ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার জাহাজ মালিকদের ধর্মঘট

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

এবার জাহাজ মালিকদের ধর্মঘট

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহন ও চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে অচলাবস্থার ৮ দিন অতিবাহিত হয়েছে বৃহস্পতিবার। প্রথম ৬ দিন নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট, এরপর শুরু হয়েছে কার্যত জাহাজ মালিকদের ধর্মঘট। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত নৌযান শ্রমিকদের আশ্বস্ত করা হয়েছে নতুন মজুরি কাঠামোর সিদ্ধান্তে। এতে শ্রমিকরা কর্মসূচী প্রত্যাহার করলেও বেঁকে বসেছেন মালিকরা। তাদের অভিমত, মজুরি যে হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে জাহাজ পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। ফলে জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দেশের নৌযান সেক্টরে। এদিকে, অভ্যন্তরীণ জলপথে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের বাজার ঘিরে দেখা দিয়েছে এক ধরনের উৎকণ্ঠা। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে বৃহস্পতিবার অপেক্ষমাণ ছিল ৬০টির অধিক বড় জাহাজ। এ সকল জাহাজে রয়েছে গম, চিনি, ইউরিয়া সার, সিমেন্ট ক্লিংকার্সসহ বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য। লাইটার জাহাজ বন্ধ থাকায় পণ্য ওঠানামও বন্ধ রয়েছে। দিনের পর দিন বন্ধ থাকায় দীর্ঘতর হচ্ছে জাহাজের সারি। এ অচলাবস্থা নিরসনে উল্লেখ করার মতো উদ্যোগ ও তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। ফলে আমদানিকারকদের উৎকণ্ঠা যেমন বাড়ছে, তেমনি প্রভাব পড়ছে ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে। বিশেষ করে রমজানকে সামনে রেখে এক ধরনের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আলামত বেশ জোরালো হচ্ছে। ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের কো-কনভেনর খোরশেদ আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বুধবার জাহাজ মালিকরা এ বিষয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে অধিকাংশ মালিকই জাহাজ পরিচালনা করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বন্দর বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধই রয়েছে। কিছু জাহাজ চলাচল করলেও তা এতটাই সীমিত পরিসরে যে, জলপথ চালু রয়েছে বলা যাবে না। মংলা বন্দর সচল হলে চট্টগ্রাম বন্দরে নয় কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নৌমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে বৈঠক হয়েছে তাতে মজুরির বিষয়ে প্রস্তাবনা এলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ১০ দিন সময়ের কথা উল্লেখ আছে। খুলনা অঞ্চলের জাহাজ মালিকরা সেই দশ দিন অপেক্ষা করতে চান। যদি মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রতিকূল থেকে যায় তাহলে তারাও জাহাজ পরিচালনা বন্ধ করে দেবেন। কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েসনের এক নেতা জানান, মন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অনেকটা একতরফা সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। সেখানে মালিক পক্ষের বক্তব্যগুলো যথাযথভাবে বিবেচিত হয়নি। ফলে মালিকদের একটি বড় অংশ সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাহাজ চালাতে রাজি নন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি বর্তমান অচলাবস্থার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রাম ও ধর্মঘট অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। কিন্তু মালিকরা যেভাবে ধর্মঘটে গেলেন তা অনেকটাই নজিরবিহীন। তিনি বলেন, রমজান মাস সন্নিকটে। এ সময়ে অভ্যন্তরীণ জলপথে জাহাজ চলাচল ও বহির্নোঙ্গরে পণ্য লাইটারিং বন্ধ থাকলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। কেননা, সুযোগসন্ধানীরা সব সময়ই বাড়তি মুনাফার ধান্ধায় থাকে। তিনি বলেন, জাহাজগুলো কার্গোবোঝাই অবস্থায় অলস ভাসমান থাকবে তা হয় না। মালিকরা যদি এমন কর্মসূচী চালাতেই চান, তবে পণ্য খালাস করে খালি জাহাজ বন্ধ রেখে করতে পারেন। আমদানিকারকদের পণ্য নিয়ে ভাসমান থাকলে তা অনেকটা জিম্মি করার পর্যায়ে পড়ে। সঙ্কটের সমাধান কিভাবে হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে সজাগ রয়েছি। এদিকে, জাহাজের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও অনেক মালিক জাহাজ চালানোর পক্ষেও রয়েছেন। তাদের মতে, যেভাবে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা এক ধরনের জিম্মি করার মতোই। কার্গো ভেসেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েসনের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি চাই না চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙ্গর অচল থাকুক। মালিকরা জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যেতে পারে। বহির্নোঙ্গরকেন্দ্রিক প্রায় ১১শ’ জাহাজ রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকদের মজুরি যেমন বাড়ার প্রয়োজন রয়েছে, তেমনিভাবে এই বৃদ্ধির কারণে জাহাজ পরিচালনার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। এদিকে, মজুরি বৃৃদ্ধিতে জাহাজের পরিচালন ব্যয় যেটুকু বাড়বে তা পণ্য পরিবহন ভাড়া বাড়িয়ে পুষিয়ে নেয়া যায় কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে জাহাজ মালিকদের সংগঠনের এক নেতা বলেন, বর্তমানে প্রতিটন পণ্য পরিবহন ভাড়া নির্ধারিত আছে ৪৮৮ টাকায়। ভাড়া বাড়িয়ে বাড়তি খরচ মেটানো সম্ভব হলেও বড় ধরনের একটি সমস্যা রয়ে গেছে। আর সেটি হলো ভারত-বাংলাদেশ রুটে (প্রটোকল রুট) বেশকিছু জাহাজ রয়েছে যেগুলোর পণ্য পরিবহন ভাড়া একইসঙ্গে বৃদ্ধি করা সম্ভব না। কারণ প্রতি দু’বছর পর পর এই জাহাজগুলোর ভাড়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। যদি এ্যাসোসিয়েসনের আওতাধীন জাহাজের ভাড়া ওগুলোর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তাহলে প্রতিযোগিতায় আমরা পেরে উঠব না। তাতেও জাহাজ পরিচালনায় বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে। জাহাজ মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের মজুরি ক ক্যাটাগরিতে সাড়ে ৭ হাজার, খ ক্যাটাগরিতে সাড়ে ৬ হাজার ও গ ক্যাটারিতে সাড়ে ৫ হাজার প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রীর উপস্থিতি বৈঠকে যথাক্রমে ১০ হাজার, সাড়ে ৯ হাজার ও ৯ হাজার টাকা মজুরির সিদ্ধান্ত হয়।
×