ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য টেলিটকের ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৪ জুন ২০১৬

থ্রিজি নেটওয়ার্কের জন্য টেলিটকের ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

ফিরোজ মান্না ॥ গ্রাম পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা দিয়ে সরকারী মালিকানাধীন মোবাইল আপারেটর টেলিটক থ্রিজি (তৃতীয় প্রজন্মের) নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রায় ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের সব উপজেলা শহর, গ্রোথ সেন্টার, বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এক হাজার ২শ’ বেজ স্টেশন টাওয়ার ও ৫শ’টি ২ দশমিক ৫-জি বিটিএস নির্মাণ করা হবে। দুর্বল নেটওয়ার্ক নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে চলা টেলিটককে গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য গত মার্চে নতুন লোগো ও রি-ব্র্যান্ডিং করা হয়। তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, টেলিটকের নতুন লোগোর পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে টেলিটককে নতুনরূপে আনা হবে। যাতে অন্য অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় থাকতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, টেলিটকের গ্রাহক বৃদ্ধি ও ইন্টারনেট সেবা গ্রামে নিয়ে যেতে ‘থ্রিজি প্রযুক্তি চালুকরণ ও ২ দশমিক ৫-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬শ’ ৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় থ্রিজি সম্প্রসারণে এইচএসপিএ প্ল্যাটফরম স্থাপন করে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করা হবে। দেশে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আরও ১৭ লাখ সংযোগ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এই প্রকল্পে। অধিকসংখ্যক থ্রিজি ও ২ দশমিক ৫-জি সংযোগের মাধ্যমে দেশে টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি, ই-গবর্নেন্স, ই-শিক্ষা কার্যক্রম ও ই-হেলথ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এই প্রকল্পটি ২০১১ সালের মে মাসে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টেলিটকের থ্রিজি নেটওয়ার্ক ঢেলে সাজানোর জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। সরকারী মালিকানাধীন মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটক শুধু জেলা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। এর কার্যক্রম জেলা থেকে, উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া হবে। বর্তমানে প্রতি মাসে টেলিটক ৪ কোটি টাকা লোকসান গুনছে। লোকসানের হাত থেকে টেলিটককে লাভজনক অবস্থায় নিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই উদ্যোগ নেয়। টেলিটক আগামী জুলাই থেকে সারাদেশে বিটিএস নির্মাণের কাজ শুরু করবে। সূত্র জানিয়েছে, এর আগে টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে গত ৭ বছর তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবার বিটিসিএলের টাওয়ার ব্যবহার ও নতুন করে টেলিটক আরও টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে পরিচালনা পর্ষদের সভায় নেটওয়ার্ক উন্নয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। তখন দরপত্র জটিলতায় নেটওয়ার্ক উন্নয়ন কাজটি আটকে যায়। যে নেটওয়ার্ক নিয়ে টেলিটকের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই নেটওয়ার্কের ধারণ ক্ষমতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে কর্তৃপক্ষ নতুন টেলিটক সংযোগ বিক্রি প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ২০১০ সালের জুন মাসে বেজ ট্রান্সমিশন ও রিসিভার স্টেশন (বিটিএস) স্থাপনের যন্ত্রপাতি আমদানি করে। তখন আবারও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বিটিএসগুলোতে যন্ত্রপাতি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন যন্ত্রপাতিগুলো গুদামেই পড়ে ছিল। টেলিটক তাদের টাওয়ার বা বেজ স্টেশন অল্পসংখ্যক ব্যবহার করছে। বিটিসিএলের টাওয়ার ব্যবহার করতে হলে টেলিটকের একটি চুক্তি করতে হয়। কিন্তু সেই চুক্তি টেলিটক চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত করা হয়নি। সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম টেলিটকের নেটওয়ার্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিটিসিএলের টাওয়ারগুলো শেয়ার করার জন্যও নির্দেশ দেন। এ ছাড়া গ্রাহকরা যেন সারাদেশেই টেলি রিচার্জ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। টেলিটকের প্রতি শুরুতে মানুষের যে আগ্রহ ছিল সেই আগ্রহ আবার ফিরিয়ে আনা হবে। এ জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আগে টেলিরিচার্জ অনেক জায়গায় পাওয়া যেত না। এখন কিন্তু বেশিরভাগ জায়গায় টেলিরিচার্জ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন পোস্ট অফিসগুলোতে টেলিটকের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং করা হবে। টেলিটক যেন কোন বেসরকারী মোবাইল কোম্পানির চেয়ে পিছিয়ে না থাকে সেটাই হবে আমাদের মূল কাজ। টেলিটক জানিয়েছে, সারাদেশে টেলিটকের মাত্র ৩ হাজার ৭শ’ বিটিএস বা টাওয়ার রয়েছে। অন্যন্যা মোবাইল কোম্পানির কয়েক গুণ বেশি টাওয়ার থাকায় তারা গ্রাহককে নেটওয়ার্ক সুবিধা বেশি দিতে পারছে। টেলিটক যদি বিটিসিএলের টাওয়ার ব্যবহার করতে পারে তাহলে সারাদেশে নেটওয়ার্ক সুবিধা অনেক বাড়বে। টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা বর্তমানে মাত্র ১২ লাখ। গ্রামীণফোনের গ্রাহক সাড়ে ৫ কোটির উপরে। বাংলালিংক, রবি, এয়ারটেলের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৬ কোটির বেশি। দেশে মোট মোবাইল গ্রাহক বর্তমানে ১১ কোটি ৭৬ লাখ। অভিযোগ রয়েছে টেলিটকের মার্কেটিং বা বিপণন দুর্বলতার কারণে সরকারী এই অপারেটরটি দিন দিন গ্রাহক হারাচ্ছে। সেবার মানও নিম্নমানের। কোথায় সেবা বাড়াতে হবে এ বিষয়ে জরিপ বা কোন গবেষণাও করা হয় না।
×