ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ তাঁর খবর রাখে না

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কেউ তাঁর খবর রাখে না

সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ আমলে পাক-ভারত বিভাজনের পূর্ব থেকে এদেশে সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলন শুরু হয়। যেসব স্থানে নাট্য আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে লক্ষ্মীপুর টাউন হল, লক্ষ্মীপুর কলেজ, বিজয় নগর, খিলবাইছা, ভবানীগঞ্জ ইত্যাদি। সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত বেশিরভাগ অভিনেতা আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। এর মধ্যে যাঁদের নাম জানা গেছে, মুকন্দ লাল দাস, কুন্তল কৃষ্ণ মজুমদার (রামেন্দু মজুমদারের বাবা), সুদাময় ঘোষ, আব্দুল হাকিম, লুৎফর রহমান ভূঁইয়া লুতু, মনা মুখার্জী। এঁরা কেউ বেঁচে নেই। এঁরা তৎকালে ব্রিটিশ আমলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত নাটকের মাঠ যাঁরা উত্তপ্ত করেছেন, এঁদের মধ্যে রয়েছেন, রামেন্দু মজুমদার, লোকনাথ দাস, চৌধুরী খুরশিদ আলম, খলিলুর রহমান চৌধুরী, লুৎফুল হায়দার ভুলু, রফিকুল হায়দর চৌধুরী, রাজ্জাকুল হায়দর চৌধুরী, আব্দুল মতিন, বেনু বাবু, জগদীশ সাহা পঞ্চু, প্রদীপ কুমার পাল রবি, বনশ্রী পাল, গীতাশ্রী পাল, চামেলী, নবী হাওলাদার, নূরনবী, শাহ আলম পাটোয়ারী প্রমুখ। মানুষের মনে দাগ কাটা এসব অভিনেতার অনেকে আর জীবিত নেই। রাজনৈতিক প্রয়োজনে গণআন্দোলনে যাঁরা নাটকে অভিনয় করেছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কালো বাবুল, আবুল হাসেম, মাঈন উদ্দিন পাঠান, ফরিদা ইয়াসমিন লিকা, মোস্তফা ফারুক, শৈবাল সাহা, খন্দকার শরীফ, বাবুল প্রমুখ। তবে এদের মধ্যে প্রবীন অভিনেতা ৮৫ বয়সের এক সময়ের তুখোর নাটক নির্দেশক লোকনাথ দাস বয়সের ভারে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ১৯৫২ সালে লক্ষ্মীপুর মডেল হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। কলকাতা থেকে ফিরে এসে ১৯৬২ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। পাক সরকারের বাঙ্গালী বৈষম্যের কারণে তাঁর চাকরী হয়নি। তিনি জানান, ১৯৬৮ সালে রামেন্দু মজুমদারের অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় ছাত্র শিক্ষক নাট্য গোষ্ঠী। ১৮৮৭ সালের পূর্বে গঠিত লক্ষ্মীপুর টাউন হলে প্রতি বছর একটি/দুটি নাটক মঞ্চস্থ হতো। ১৯৬৮ সালে তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয় ‘মরা হাতির দাম লাখ টাকা।’ ১৯৭৫ সালের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে ভাটা পড়ে। চির কুমার তুখোড় অভিনেতা লোকনাথ দাস বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সংসার ধর্ম পালন করেননি। প্রবল ইচ্ছা থাকলেও পুরনো স্মৃতি তিনি আর মনে করতে পারেন না। তাঁর ইচ্ছা ছিল, সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলা। তবে তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। আর্থিক অনটনের জন্য চিকিৎসা করতে পারেন না। এ জগতের কেউ তার খবর রাখে না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ছোট্ট বাসায় এখন বাস করেন নির্দেশক অভিনেতা লোকনাথ দাস। Ñমহিউদ্দীন মুরাদ, লক্ষ্মীপুর থেকে
×