ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে ৩ সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হতভাগী জাহেদা

প্রকাশিত: ০০:৩৪, ২৯ জুলাই ২০১৬

কক্সবাজারে ৩ সন্তান নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হতভাগী জাহেদা

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ রামুর ঈদগড়ে আওয়ামী লীগ নেতা হত্যা ঘটনার একমাস পার হয়ে গেলেও মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আসামি ধরতেও তেমন কোন অভিযান চোখে পড়ছে না দেখে স্বামী হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কায় ভোগছেন নিহত রামু ঈদগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মহিউদ্দিনের স্ত্রী জাহেদা বেগম। হত্যা মামলার প্রধান আসামীর হুমকির মূখে প্রাণ বাঁচাতে ৩ সন্তান নিয়ে বর্তমানে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হতভাগী জাহেদা। মামলার প্রধান আসামি স্থানীয় চেয়ারম্যান হওয়ায় মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে চলছে। জাহেদা বেগম বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে তার স্বামীকে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়েছে। ওই মামলায় ঈদগড় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টোসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়। বর্তমানে ওই চেয়ারম্যান তাদেরকে এলাকা ছাড়া করেছেন বলে স্বামী হারা জাহেদার অভিযোগ। সূত্র মতে, গত ১৬ জুন রাতে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনকে তার বাড়িতে প্রবেশ করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহতের পরিবারের দাবি, বেশকিছুদিন ধরে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টোর সঙ্গে মহিউদ্দিনের বিরোধ চলে আসছিল। খুন করার আগেও কতিপয় পুলিশকে মোটা অঙ্কের টাকায় ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিনকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় আসামী করে ভুট্টো। ওসব মিথ্যা মামলায় জেলও কেটেছেন তিনি। জাহেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, কিছুদিন আগে চেয়ারম্যান ভুট্টো ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে দিনে দুপুরে তাদের বাড়ির গেইট ভেঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলে এতে আরও ক্ষেপে যান তিনি। তার স্বামীর চাচাত ভাইদের সঙ্গে মাত্র ৯ শতক জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। এদের সঙ্গে আঁতাত করে চেয়ারম্যান ভুট্টো তার বাহিনী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে ডাক্তার মহিউদ্দিনকে। নিহত মহিউদ্দিনের স্ত্রী আরও জানান, স্বামীকে হত্যা করেও চেয়ারম্যান ভুট্টো শান্ত হয়নি। আমাদেরকেও বিভিন্নভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। প্রাণ বাঁচাতে ৩ সন্তান নিয়ে এখন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। তিনি তার স্বামী হত্যা মামলাটি পিবিআই’র মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানান। নিহতের পিতা ফয়েজ আহমদ মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান ভুট্টো তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে এখন মামলা থেকে রেহায় পেতে নানা তদ্বির চালাচ্ছে। প্রভাবিত করছে মামলার তদন্ত কার্যক্রমেও। প্রধান আসামি ভুট্টো প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করলেও পুলিশ তাকে আটক করছেনা। ঈদগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী নুরুল আলম জানান, ডা: মহিউদ্দিন ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক। দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল তার। বিভিন্ন সময় মিথ্যা মামলায় মহিউদ্দিনকে চেয়ারম্যান ভুট্টো জেলও কাটিয়েছে। রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন, ডা: মহিউদ্দিন ছিলেন মূলত বর্তমান চেয়ারম্যানের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার একজন ব্যক্তি। তিনি কখনও প্রকৃত আওয়ীমী লীগ ছেড়ে ভুট্টোর কাছে মাথা নত করেনি। ইতোপূর্বে মহিউদ্দিনের বাড়ি লুটপাট করা হয়েছে, মেয়েকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু কোন সময়ই পুলিশ মামলা নেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাকে নির্মমভাবে খুন করা হলো। দোষি ব্যক্তি যত বড়ই ক্ষমতাধর হোক- তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তিনি। রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রভাষ চন্দ্র ধর জানান, মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। তবে খুব শীঘ্রই চুড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে।
×