ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া কাস্টমস কমিশনার ও তার ছেলে র‌্যাবের হাতে আটক

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১০ মে ২০১৬

ভুয়া কাস্টমস কমিশনার ও তার ছেলে র‌্যাবের হাতে আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে ভুয়া কাস্টমস কমিশনার হাফিজুর রহমান খান (৭০) ও তার ছেলে বিপ্লব রহমান খানকে (৩৪) গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি দামী গাড়ি আটক করা হয়। র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শোয়াইব জানান, গ্রেফতারকৃত হাফিজুর রহমান খান কাস্টমস অফিসার পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে লোকজনকে প্রতারণা করে আসছিলেন। এই কাজে তার চার পুত্র-কন্যা সহযোগী ছিল। খান ইন্টারন্যাশনাল নামের প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তারা কিছুদিনের মধ্যে ৮ কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। তিনি জানান, বয়োবৃদ্ধ হাফিজ নিজেকে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও পরিচয় দেন। তিনি লোকজনকে পোর্টে কাস্টমস জটিলতায় আটকে থাকা বিলাসবহুল গাড়িসহ আমদানি নিষিদ্ধ মাল ছাড়িয়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রয়োজনে তিনি তার ‘মক্কেলদের’ প্লেনে করে আনা-নেয়া করতেন। রাখতেন রেডিসনের মতো হোটেলে। প্রতারক হাফিজুর রহমান ১৮ জনকে প্রতারিত করে ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আটক এই প্রতারকচক্র গত কয়েক বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় খান ইন্টারন্যাশনাল নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। যার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পদে আছে তার বড় ছেলে মোঃ মিথুন খান। ডাইরেক্টর পদে তামিম খান (শাকিল) (উভয়েই পলাতক)। সব সময় তারা দামী অফিস, বাসা এবং গাড়ি ব্যবহার করত। ক্লায়েন্টদের অভিজাত হোটেলে নিয়ে ব্যবসায়িক মিটিং করত এবং তাদের নানা উপলক্ষে উপহার দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতত। র‌্যাব জানায়, আটক হাফিজুর সশস্ত্র দেহরক্ষী বা গান ম্যান রাখতেন। ক্লায়েন্টদের চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর হতে নিলামের গাড়ি স্বল্পমূল্যে কিনে দেয়ার লোভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই প্রতারণার কাজে চার সন্তানসহ পুরো পরিবার জড়িত। মূলত তার এই প্রতারণামূলক কর্মকা- রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকা উত্তরা, গুলশান, বারিধারা, ডিওএইচএস এবং সর্বশেষ ধানম-ি এলাকাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। তার ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের পর্দা, আসবাবপত্র, গাড়ি সব কিছুই প্রতারণার মাধ্যমে যোগাড় করা। প্রতারক হাফিজ দিনে দিনে হয়ে উঠেছিলেন অপ্রতিরোধ্য। একের পর এক ক্লায়েন্টকে ঠকিয়ে ঠিকানা পরিবর্তন করতেন। গাড়ি ক্রেতাদের চট্টগ্রাম বন্দর বা মংলা বন্দরের ভেতরে নিয়ে বিভিন্ন গাড়ি দেখাতেন। রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলে তাদের রাখতেন। তাদের গমনাগমনের জন্য প্লেনের টিকেট সবরাহ করতেন। প্রতারক হাফিজুর রহমান খান তিনটি বিয়ে করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তিনি তার প্রতারণার টাকা তার সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রেখেছেন। জমিও ক্রয় করেছেন। প্রতারিত জনৈক আতিকুর রহমান জানান, হাফিজুর রহমান খান ও তার ছেলে বিপ্লব রহমান খান কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বন্দর থেকে গাড়ি ছাড় করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর তাদের নিয়ে বিভিন্ন নামীদামী হোটেলে মিটিং করে আস্থা অর্জন করতেন। এরপর টাকা নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা করতেন। র‌্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক মেজর শোয়াইব জানান, আটক হাফিজুর রহমান খুবই ধুরন্ধর। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ পেয়ে র‌্যাব অভিযানে নামে। এদের সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চক্রের বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
×