ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফলের আপদ এড়াতে...

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২ জুন ২০১৬

ফলের আপদ এড়াতে...

হাসিনা সাঈদ কথায় আছে ‘খালি পেটে জল, ভরা পেটে ফল।‘ আর মধুমাস তো কথাই নেই। গ্রীষ্মপ্রধান আমাদের দেশে মধুমাস আসলে চারপাশে নানারকম বাহারি ফলের সমারোহ দেখা যায়, তা বলাই বাহুল্য। ফলের বাজারগুলোতে ঝাঁপি বোঝাই সুস্বাদু ফলে ম ম করতে থাকে। দেখে যেমন তৃপ্তি, তেমনি অন্তরে জাগে তুষ্টি! ছেলে-বুড়ো, নানা-নাতি, জামাই বা শ্বশুর একে অপরের জন্য যেমন মধুমাসের ফল কিনতে ভালবাসেন তেমনি পরিবারের সবাই একত্রে মিলে এর স্বাদ আস্বাদনে জুড়ি নেই। প্রত্যেক ফলেই আছে নানা পুষ্টি ও ঔষধিগুণ। মধুমাসের ফলগুলো যেমন আমে আছে প্রচুর ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ক্যালোরি। কাঁঠালে আছে প্রচুর শর্করা, আমিষ ও ক্যারোটিন। লিচুতে প্রচুর ভিটামিন সি ও খাদ্যশক্তি। জামে ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, লৌহ ও ক্যালসিয়াম। আনারসে ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম। তবে সংক্ষেপে এসব ফলের পুষ্টি ও ঔষধিগুণ বলে শেষ হবে না। এসব পুষ্টিগুণ থাকার ফলে রোগীর জন্য নির্ভরযোগ্য পথ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয় ফল। তথাপি আজকের দিনে নির্ভেজাল এসব পুষ্টিগুণ ও ঔষধি সমৃদ্ধ ফল বাজারে মেলা ভার। সন্তানসম্ভবা মায়েদের পরামর্শ দেয়া হয় ভিটামিন ও ক্যালরিযুক্ত ফল খেতে। কিন্তু তারা কি আজকাল সেভাবে নিরাপদ মনে করে ফল খেতে করতে পারছেন? সন্তান বিকলাঙ্গ বা অকালে ঝরে যাওয়ার ভয়ে মানুষ এখন এসব সুস্বাদু, পুষ্টিগুণসম্পন্ন ফল খেতে রীতিমতো সতর্কতা অবলম্বন করছেন। কারণ এখন ফলগুলোতে প্রচুর ক্ষতিকারক বিষক্রিয়া ও রাসায়নিক পদার্থ বিশেষ করে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ও ফরমালিন দিয়ে পরিপূর্ণ। এটা মোটামুটি এখন সবারই জানা। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল রং, প্যারাথিয়ন ইত্যাদি ব্যবহার করা হচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এসব ক্ষতিকারক বিষক্রিয়ার প্রভাবে হেপাটাইটিস-ই, হেপাটাইটিস-এ ইত্যাদি সংক্রমণ বাড়ছে। বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ ক্যান্সার, লিভার সিরোসিসসহ নানা জটিল রোগের। ‘পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়েছে যে, ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে! এছাড়া চর্মরোগ, মাথাব্যথা, খাদ্যে বিষক্রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি ফেলিউর প্রভৃতি বাড়ছে। এতদসত্ত্বেও আমরা বাঙালী। বাঙালী সংস্কৃতিতে মধুমাস এলে ধুম পড়ে যায় জামাই বাড়িতে ফল পাঠানোর। সুন্দরভাবে নানা রকমারি ফলে থালে সাজিয়ে জামাই বা বৌয়ের বাড়িতে ফল পাঠানোর রেওয়াজ এখনও বদলায়নি। নতুন জামাইকে নানারকম সুস্বাদু ফল খাওয়ানোর প্রবণতা এখনও চলছে, চলবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই। রোগীর উত্তম পথ্য হিসেবে ফলকেই প্রাধান্য দেয়া হয় সর্বক্ষেত্রেই। কাজেই এসব ফল বাজার থেকে আনার পর সঙ্গে সঙ্গে কুসুম গরম পানিতে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরে আবার স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে অন্তত আধঘণ্টা চুবিয়ে রেখে তারপর খাওয়া বাঞ্ছনীয়। কাজেই মধুমাসের এই মজাদার ফলগুলো কিভাবে ভেজালমুক্ত উপায়ে খাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া যুক্তিযুক্ত। তাছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমগুলো থেকেও তথ্য যাচাই-বাছাই করে ফল উত্তমরূপে খাওয়া সম্ভব। কাজেই, সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলে ফলের বিষক্রিয়া থেকে নিজেকে ও পরিবারকে মুক্ত রেখে নিরাপদ উপায়ে এসব ফল যুগোপযোগী করে খাওয়াই উত্তম। লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা থেকে
×