ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী বিনিয়োগে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা

তৈরি পোশাক খাতে ফের ইমেজ সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ১৬ জুলাই ২০১৬

তৈরি পোশাক খাতে ফের ইমেজ সঙ্কট

এম শাহজাহান ॥ পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে তৈরি পোশাকখাতে ফের ইমেজ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। পরপর দু’দফা জঙ্গী-সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে বাংলাদেশ সফরে সতর্কতা অবলম্বন করছেন বিদেশী ক্রেতারা। চলমান এই সঙ্কট ভালভাবে মোকাবেলা সম্ভব না হলে এ শিল্পে ভবিষ্যত বিদেশী বিনিয়োগও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রেতারা (বায়ার) অর্ডার প্রদান, আলোচনা বা চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে যাওয়ার অনুরোধ করছেন। এই বাস্তবতায় এ শিল্পের বেশিরভাগ উদ্যোক্তাই এখন অর্ডার নেগোশিয়েশনের জন্য এই তিনদেশ সফরে রয়েছেন। তবে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশী কর্মকর্তা, বায়ার ও টেকনিশিয়ানদের বিশেষ নিরাপত্তা প্রদান করার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য এদের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে মূলত ইউরোপ এবং আমেরিকার ক্রেতারা সিংহভাগ পোশাক আমদানি করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্রেতা হচ্ছে-এইচ এ্যান্ড এম, ওয়ালমার্ট, কার্টাস, গ্যাপ, টার্গেট, টেসকো, ভিএফ, সি এ্যান্ড এ, ক্যারে ফোর, আর এ্যান্ড বি ইত্যাদি। বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয়কারী এসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। দীর্ঘদিন কমপ্লায়েন্স ইস্যু সামনে এনে শ্রমিকের জীবনমান, বেতন-মজুরি, নিরাপত্তা, কারখানায় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ, শ্রমিকদের বীমার আওতায় আনা, চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়গুলো নিয়ে ক্রেতারা চাপ দিয়ে আসছিলেন। এবার আবার যুক্ত হলো নিরাপত্তার বিষয়টি। বিশেষ করে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় ইতালির পোশাক ক্রেতারা জঙ্গী হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। ক্রেতারা বাংলাদেশ সফর করতে চাচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং এ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, জঙ্গী হামলার ঘটনার পর থেকে ক্রেতারা (বায়ার) বাংলাদেশে আসতে চাচ্ছে না। নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা অন্যদেশে চলে যেতে চাচ্ছেন। তারা যদি না আসেন তাহলে দেশের পোশাকখাতের কি অবস্থা হবে সেটাকি কেউ ভেবেছেন? তিনি বলেন, তৈরি পোশাক রফতানির ওপরই দেশের রফতানি বাণিজ্য টিকে আছে। সেই পোশাক ক্রেতারা এখন এদেশে আসতে চান না। পোশাক রফতানি বন্ধ হলে পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়বে। এই সঙ্কট উত্তরণে জঙ্গী-সন্ত্রাসী তৎপরতা মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার সময় হয়েছে। এই ইস্যুতে কাদা ছোড়াছুড়ি ও রাজনীতি না করে সকলকে এই শিল্পখাত রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। জানা গেছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে পোশাক শিল্পে কি পরিমাণ ক্ষতি ইতোমধ্যে হয়েছে এবং এই শিল্পখাতটির ভবিষ্যত কি সে বিষয়ে আজ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ভিআইপি কক্ষে জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং এ্যাসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই শিল্প রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হবে। জানা গেছে, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে কত বিদেশী নাগরিক কাজ করছেন তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে শিল্পাঞ্চল পুলিশ। তাদের নিরাপত্তা বিধানে এ তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। খুব দ্রুত এ তালিকা সম্পন্ন করা যাবে বলে মনে করেন শিল্পাঞ্চল পুলিশের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ইতোপূর্বে ইংল্যান্ড থেকে টেসকো ও ফ্রান্স থেকে সিলিও নামের দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের সফর স্থগিত করে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের ৪০ থেকে ৬০টি কারখানা থেকে তৈরি পোশাক কেনে। কিন্তু তারা বাংলাদেশে না এসে তাদের নিজ নিজ দেশে গিয়ে বৈঠক করতে বলছেন। এছাড়া আগামী ১৮ জুলাই ইউএস কটন কাউন্সিলের ঢাকায় একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠকটিও বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম আগামী সেপ্টেম্বরের শেষদিকে ঢাকায় বিপুলসংখ্যক দেশী-বিদেশীর অংশগ্রহণে একটি বড় আকারে প্রদর্শনীর আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বায়ারদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ্যালায়েন্সের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছে। আগামী ১৮ তারিখে এ্যাকর্ডের সঙ্গেও একটি বৈঠক করা হবে। এদিকে, ঈদের আগে ঢাকার গুলশানে জঙ্গী হামলায় ২০ জন বিদেশী নাগরিক নিহত হন। এর মধ্যে ৬ জনই গার্মেন্টস ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এদের মধ্যে ইতালির নাদিয়া বেনেদেত্তি গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশে কাজ করছিলেন। এ ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছে। জানা গেছে, বরাবরই গভীর ষড়যন্ত্রের মুখে রয়েছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত। বাংলাদেশে কাজ করছে এরকম দেশী-বিদেশী প্রায় ৩০টির বেশি শ্রমিক সংগঠন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন করে যুক্ত হয়েছে জঙ্গী-সন্ত্রাসী তৎপরতা। এদেরও লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে গার্মেন্টস শিল্পখাত।
×