ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি ফেরি রুটে যাত্রী বিড়ম্বনা চরমে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ জুলাই ২০১৬

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি  ফেরি রুটে যাত্রী  বিড়ম্বনা চরমে

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে (ফেরি) যাত্রীদের বিড়ম্বনা এখন অহরহ ঘটনা। ভিআইপির নামে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখা এবং সংশ্লিষ্টদের খামখেয়ালির কারণে বিড়ম্বনা দিনদিন বেড়ে চলেছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই ফেরি রুটে নিত্য যানজটসহ নানা রকমের সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নের সম্মুখীন। জানা গেছে, এই নৌরুটে বর্তমানে চারটি রো রোসহ ১৭ ফেরি চলাচল করছে। ঘাটে যানবাহনের চাপও অপেক্ষাকৃত কম। এরপরও যাত্রীদের প্রায়ই ঘাটে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কাওড়াকান্দি প্রান্তের একটি ঘটনা বিস্মিত হওয়ার মতো। এখানে পাশাপাশি দুটি (১ ও ২) ফেরি ঘাট। দুটি ঘাটই মূলত ভিআইপি। স্থপতি আরিফুর রহমান মংলা থেকে এই ঘাটে এসে পৌঁছান শনিবার সন্ধ্যা ৭টায়। তখন এক নম্বর ঘাটে ফেরি ক্যামিলিয়া অপেক্ষা করছে নৌপরিবহন মন্ত্রীর জন্য। তাই এই ঘাটে তাকে (স্থপতি) প্রবেশে বিরত রাখেন ঘাটের কর্মীরা। ফলে তিনি যান দুই নম্বর ঘাটে। এই ঘাটে একটি ফেরি তখনও যানবাহন উঠাচ্ছে। কিন্তু ২/৩টি যানের পেছনে থাকায় তার (স্থপতি) যানটি আর ঘাটে উঠতে পারেনি। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর আসে ফেরি ‘ফরিদপুর’। কিন্তু যানবাহন নামিয়ে দেয়ার পর ওই ফেরি বন্ধ করে রাখা হয়। ঘাটের লোকজন জানান, মূলাদির সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট টিপু সুলতানের জন্য এই ফেরি ছাড়তে বিলম্ব হবে। দীর্ঘ সময় পরে ঘাটে আসেন ওই সংসদ সদস্য। এরপর ফেরি ‘ফরিদপুর’ ঘাট থেকে ছাড়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে। অন্যদিকে এক নম্বর ঘাটে নৌ-পরিবহনমন্ত্রীকে নিয়ে ফেরি ‘ক্যামিলিয়া’ এক নম্বর ঘাট ছেড়ে যায় রাত ৯টার দিকে। ‘ক্যামিলিয়া’ ফেরিটি কে-টাইপ মধ্যম ফেরি। ফেরিটিতে আরও যান নেয়া সম্ভব ছিল বলে স্থপতি আরিফুর রহমান মনে করেন। তবে ফেরি ‘ফরিদপুর’ অপেক্ষাকৃত ছোট থাকায় তেমন যান উঠানো সম্ভব হয়নি। আরও চার প্রকৌশলীসহ আরিফুর রহমানের মাইক্রোটি ফেরি ফরিদপুরে করেই পদ্মা পাড়ি দেন প্রায় সোয়া ঘণ্টায়। কিন্তু ঘাটে ভিআইপি বিড়ম্বনার কারণে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষমাণ থাকাকালে তাদের শুনতে হয় যাত্রীদের নানা কথা আর টিপ্পনি। আরিফুর রহমান জানান, তিনি ঘাটে ৭টায় আসেন। কিন্তু আরও আগে থেকেই ফেরি ক্যামেলিয়া নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে বলে তিনি জেনেছেন। এর কয়েক মাস আগেও তিনি এই ঘাট পার হওয়ার সময় নৌ-পরিবহনমন্ত্রী পার হচ্ছিলেন। তখনও এমন দীর্ঘ সময় ফেরি আটকে রাখার রীতি তিনি লক্ষ্য করেছেন। কাওড়াকান্দি প্রান্তে মোট ৩টি ঘাট। অপর তিন নম্বর ঘাটটি কিছুটা দূরে। তাই সেখানে কি অবস্থায় ছিল তা তিনি অনুধাবন করতে পারেননি। আর যেহেতেু দুই নম্বর ঘাটের লাইনে ছিলেন, তাই বের হওয়ারও সুযোগ ছিল না। এসব বিষয়ে কথা হয় কওড়াকান্দি ঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউসির ম্যানেজার আব্দুস সালামের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জনকণ্ঠকে জানান, যখন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী ফেরিতে উঠে গেছেন তখন মূলাদির সংসদ সদস্য টেকেরহাট ক্রস করছিলেন। সেখান থেকে ঘাটে পৌঁছতে আরও ২০/২৫ মিনিট সময় লাগবে। তাই মন্ত্রীর ফেরি বিলম্ব করানো হয়নি। নতুবা সংসদ সদস্যকেও মন্ত্রীর ফেরিতে তুলে দেয়া যেত। বিআইডব্লিউসির ম্যানেজার বলেন, তিন নম্বর ঘাটে রো রো ফেরি বা টানা ফেরি চলাচল করে। এই ফেরিতে একসঙ্গে অনেক যান পারাপার করা যায়। ঢাকাগামী ফরিদপুরের বাসিন্দা প্রদীপ দাস জানান, এই রুটে সবসময়ই ভিআইপি পারপার হয়। কিন্তু তাদের জন্য ছোট ভিআইপি ফেরিও থাকে না। কিন্তু সবঘাটেই ভিআইপির জন্য এভাবে ফেরি আটকে রাখা হলে সাধারণের সমস্যা তো হবেই। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও বিনষ্ট হচ্ছে। খুলনা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সাইফুল ইসলাম জানান, এ জন্য ভিআইপরা যত না দায়ী তাদের চেয়ে বেশি দায়ী, অতি উৎসাহী কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ভিআইপদেরও এ বিষয়ে সজাগ থাকা দারকার। এই ঘাট এলাকার মুন্সীগঞ্জ প্রান্তের লৌহজং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খালেকুজ্জামান জানান, যাত্রী বিড়ম্বনার কিছু অভিযোগ আসে। তবে তা নিরসনে প্রশাসন সব সময়ই সজাগ। তবে এসব বিষয়ে খোঁজ খবর করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×