ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বই ॥ জলের দহন

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৯ এপ্রিল ২০১৬

বই ॥ জলের দহন

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৬ উপলক্ষে ঢাকার বিশিষ্ট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান দেশ পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে কবি লুৎফুন নাহার রহমানের দ্বিতীয় কাব্য ‘জলের দহন’। তাঁর প্রথম কাব্য ‘আমিই হেলেন’। তাঁর প্রকাশিত অপর দুটি গ্রন্থ হলো যৌথ কাব্য সঙ্কলন ‘হংস মিথুন’ ও উপন্যাস ‘মেঘের চোখে জল’। তিতাস পাড়ের মেয়ে এই কবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে উচ্চশিক্ষা লাভ করা সত্ত্বেও কূটনীতিক হওয়ার পরিবর্তে হয়েছেন একজন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা। তাঁর লেখা কবিতা ও ছড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, লিটল ম্যাগাজিন ও অনলাইন মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ‘জলের দহন’ কবির স্বতন্ত্র কাব্যশৈলী, বৌদ্ধিকতা ও সংবেদের মিশেলে এক নান্দনিক কাব্য-কৃতি। শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের আঁকা প্রচ্ছদ, সুশোভন বাঁধাই ও সুন্দর কাগজে ঝকঝকে ছাপা নিয়ে প্রকাশিত এই চৌষট্টি পৃষ্ঠার বইটিতে মোট পঞ্চান্নটি কবিতা স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন কবিতায় কবির বিশেষ যুগযন্ত্রণাবোধের উৎসারণ লক্ষ্য করা যায়। কাব্যটির একটি বড় অংশ জুড়ে কবি সামাজিক শান্তি-স্বস্তির চেতনা এবং মানব-কল্যাণ ও পরিবেশ-হিতৈষণার অভীপ্সায় সময়ের দুর্দশার নানা চিত্র এঁকেছেন। সমকালে বিরাজমান লোভ-লালসা, হিংসা-সন্ত্রাস, আধিপত্যবাদ, স্বার্থপরতা, শোষণ-নিপীড়ন, নারী-নিবর্তন, পরিবেশ-দূষণ ও অব্যবস্থাপনার শিকার নগরজীবনের নানা সমস্যার কথা তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে। সে সাথে দুর্দশা ও অপঘাতে জর্জরিত মানুষদের জন্য কবির অন্তর থেকে নিঃসৃত হয়েছে গভীর সহমর্মিতা এবং এসব থেকে মুক্তির প্রত্যাশায় দ্রোহ। মানুষের মাঝে পশুশক্তির বিস্তার, হননবিলাসী মদমত্ততা ও ভালোবাসার ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে উন্মত্থিত হয়েছে তাঁর ঘৃণা ও প্রতিবাদ। তিনি হিংসা-বিদ্বেষ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আহত সভ্যতার মানবিক চিকিৎসা ও সুসভ্য প্রজন্ম গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন। মানুষের সুস্থ, সুন্দর ও নির্বিঘœ জীবন তাঁর আরাধ্য। তাঁর চোখে ভাসে মানবিকতার রশ্মিতে আলোকিত বৈষম্যহীন ও নিঃসীম এক আগামী পৃথিবী। কবি লুৎফুন নাহার রহমানের এ কাব্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি ঘুরে ফিরে এসেছে তা হলো নাগরিক পরিবেশ বিনষ্টি ও নগরের মানুষের সমস্যার নানা দিক। এটি যে ঢাকা নগরীরই বর্তমান দুঃসহ জীবন ও পরিবেশের বাস্তব পরিবেশ তা বুঝতে অসুবিধে হয় না। লোডশেডিং, যানজট, দূষণ, গুম-খুন -এ সব দ্বারা বিপর্যস্ত এই নগরীর মানুষদের নিরাপত্তাহীন ও অস্বস্তিকর জীবনের কথাই উঠে এসেছে তাঁর কবিতায়। সে সাথে নগরীর একশ্রেণীর বিত্তবান মানুষের বিলাসী জীবনচর্চার পাশাপাশি এখানকার মধ্যবিত্তের আর্থিক অনটন ও বুভুক্ষু মানুষদের অনিঃশেষ ক্লেশ ও কষ্টের কথাও। কাব্যটিতে কিছু প্রেমের কবিতাও স্থান পেয়েছে। দয়িতকে পাবার অধীরতা ও তাকে নিয়ে সুখী জীবননির্বাহ করার প্রত্যাশা ফুটে উঠেছে একাধিক কবিতায়। দয়িতকে সাথে নিয়ে এক প্রফুল প্রেমের গোল্লাছুটে উদ্দাম গতিতে ছুটতে চান কবি, অনন্ত দূর চলে যেতে চান তার হাত ধরে এবং দেখতে চান কে হারে কে যেতে। কবি লুৎফুন নাহার রহমান ভারি সুন্দর চিত্রকল্প আঁকতে পারেন। নিসর্গ, নগর ও জীবনের নানা ক্ষেত্র থেকে তিনি তাঁর কবিতার ছবি আহরণ করেছেন। তাঁর চিত্রকল্পগুলো একই সাথে বুদ্ধিদীপ্ত ও আবেগসঞ্চারী। তাঁর ভাষা প্রবহমান গদ্য। সুচয়িত শব্দাবলীর গাঢ়বদ্ধ বুনটেও সে ভাষা বিন্দুমাত্র সাবলীলতা হারায়নি। এই জীবনঘনিষ্ঠ কাব্যটি পাঠকপ্রিয় হোক -এটাই প্রত্যাশা। গ্রন্থ পরিচিতি : ‘জলের দহন’ (কাব্য)। লেখক : লুৎফুন নাহার রহমান। প্রকাশক : দেশ পাবলিকেশন্স, নাহার প্লাজা (৩য় তলা), ৩২৭-৩২৮ হাতিরপুল, ঢাকা -১০০০। প্রচ্ছদ শিল্পী-মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য : ১৪০ টাকা। আবুল কাইয়ুম
×