ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা

উজানে পানি কমলেও এখনও পানিবন্দী ১৫ লাখ মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১ আগস্ট ২০১৬

উজানে পানি কমলেও এখনও পানিবন্দী ১৫ লাখ মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। কিছুসংখ্যক নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও রবিবারও পানিবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি পায়নি ১৫ লাখ বন্যার্ত। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় ১৮ নদীর পানি। পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের বেশকিছু রাজ্যে প্রবল বর্ষণ ও বন্যা চলছে। ফলে প্রবলবেগে উজানের পানি নামছে বাংলাদেশে। এতে চলমান বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। রবিবারও অনেক জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বেড়েই চলেছে নদী ভাঙ্গন। বন্যার পানিতে ডুবে রবিবার জামালপুরে দু’নারী ও ফরিদপুরে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বন্যার্ত এলাকাগুলোতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সঙ্কট রয়েই গেছে। তবে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ ত্রাণ তৎপরতা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার রবিবার সন্ধ্যায় জানান, গঙ্গা স্থিতিশীল রয়েছে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি সমতলের হ্রাস অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এবং ধরলা নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি সমতলের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে পদ্মা নদীসংলগ্ন রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। আর ঢাকার আশপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা প্রভৃতি নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। রবিবার ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধায় ৬২ সে.মি, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬৩ সে.মি, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ১০৫ সে.মি, সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৮৮ সে.মি, সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮৪ সে.মি, কাজিপুরে ৭২ ও আরিচায় ৫৭ সে.মি, আত্রাই নদীর পানি বাঘাবাড়ীতে ১০৫ সে.মি, এলাসিনে ধলেশ্বরীর পানি ১৪০ সে.মি, পদ্মার পানি গোয়ালন্দে ১০১, ভাগ্যকূল পয়েন্টে ৫৮ সে.মি ও সুরেশ্বরে ২০ সে.মি, কংস নদীর পানি জারিয়াজঞ্জাইলে ৭৯ ও তিতাস নদীর পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জামালপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্র, ঝিনাইসহ শাখা নদীগুলোর পানি। বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে দুই নারী। ১২ দিনের বন্যায় জামালপুর জেলার গ্রামীণ জনপদ মূলত ল-ভ- হয়ে গেছে। বন্যার পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে জেলার প্রায় ছয় লাখ মানুষ। জেলার জামালপুর সদর, মেলান্দহ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার সর্বমোট ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৫০ ইউনিয়ন এখন বন্যাকবলিত। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও ঝিনাই নদীর পানিতে প্রত্যন্ত গ্রামগুলো এখন থৈ থৈ। বন্যাকবলিত মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর দুর্ভোগের শেষ নেই। ত্রাণের জন্য বন্যার্তদের মাঝে হাহাকার সবচেয়ে বেশি। গরিব, দুঃখী ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে গবাদিপশুর খাদ্যের সঙ্কট। জামালপুর জেলা সদরের সঙ্গে বন্যাকবলিত উপজেলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। শনিবার পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলায় বন্যার কারণে এক হাজার ৭৬০ হেক্টর আমন বীজতলা, এক হাজার ৪শ’ হেক্টর জমির আউশ, তিন হাজার ৯শ’ হেক্টর জমির পাট ও ১শ’ হেক্টর জমির কলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এক হাজার ৭৭৬টি পুকুর ও জলাশয় ডুবে যাওয়ায় প্রায় ৪৪ লাখ টাকার মাছ বেরিয়ে গেছে বলে জানায় জেলা মৎস্য অফিস। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহাবুদ্দিন খান জানিয়েছেন, বন্যার্তদের জন্য ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়ায় সাত উপজেলায় ৫৫টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন জামালপুরের সিভিল সার্জন মোশায়ের-উল-ইসলাম রতন। টাঙ্গাইল ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ক্ষতির পাশাপাশি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। জেলার বন্যাকবলিত সাতটি উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি উঠেছে। এতে শিক্ষার্থীরা ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে পারছে না। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত না হওয়ায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বন্যার পানির মধ্যেও কষ্ট করে বিদ্যালয়গুলোতে আসছেন। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্র্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার সকালে যমুনার নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় এ নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার কমেছে। পানিবন্দী মানুষকে উদ্ধার, মেডিক্যাল টিম গঠন এবং ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে প্রশাসনের ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। নীলফামারী ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, উজানের ঢল কমলেও নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ১১ গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। তিস্তা নদীর পাল্টে যাওয়া গতিপথ উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ি ও পূর্ব খড়িবাড়ি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামের ভেতর দিয়ে এখনও বয়ে যাচ্ছে। ফলে ওই গ্রামগুলো টানা ২১ দিন যাবত পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এদিকে বন্যার পানি কমলেও তিস্তার ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার তিস্তার ভাঙ্গনে চরখড়িবাড়ি ও ফরেস্টেরচরের নতুন করে আরও ৬৮টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে। শেরপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রবিবার সকাল থেকে জামালপুর, টাঙ্গাইলসহ উত্তরবঙ্গের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ছয় ইউনিয়নের প্রায় ৬০ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ। উজান থেকে আসা পানিতে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, দশানী, মৃগীসহ জেলার অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরনো ভাঙ্গা অংশগুলো দিয়ে প্রবলবেগে বন্যার পানি চরাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ছয় ইউনিয়নের ৬০ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ওই সব এলাকার কাঁচা রাস্তাঘাট, ফসল ও বিভিন্ন সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। বন্যাকবলিত এলাকার অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শিশুদের নিরাপত্তার কারণে বিদ্যালয়গুলো সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাদারীপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। পদ্মার পানি শিবচর পয়েন্টে আরও ১০ সে.মি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪৮ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কাওড়াকান্দি ঘাটের ২নং ঘাট এক সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত। পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মার চরাঞ্চল ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙ্গনে সন্ন্যাসীরচর, পদ্মা নদীর ভাঙ্গনে চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ির তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে ঘরের মধ্যেই মাচা তৈরি করে বসবাস করছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ ও টিউবওয়েল ডুবে গেছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে দুর্গত এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সঙ্কট। দুর্গত এলাকার মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। এ পর্যন্ত এসব এলাকায় কোন ধররের সরকারী ত্রাণ পৌঁছেনি। বেড়া (পাবনা) ॥ সংবাদদাতা জানান, যমুনা, বড়াল ও হুরাসাগর নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে পাবনার বেড়া উপজেলায় আটটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি ডুবে গেছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ এলাকায় নদী ভাঙনও শুরু হয়েছে ব্যাপকহারে। ভাঙ্গনের কারণে চরাঞ্চলের লোকজন প্রতিনিয়ত ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। গাইবান্ধা ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় ঘাঘট, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর দু’সপ্তাহের অব্যাহত বন্যা ও বাঁধ ভাঙ্গা পানির তোড়ে পানিবন্দী ভানভাসী মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তাদের বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, জ্বালানি, টয়লেট, চিকিৎসা এবং গবাদিপশু সংরক্ষণ ও গবাদিপশুর খাদ্য সঙ্কটসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। সরেজমিন এসব এলাকা পরিদর্শন করে এ তথ্য জানা গেছে। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার ৩১ ইউনিয়নের ২ লাখ ৬১ হাজার ৬শ’ মানুষ বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, লৌহজং উপজেলার পদ্মার চরের দোয়ালি গ্রামের মুন্না (৪) বাড়িতে ওঠা বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় গোলাঘরের মেঝেতে শিশু মুন্না তার বাবা-মার সঙ্গে খেলা করছিল এ সময় পা পিছলে ঘরের ভেতরের চৌকি থেকে পানিতে পড়ে যায় এবং স্রোতের তোড়ে একপর্যায়ে বাড়ির উঠানে চলে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ উঠান হতে উদ্ধার করে তার স্বজনরা। শিশুটিকে উদ্ধার করে লৌহজং সদরের একটি ক্লিনিকে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি চলাচল এখনও স্বাভাবিক হয়নি। প্রবল স্রোতের কারণে ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। গত ১০ দিনের এ অচলাবস্থার করণে নানা দুর্ভোগে পড়েছে যাত্রীসাধারণ। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে। শিশুলিয়া প্রান্তে ১৫০টি ট্রাকসহ দু’পারে অন্তত ৩শ’ যান পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৩ ইউনিয়েন শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত রয়েছে। বন্যার্ত হয়ে পড়েছে সাড়ে ১৫ হাজর পরিবার। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে রবিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনার পানি কমলেও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি বাড়ছে। করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, ধলাই, চাকলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এখনও নদী এলাকার গ্রামগুলো বন্যায় ডুবে রয়েছে। মানিকগঞ্জ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা, যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর পানি ৩ সে.মি বৃদ্ধির ফলে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, হরিরামপুর, শিবালয়, ঘিওর, সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার নদীতীরবর্তী ২৫ ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ১০ হাজার ৬শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৬টি হাই স্কুল ও ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন নগদ সাত লাখ টাকা ও ৭৫ টন চাল বরাদ্দ করেছে। মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৫৭ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফরিদপুর ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতির মারত্মক অবনতি ঘটেছে। পানির তোড়ে শহর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ফাটল ধরেছে। ধসে গেছে ৩শ’ ফুট পাকা সড়ক। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বন্যাদুর্গত মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্ব শালেপুর গ্রামে রবিবার দুপুরে পানিতে ডুবে আলী বেপারী (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে। কুড়িগ্রাম ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, নদ-নদীর পানি সামান্য হ্রাস পেলেও কুড়িগ্রাম জেলার নয় উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বানভাসী সাড়ে ছয় লাখ মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বরং বিরাজ করছে খাদ্যের জন্য হাহাকার। সরকারী ত্রাণ সরবরাহ অপ্রতুল। পাশাপাশি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁধের রাস্তা ও উঁচু স্থানে আশ্রিতরা এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। ফলে খোলা আকাশের নিচে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
×