ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৮ মে ২০১৬

বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার

একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এদেশীয় সহযোগী জামায়াত কখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকবেÑ এটা জানা বিষয়। এই দলের নেতাদের মন্ত্রী বানানোর ফলে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকাটি দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে তাদের ধারণার অতীত ছিল স্বাধীনতার এত বছর পর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হবে। এটাও তাদের কল্পনাতে ছিল না যে, ঘাতক দালালদের বিচার হবে শাস্তি হবে। জাতি হিসেবে বাঙালীর ইতিহাসের দায়মুক্তি ঘটছে একের পর এক নরঘাতকদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে। নিজেদের লোকদের বাঁচানোর জন্য বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশবিরোধী প্রচারে অংশ নিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারেনি এবার। তারা ভেবেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী’ অপরাধের অভিযোগ তুলে সুফল পাবে। তাদের সে আশায় গুঁড়েবালি। সম্প্রতি হেগে হেরেছে তারা। বিএনপি-জামায়াতের ভিত্তিহীন ও মিথ্যা অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালত নাকচ করে দিয়েছে। সম্প্রতি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে, যুক্তরাজ্যের একজন পার্লামেন্ট সদস্য এবং একটি পত্রিকা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকার সম্বন্ধে যে ধরনের মন্তব্য ও অভিমত প্রকাশ করছে তা বিএনপি-জামায়াতের বক্তব্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। এর ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে শঙ্কা জাগে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে মঙ্গলবার ইউরোপ, মানবাধিকার এবং দেশ-বিদেশে মানুষকে নিরাপদ রাখা শীর্ষক বিতর্কে উঠে আসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। লেবার পার্টি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র এমপি সায়মন ডানস্যুক বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপ করা কেন জরুরী, সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, ওই এমপি বিএনপির কাউন্সিলে আমন্ত্রিত হয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। অপরদিকে সাপ্তাহিক দি ইকোনমিস্ট পত্রিকার ছদ্মনামধারী এক কলামিস্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত আপত্তিকর অভিমত প্রকাশ করেছেন। তার কলামের শিরোনাম এমনÑ ‘ঢাকার স্বেচ্ছাচারÑ বাংলাদেশ স্বৈরতন্ত্রের সহচর!’ অর্থনীতির সব সূচক যখন ভাল অবস্থানে রয়েছে, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে, এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ; তখন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম নষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বাংলাদেশবিরোধী একটি চিহ্নিত মহল। বাংলাদেশ অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। এই দেশটির ললাটে কারা এঁটে দিতে চায় জঙ্গীরাষ্ট্রের তকমা? একনায়কতন্ত্রের অপবাদ! বলাবাহুল্য, যারা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেয়ার প্রয়াসী, যারা দেশটির অগ্রযাত্রায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে, যারা চায় না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কালিমামুক্ত হোক; যারা চায় না দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক, অর্থনীতির পালে লাগুক হাওয়া, গরিব মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে সুখে-শান্তিতে দিনাতিপাত করুকÑ সেই প্রতিক্রিয়াশীল, স্বাধীনতাবিরোধী, গণতন্ত্র নস্যাৎকারী চক্রই আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টের চেষ্টায় লিপ্ত। তারাই দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। এদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরী। প্রতিটি অপপ্রচারেরও যুক্তিনিষ্ঠ যথাযোগ্য জবাব দেয়া প্রয়োজন, যাতে ওইসব প্রয়াসের প্রভাবে ভুল বোঝাবুঝি না বাড়ে। এজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় উদ্যোগ কাম্য। সেই সঙ্গে দেশপ্রেমিক লেখক-কলামিস্টদের এসব মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে লেখনী জোরদার করার প্রয়োজন রয়েছে।
×