ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন থমকে আছে ১১ বছর

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২২ জুন ২০১৬

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন থমকে আছে ১১ বছর

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ কক্সবাজারে অনেকটা নীরবে পালিত হয়েছে (২০ জুন) বিশ্ব শরণার্থী দিবস। টেকনাফ ও উখিয়ায় দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে বর্তমানে প্রায় ৩৫ হাজার নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এছাড়া নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে অন্তত অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার ও পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্নস্থানে বসবাস করছে। গত ১১ বছর ধরে থমকে আছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজ। জানা যায়, ১৯৯১-১৯৯২ সালে মিয়ানমার হতে আসা প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ মিয়ানমারে ফিরে গেলেও বাংলাদেশে রয়ে যায় ত্রিশ হাজারেরও অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের এসব মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে শরণার্থী হিসেবে থাকলেও এখানে বিভিন্নভাবে অনুপ্রবেশ করেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে টেকনাফে লেদা, শামলাপুর ও উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় অনিবন্ধিত ক্যাম্প তৈরি করে বসবাস করছে ওরা। উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান নেয়া ত্রিশ হাজারেরও অধিক নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্কটে রয়েছে। তারা নাগরিকত্বহীন অবস্থায় বাংলাদেশের দুটি ক্যাম্পে অবস্থান করছে প্রায় ২৬ বছর। পাশাপাশি অন্য সময়ে মিয়ানমার হতে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভাগ্যে কি ঘটবে, তার হিসাব মেলাতে পারছে না কেউ। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৫ সালের ২৮ জুলাই পর্যন্ত দু’লাখ ৩৬ হাজার ৫৯৯ রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে যায়। এরপর বন্ধ থাকে প্রত্যাবাসন কাজ। এ ফাঁকে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে তৃতীয় দেশে পুনর্বাসিত করা হয় ৯২৬ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে। এর মধ্যে কানাডায় ৩০৯, যুক্তরাজ্যে, নিউজিল্যান্ডে ৫৬, যুক্তরাষ্ট্রে ২৪. নরওয়েতে ৪, আয়ারল্যান্ডে ৮২, সুইডেনে ১৯ ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৪২ জন। টেকনাফের নয়াপাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় দু’টি ক্যাম্পে বর্তমানে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৩১ হাজার ৭৫৯ জন। এর মধ্যে কুতুপালং এ ১৩ হাজার ৪৫ জন ও নয়াপাড়ায় ১৮ হাজার ৭১৪ জন। নয়াপাড়া ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার প্রশ্ন শেষ হয়ে গেলে দেশে চলে যাব আমরা। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তবে শরণার্থী জীবন ভাসমান জীবন, এভাবে যেন কেউ বেঁচে না থাকে- তার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ নেতা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র আসিফ মুনীর জানান, দু’দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতায় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হতে পারে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালের দিকে একটি কর্মকৌশল ঠিক করেছে। সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। হয়ত সে অনুযায়ী এগোচ্ছে সরকার। সচেতন মহল জানান, এখানে বেশিরভাগ অপকর্ম সংগঠিত করছে রোহিঙ্গারা। চোরাচালান, মানবপাচার ও মাদক বিশেষ করে ইয়াবা পাচারে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গারা।
×