ফেডারেশন জানায়, ভারতে উৎপাদিত তুলার অন্যতম ক্রেতা দেশ ছিল চীন। তবে চলতি বছর দেশটিতে পণ্যটির চাহিদা খুব বেশি বাড়েনি। পাকিস্তানে তুলা উৎপাদন কমায় ভারত থেকে পণ্যটির ক্রয় বাড়াচ্ছে। স্থানীয় বাজারে যদি তুলার দাম কম হতো, তাহলে পণ্যটির সার্বিক রফতানি অনেক বেশি বাড়ত। এদিকে ভারতে তুলার দাম বাড়তির দিকে থাকায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য রফতানিকারক দেশগুলো থেকে পণ্যটি আমদানির পথ খুঁজছে। ভারত পাকিস্তানে প্রায় ২৫ লাখ বেল তুলা রফতানি করেছে, যেখানে দেশটি থেকে মোট ৬৮ লাখ বেল রফতানি হয়েছে। চলতি বছরের জুন-জুলাই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় ভারতীয় তুলার দাম ছিল বাড়তির দিকে। চলতি বছর পাকিস্তানে তুলার চাহিদা বাড়তির দিকে রয়েছে। তবে ভারতে পণ্যটির দাম বেড়ে যাওয়ায় তা রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান এ্যাঞ্জেল ব্রোকিংয়ের সহযোগী পরিচালক। তবে চলতি ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী তুলা উৎপাদন ৬ শতাংশ বাড়ার কথা জানানো হয়েছে। আইসিএসির সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ২৫ লাখ টন তুলা উৎপাদন হয়েছে, যা ২০১৪-১৫ মৌসুমের চেয়ে বেশি। এদিকে গত মৌসুমে পণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়লেও এর মজুদ কমেছে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী মজুদ হয় ১ কোটি ৯৫ লাখ টন তুলা, যা পূর্ববর্তী মৌসুমের চেয়ে ১৩ শতাংশ কম। তুলার বৈশ্বিক চাহিদা উৎপাদনের কাছাকাছি হওয়ায় এর মজুদ ব্যাহত হয়েছে। গত মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৩৮ লাখ টন তুলার ব্যবহার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা প্রায় আগের মৌসুমের সমপরিমাণ। তুলার অন্যতম ক্রেতা দেশ চীন। দেশটির মিলগুলোয় এ সময় ৩ শতাংশ কমে ৭১ লাখ টন তুলা ব্যবহার হয়েছে। আইসিএসির সাম্প্রতিক তথ্য মতে, আগামী মৌসুমে তুলার বৈশ্বিক চাহিদা থাকবে বাড়তির দিকে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে উৎপাদনের তুলনায় ১৪ লাখ টন বেশি তুলার চাহিদা থাকবে। অন্যদিকে আগামী মৌসুম শেষেও পণ্যটির বৈশ্বিক মজুদ দাঁড়াতে পারে ১ কোটি ৮১ লাখ টনে, যা আগের বারের চেয়ে ৭ শতাংশ কম। আইসিএসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়তি চাহিদা এবং শীর্ষ রফতানিকারক দেশগুলোয় উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে তুলার বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ শতাংশ বেড়ে ৭৫ লাখ টনে পৌঁছাতে পারে। এদিকে ২০১৬-১৭ মৌসুমে বাংলাদেশ ১২ লাখ টন তুলা আমদানি করতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে, যা আগের বারের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে ভিয়েতনামে ১২ শতাংশ বেড়ে তুলা আমদানি পৌঁছাতে পারে ১১ লাখ টাকা।
×