ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতা চাইবেন না

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২২ মে ২০১৬

স্বাধীনতা চাইবেন না

চীন তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে মূল চীনা ভূখ- থেকে তাইওয়ানের স্বাধীন হতে চাওয়ার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। চীনের কড়া সমালোচক সাই শুক্রবার ক্ষমতা হাতে নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষা করা এবং যুক্তারাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এর পরই চীন ঐ সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছে যে, ‘এক চীন নীতি’, অন্যান্য দেশের সঙ্গে এর সম্পর্কের মূলস্তম্ভ। খবর পিটিআই’র সাই (৫৯) তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শুক্রবার তাইপেতে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির প্রধান। এ দল তাইওয়ানের স্বাধীনতার সমর্থক। শপথ নেয়ার পর সাই তার ভাষণে বলেন, আবারও একবার তাইওয়ানের জনগণ তাদের কাজের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, এক স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক জাতি হিসেবে আমরা এক জীবনধারা হিসেবে আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক প্রসঙ্গে দ্বীপটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট সাই বলেন, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশের ভূখ-ের মধ্যকার সম্পর্কের স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি অতীতের তিক্ততা ভুলে গিয়ে উভয় পক্ষের জনগণের কল্যাণের জন্য ইতিবাচক আলোচনায় জড়িত হতে উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাই তার ভাষণে যা বলেছেন, তাতে বেজিং সন্তুষ্ট হবে বলে সম্ভাবনা দেখা যায় না। বেজিং মূল ভূখ-ের সঙ্গে দ্বীপটির পুনরেকত্রীকরণ নিয়ে আলোচনার অবকাশ নেই বলে মনে করে। দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় বেজিং চায় তাইওয়ান ঐ সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী দাবিদারদের সঙ্গে যোগ না দিয়ে চীনেরই মিত্র হোক। সাই শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর চীনের তাইওয়ান বিষয়ক দফতর থেকে বলা হয়, যদি স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করা হয়, তা হলে তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। স্বাধীনতা তাইওয়ান প্রণালীতে শান্তির উন্নয়নের জন্য এবং প্রণালীর দু’পাশের ভূখ-ের সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। সাইয়ের শপথ গ্রহণের ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুন ইং বলেন, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, ‘এক চীন নীতি’ বিশ্বে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং এ নীতি অন্যান্য দেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ও পূর্বশর্ত। তাইওয়ানে যে-কোন ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনই ঘটুক না কেন, চীনা সরকার এক চীন নীতিতে অবিচল থাকবে এবং তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিরোধিতা করবে। হুয়া সাইয়ের বিরুদ্ধে কোন সমালোচনামূলক মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকেন। তবে তিনি তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করে এর পরিচিতি বাড়াতে সাইয়ের এ সন্তব্যের প্রতি সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানান। বেজিং যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানকে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে থাকে। মুখপাত্র বলেন, তাইওয়ান ও অন্যান্য দেশের মধ্যেকার বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়ে বলতে গেলে, এক চীন নীতি চীন ও অন্যান্য দেশের মধ্যকার সম্পর্কের এক ভিত্তি ও পূর্বশর্ত। অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাইওয়ানের বেসরকারী পর্যায়ে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আমাদের কোন আপত্তি নেই। আমরা তাইওয়ানের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সরকারী চুক্তি স্বাক্ষরের বিরোধী বাণিজ্য সম্পর্কিত যে-কোন বন্দোবস্তের ক্ষেত্রে তা নিয়ে দু’ভূখ-ের মধ্যে বাস্তবসম্মত সহযোগিতার মাধ্যমে আলোচনা হওয়া উচিত। সাই সদ্যবিদায়ী প্রেসিডেন্ট মা ইং-জেওউর বেজিং বান্ধব নীতির তীব্র বিরোধিতা করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ক্ষমতায় আসায় তাইওয়ান প্রণালীর দু’পাশের ভূখ-ের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ভবিষ্যত পথ নিয়ে চীনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। চীন ও তাইওয়ান ১৯৪৯ সালে বিভক্ত হয়। কিন্তু বেজিং সব সময়েই ঐ দ্বীপকে এক বিদ্রোহী প্রদেশ হিসেবে দেখে থাকে এবং এর পুনরেকত্রীকরণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।
×