ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ ॥ হেরে বিপাকে মোহামেডান

সুপার লীগে ভিক্টোরিয়া ও রূপগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৫ জুন ২০১৬

সুপার লীগে ভিক্টোরিয়া ও রূপগঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সমীকরণ ছিল এমন, জিতলেই সুপার লীগে। তিনদলের ক্ষেত্রেই বিষয়টি কাজে লাগত। এক ভিক্টোরিয়া। দুই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। তিন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। ভিক্টোরিয়া ও রূপগঞ্জ ঠিকই জিতল। ব্রাদার্সকে ১১২ রানে হারাল ভিক্টোরিয়া। শেখ জামালের বিপক্ষে ৭ উইকেটে জিতেছে রূপগঞ্জ। সুপার লীগেও উঠে গেল। কিন্তু মোহামেডান জিততে পারল না। মুশফিকের দল মাশরাফির কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের (কেসি) কাছে ৬ উইকেটে হারল। তাতে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ স্থানেই শুধু নেমে যায়নি মোহামেডান, সুপার লীগে ওঠার ক্ষেত্রে বিপাকেও পড়ে গেছে। মোহামেডানকে হারালেন তাসামুল, হাসানুজ্জামান, তানভির ॥ কি দুর্দান্ত প্রতাপে এগিয়ে যাচ্ছিল মোহামেডান। মনে হচ্ছিল সবার আগে সুপার লীগে খেলা নিশ্চিত করবে। অথচ এই দলটিই কিনা এখনও সুপার লীগে ওঠা নিশ্চিত করতে পারেনি। লীগ পর্বের আর একটি ম্যাচ রয়েছে। যদি সেই ম্যাচে হেরে যায়, তাহলে সুপার লীগে খেলাই অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। আরেকটি দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্র (কেসি)। যারা হারের গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে শুরুতে। এরপর ধীরে ধীরে মাশরাফির নেতৃত্বের ছোঁয়ায় এখন সুপার লীগে খেলার সম্ভাবনায় আছে। লীগ পর্বের শেষ ম্যাচে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির বিপক্ষে মুখোমুখি হবে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র। ওই ম্যাচটি জিতলেই চলতি মৌসুমের প্রিমিয়ার লীগের সেরা ছয় দলের একটি হয়ে যেতে পারে মাশরাফির কলাবাগান। কলাবাগানকে শনিবার সেই ভাল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে তাসামুল হক, হাসানুজ্জামান ও তানভির হায়দার। শুরুতে ভারতীয় ব্যাটসম্যান বিপুল শর্মার শতক ও মুশফিকের ৭৫ রানে জয়ের আশা জাগায় মোহামেডানকে। বিপুল, মুশফিকের নৈপুণ্যের জবাবে তাসামুল অপরাজিত ১২৬, হাসানুজ্জামান ৯৫ ও তানভির হায়দার অপরাজিত ৫২ রান করে কলাবাগানকে জিতিয়ে দেন। জয়ের জন্য শেষ দশ ওভারে কলাবাগানের প্রয়োজন ছিল ৬০ বলে ৩২ রান; হাতে ৬ উইকেট। খুব সহজেই ম্যাচটি জিতে নেয় কলাবাগান। ৪১ বল হাতে রেখে ৪ উইকেট হারিয়ে কঠিন লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা। আগে ব্যাটিং করা মোহামেডান নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রান সংগ্রহ করে। বিপুল ৮৬ বলে ১০০ এবং মুশফিক ৭১ বলে ৭৫ রান করেন। ২৯১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা হাসানুজ্জামান ৫৩ বলে ৯৫ রান করে আউট হন। তাসামুলের সঙ্গে ১৪০ রানের জুটি গড়েন। ৪টি চার ও ৮টি ছয়ে তিনি তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন। হাসানুজ্জামানের পর তাসামুল হক খেলেন অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস। শেষে তাসামুলের সঙ্গে ১২৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া ছাড়াও তানভীর হায়দার অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলেন। তাসামুল, হাসানুজ্জামান ও তানভিরের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই জিতে যায় কলাবাগান কেসি। পয়েন্ট তালিকায় ৫ জয়ে ১০ পয়েন্টও জমা হয়। মোহামেডানের ১২ পয়েন্টই থাকে। মজিদের শতকে জিতল ভিক্টোরিয়া ॥ কি দারুণ খেললেন আব্দুল মজিদ। ১১৮ রানের ইনিংস খেললেন। তার সঙ্গে ফজলে মাহমুদ রাব্বি ৭১ রান করলেন। দুইজন মিলে যে ওপেনিং জুটিতে ১৭০ রান করলেন, সেখানে ভিক্টোরিয়া এগিয়ে যায়। জয়ও তুলে নেয়। শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩০২ রান সংগ্রহ করে ভিক্টোরিয়া। জবাবে ৪৫.৩ ওভারে ১৯০ রানেই গুটিয়ে যায় ব্রাদার্সের ইনিংস। ভিক্টোরিয়ার দেয়া ৩০৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে ব্রাদার্স। দলীয় ৪৬ রানেই টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কায় পড়ে দলটি। দ্রুত সাজঘরে ফেরেন শাহরিয়ার নাফিস (১), ইমরুল কায়েস (৮), জাকির হাসান (৮), ইফতেখার সাজ্জাদ (২), সাদিকুর রহমান (৭), নুর আলম (০), মোহাম্মদ শহীদ (১)। তবে দলীয় ৯২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন হলে আসিফ হাসানকে নিয়ে জুটি গড়েন তুষার ইমরান। এই জুটি থেকে আসে ৯৭ রান। আসিফ হাসান করেন ২৩ রান। কিন্তু উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে একাই লড়ে যান ব্রাদার্স দলপতি তুষার ইমরান। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯৩ রান করেন তিনি। তার ১২৬ বলের ইনিংসে ছিল ১১টি চারের মার। এর আগে ভিক্টোরিয়ার দুই ওপেনার আবদুল মজিদ এবং ফজলে মাহমুদ স্কোর বোর্ডে ১৭০ রান তোলেন। ফজলে মাহমুদ ৭১ রান করে বিদায় নেন। তার ৯৮ বলের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারির মার। তবে ১১৭ বলে ১১টি বাউন্ডারি আর চারটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে আবদুল মজিদ ১১৮ রান করেন। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় শতক। মুমিনুল হক রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। আল আমিন করেন ৩৩ রান। এ ম্যাচ জয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ভিক্টোরিয়া সুপার লীগে খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে। ব্রাদার্স ৮ পয়েন্টেই পড়ে আছে। শেষ ম্যাচে যদি ১০ পয়েন্ট পাওয়া দল গাজী গ্রুপ, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, কলাবাগান ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব হারে, আর ব্রাদার্স বড় ব্যবধানে জিতে; তাহলে সুপার লীগে ওঠার সুযোগ থাকতেও পারে। রানরেট (Ñ০.৩৭৩) এতই কম যে সেই সুযোগ নাও ধরা দিতে পারে। নাহিদের নৈপুণ্যে সুপার লীগে রূপগঞ্জ ॥ কি কঠিন পরিস্থিতিতেই না পড়েছিল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। মোশাররফ হোসেন রুবেল ও মোঃ মিঠুনকে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জহরুল ইসলাম অমি ইনজুরিতে। এত কিছুর পরও শেখ জামালকে ঠিকই হারিয়ে দিয়েছে রূপগঞ্জ। নাহিদুল ইসলামের ৯২ রানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে তা সম্ভব হয়েছে। আগে ব্যাট করে শেখ জামাল ৩ উইকেট করে নেয়া তাইজুল ইসলাম ও মুরাদ খানের বোলিং নৈপুণ্যের সামনে ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায়। নাজমুস সাদাত সর্বোচ্চ ৪১ রান করতে পারেন। জবাবে ৩২.৫ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে জিতে যায় রূপগঞ্জ। নাহিদুল ৯২ রান করেন। তার সঙ্গে জুনায়েদ সিদ্দিকী অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন। এ জয়ে সুপার লীগে উঠে যায় রূপগঞ্জ। শেখ জামাল সেই সম্ভাবনাতেই থাকে। শেষ ম্যাচ জিতলে সুপার লীগে গেলেও যেতে পারে শেখ জামাল। স্কোর ॥ কলাবাগান কেসি-মোহামেডান ম্যাচÑ ফতুল্লা মোহামেডান ইনিংস ২৯০/৬; ৫০ ওভার (বিপুল ১০০, মুশফিক ৭৫, এজাজ ৩২; সাব্বির ৩/৭৭)। কলাবাগান কেসি ২৯১/৪; ৪৩.১ ওভার (তাসামুল ১২৬*, হাসানুজ্জামান ৯৫, তানভির ৫২*; নাঈম ২/৩৫)। ফল ॥ কলাবাগান কেসি ৬ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ তাসামুল হক (কলাবাগান ক্রীড়া চক্র)। ভিক্টোরিয়া-ব্রাদার্স ম্যাচÑ মিরপুর ভিক্টোরিয়া ইনিংস ৩০২/৯; ৫০ ওভার (মজিদ ১১৮, রাব্বি ৭১, আল আমিন ৩৩; নাবিল ৪/৫০)। ব্রাদার্স ইনিংস ১৯০/১০; ৪৫.৩ ওভার (তুষার ৯৩, আসিফ ২৩; রবিন ৩/৩৩)। ফল ॥ ভিক্টোরিয়া ১১২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আব্দুল মজিদ (ভিক্টোরিয়া)। রূপগঞ্জ-শেখ জামাল ম্যাচÑ বিকেএসপি শেখ জামাল ইনিংস ১৮৪/১০; ৪৫ ওভার (নাজমুস ৪১, মাহমুদুল্লাহ ৩৫, সোহাগ ৩১; তাইজুল ৩/২৯)। রূপগঞ্জ ইনিংস ১৮৫/৩; ৩২.৫ ওভার (নাহিদুল ৯২, জুনায়েদ ৫৩*, সৌম্য ২৯)। ফল ॥ রূপগঞ্জ ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ নাহিদুল ইসলাম (রূপগঞ্জ)।
×