ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যারাই জঙ্গী তারাই জামায়াত শিবির

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২০ আগস্ট ২০১৬

যারাই জঙ্গী তারাই জামায়াত শিবির

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। এ দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, যুদ্ধ এবং বিজয় কোনটিই মেনে নিতে পারেনি। পবিত্র ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী মাওলানা মওদুদীর অনুসারী এ দলটি স্বাধীনতার পর নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে শক্তি মদমত্ততা প্রদর্শন করেছে দীর্ঘ সময়। এদের অভিভাবক হিসেবে কাজ করেছে বিএনপি ও তাদের নীতি আদর্শ সমর্থনকারী অন্যান্য দল করেছে জোট। এরা দেশের ক্ষমতাও পেয়েছে। জাতীয় পতাকা গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে মন্ত্রীর পদ নিয়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আটঘাঁট বেঁধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করে।আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করে বিচার চলছে। রায় হচ্ছে। দ- কার্যকর হচ্ছে। যাদের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের শহীদ (!) আখ্যা দেয়া হয়েছে। ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’, ‘আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান’Ñ এ জাতীয় স্লোগান দিয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করে এরা এক সময় তাদের অপরাজনীতি চালিয়েছে। এদের হিংস্র ছোবলে প্রাণ হারিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির অনেকে। ইসলামী ছাত্র শিবির জামায়াতে ইসলামীর আর্মড ক্যাডার উইং। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে এরা বছরের পর বছর রামরাজত্ব চালিয়েছিল। এখন তাতে ব্যাপকভাবে ভাটা পড়েছে। এদের হিংস্র ক্যাডাররাই রূপ বদল করে এখন জঙ্গীপনায় জড়িয়েছে কথিত নানা সংগঠনের নামে ঘটনা ঘটিয়ে নাম ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের সেই আইএস-এর। এদের জারিঝুরি ফাঁস হয়ে গেছে দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বহুমুখী তদন্তে। এখন একটি কথাই প্রমাণিত হয়েছে এদেশে যারাই জঙ্গীÑতারাই জামায়াত-শিবির। বিশেষজ্ঞ সূত্রমতে, বর্তমান সরকারী দলের দূরদর্শী রাজনীতির সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে এরা এবং এদের নেতৃত্বদানকারী জোটের প্রধান দলসহ সকলের অবস্থা করুণ। এ কারণে এরা জঙ্গীপনার মাধ্যমে মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। যা তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধেও অবলীলাক্রমে ঘটিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গীপনা দেশজুড়ে ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি করে। ৬টি জঙ্গী সংগঠন সরকার নিষিদ্ধ করলেও ভিন্ন নতুন নামে এদের জঙ্গীপনার অপতৎপরতা চলছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের ঘটনায় এরা ছিল উচ্ছ্বসিত। আর সাধারণ মানুষ ছিল আতঙ্কিত। সরকার তাৎক্ষণিকভাবে জঙ্গীপনাবিরোধী বহুমুখী অভিযান শুরু করার পর একে একে ধরা পড়ছে জঙ্গীপনার সঙ্গে জড়িতরা। এদের মধ্যে নারী জঙ্গীও এখন বেরিয়ে আসছে। তদন্তে এদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। এরা সকলেই জামায়াত-শিবির, ইসলামী ছাত্রী সংস্থা সাবেক বা বর্তমান সদস্য। সর্পের চামড়া বদলের মত এরাও নাম বদলিয়েছে শুধু। সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধী এই জামায়াত এখন তাদের আমীর নির্বাচনে তৎপর হয়েছে। তাদের নেতাদের প্যানেল গঠনের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের একটি পর্বও হয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এতে কে নবরূপে আবির্ভূত হচ্ছেন তা এখনও জানা যায়নি। তাদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে ক্লিন ইমেজের নেতাদের নিয়ে দলের কার্যক্রম নতুনভাবে পরিচালনা করা হবে। অথচ, দলটি এদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধী। নীতি আদর্শে কোন পরিবর্তন হয়নি। নেতা থেকে সমর্থক পর্যন্ত এরা যে আদর্শে দীক্ষিত তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। সঙ্গত কারণে দেশের প্রগতিমনা সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বারে বারে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠানো হয়েছে। কি কারণে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি তা এখনও স্পষ্ট নয়। একাত্তরে এদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা, পরবর্তীতে আগুন সন্ত্রাস এবং আরও পরে জঙ্গীপনার ভয়াবহ ছোবল মেরে এরা মাঠ দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এদের অনেকে দেশ ছেড়েছে, কেউ গা-ঢাকা দিয়ে আছে আর কেউ কেউ আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে টার্গেট কিলিং ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলে পড়ছে। এ অবস্থায় এদের বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে নির্মূল করার পথ বেছে নেয়াই সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। ২০ দলীয় জোটের শরীক দল হিসাবে জামায়াত এখনও তালিকাভুক্ত। সরকারপক্ষে জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে জঙ্গীপনার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে অনেকের বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু বিএনপি এতে এখনও সম্মতি দেয়নি বলেই প্রতীয়মান।
×