ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘শেখের বেডির সম্মান পাইয়া সব দুঃখ-কষ্ট ভুইল্যা গেছি’

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১ জুলাই ২০১৬

‘শেখের বেডির সম্মান পাইয়া সব দুঃখ-কষ্ট ভুইল্যা গেছি’

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর, ৩০ জুন ॥ ‘দীর্ঘদিন পরে অইলেও শেখের বেডি যে আমগরে খবর নিল, এইডা বুলবার নয়। সোয়ামি হারাইয়া যে দুঃখ-কষ্ট পাইছিলাম, আজ শেখের বেডির সম্মান আতে পাইয়া সব দুঃখ-বেদনা ভুইল্যা গেছি।’ কাঁদতে কাঁদতে শাড়ির আঁচলে ছোখ মুছতে মুছতে কথাগুলো বলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী সেই সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ ফজর আলীর স্ত্রী বীরাঙ্গনা জোবেদা বেগম (৮৬)। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ‘নারী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে স্বীকৃতি ও ভাতার প্রথম সম্মানী হাতে পেয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ওই কথাগুলো বলেন তিনি। এর আগে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তরফদার সোহেল রহমান তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জোবেদা বেগমসহ সোহাগপুর বিধবাপল্লীর ৪ বীরাঙ্গনার হাতে ৬ মাসের ভাতা বাবদ ৬০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। ভাতাপ্রাপ্ত অন্যরা হচ্ছেন সোহাগপুর বিধবাপল্লীর শহীদ বাবর আলীর স্ত্রী জোবেদা খাতুন (৭৪), শহীদ কাইঞ্চা মিয়ার স্ত্রী আছিরন নেছা (৭৯) ও শহীদ আবদুল লতিফের স্ত্রী হাসেনা বানু (৬১)। ওইসময় অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক রেজাউল করিম, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, সোহাগপুর শহীদ পরিবার কল্যাণ সমিতির সভাপতি জালাল উদ্দিনসহ নারী মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। চেক হাতে পেয়ে আবেগে আপ্লুত শহীদ কাইঞ্চা মিয়ার স্ত্রী বীরাঙ্গনা আছিরন নেছা (৭৯) জানান, ‘বঙ্গবন্ধুর মাইয়া দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৪ বছর পরে আমগরে যে সম্মান দিল তা আমি আমার সারাজীবনেও ভুলবো না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, শেখের বেডি হাসিনারে যেন আল্লায় অনেক দিন বাঁচাই রাহে।’ এছাড়া সোমবার ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সেলিম রেজা স্থানীয় রাঙ্গামাটি খাটুয়াপাড়া গ্রামের ৩ বীরাঙ্গনার হাতে তুলে দেন একই পরিমাণ অর্থের ভাতা। তারা হচ্ছেন শহীদ বাদশা মিয়ার স্ত্রী আয়শা বেওয়া, মোজাফফর আলীর স্ত্রী বিবি হাওয়া ও তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী মোছাঃ শরফুলি বেগম। ওইসময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আমিরুজ্জামান লেবু উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসররা নালিতাবাড়ী উপজেলার কাকরকান্দি ইউনিয়নের সোহাগপুর গ্রামে হানা দিয়ে নাম না জানা ৪০ জনসহ ১৮৭ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। একই সাথে তাদের পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয় ১৯ নারী-যাদের মধ্যে বেঁচে আছেন এখন ১২ জন। আর একই বছরের ৬ জুলাই কাটাখালী ট্র্যাজেডির অংশ হিসেবে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন বেশ কয়েকজন নারী। পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওইসব নারীরা বীরাঙ্গনা হিসেবে আলোচিত হলেও স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরও তাদের ছিল না কোন স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন।
×