ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিন্স রজার্স নেলসনের মৃত্যুতে বিশ্বসঙ্গীতাঙ্গনে শোক

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

প্রিন্স রজার্স নেলসনের মৃত্যুতে বিশ্বসঙ্গীতাঙ্গনে শোক

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ চলে গেলেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও প্রশংসিত পপ সুপারস্টার প্রিন্স। তার মৃত্যুতে বিশ্বের অত্যন্ত প্রভাবশালী সঙ্গীতশিল্পীকে হারাল পৃথিবী। বৃহস্পতিবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় পেইসলি পার্কের নিজের বাড়ির স্টুডিও কমপ্লেক্সের একটি লিফটে এই শিল্পীকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তার মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন বিশ্ব সঙ্গীতাঙ্গনর মানুষের পাশাপাশি বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক শোকবার্তায় বলেছেন, বিশ্ব অনন্য এক সৃজনশীল শিল্পীকে হারাল। বৃহস্পতিবার পেইসলি পার্ক স্টুডিওসের পুলিশকে খবর দেয়া হয়। তারা এসে লিফটে প্রিন্সের মৃতদেহ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন কার্ভার কাউন্টি শেরিফ জিম ওলসন। এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। প্রিন্সের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, গভীর বিষন্নতা নিয়ে বলতে হচ্ছে, কিংবদন্তি অনন্য শিল্পী প্রিন্স রজার্স নেলসন আর নেই। এ খবর পেয়ে শত শত ভক্ত পেইসলি পার্কের বাইরে ভিড় করেন। নবীন-প্রবীণ শিল্পীরাও শোক-শ্রদ্ধা জানিয়ে যাচ্ছেন। প্রিন্সের সঙ্গে এক সময় প্রেমের সম্পর্ক থাকা পপসম্রাজ্ঞী ম্যাডোনা তাকে স্বপ্নপ্রবণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি বিশ্ব সঙ্গীতের অবয়ব বদলে দিয়েছেন। গায়ক জাস্টিন টিম্বারলেক বলেন, আমি স্তম্ভিত-স্তব্ধ, বিশ্বাস হচ্ছে না। লায়োনেল রিচিও খবরটা বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার কথায়, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। প্রিন্সের সঙ্গে কত সুন্দর স্মৃতিই না আছে আমার। রোলিং স্টোনস ব্যান্ডের মিক জ্যাগারের মতে, প্রিন্সের প্রতিভা ছিল অসীম। প্রয়াত তারকাকে বিপ্লবী শিল্পী, মহান সুরকার ও বিস্ময়কর গীতিকার হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি। গিটারশিল্পী সø্যাশ বলেন, প্রিন্স ছিলেন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সেরা প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পীদের অন্যতম। সম্ভবত বিংশ শতাব্দীর সেরা। গায়িকা এ্যারেথা ফ্র্যাঙ্কলিন বলেছেন, এই মৃত্যু আকস্মিক আঘাতের মতো। সত্যিই পরাবাস্তব ব্যাপার মনে হচ্ছে। অনেক অবিশ্বাস্য ব্যাপার। প্রিন্স অবশ্যই অতুলনীয় ছিলেন। সত্যিই প্রিন্স একজনই। গায়ক বয় জর্জ বলেন, সবচেয়ে খারাপ দিন আজ (বৃহস্পতিবার)। প্রিন্স শান্তিতে থাকো। আমি কাঁদছি। সঙ্গীতশিল্পী-অভিনেতা ওয়াইক্লেফ জিয়ান বলেন, শান্তিতে থাকুন রাজা প্রিন্স। সঙ্গীতশিল্পী হতে আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ধন্যবাদ। প্রিন্সের জন্ম ১৯৫৮ সালে। অল্প বয়স থেকেই দেদার লিখেছেন ও গেয়েছেন তিনি। প্রথম গান লেখেন সাত বছর বয়সে। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীতায়োজক। বাজাতে পারতেন অনেক বাদ্যযন্ত্র। তার মোট ৩৯টি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। আশির দশকে আন্তর্জাতিক সুপারস্টার হয়ে ওঠেন প্রিন্স। ‘১৯৯৯’, ‘পার্পল রেইন’, ‘সাইন ও’ দ্য টাইমস’ এ্যালবামগুলোর সুবাদে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পান তিনি। তার অভিনব সঙ্গীতের প্রসার হয়েছে রক, ফাঙ্ক ও জ্যাজে। সাতটি গ্র্যামিজয়ী এই শিল্পীর সঙ্গীত জীবনে তার গানের ১০ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি গান হলোÑ ‘লেটস গো ক্রেজি’ ও ‘হোয়েন ডোভস ক্রাই’। ৩৫ বছরের সঙ্গীতজীবনে রক, ফাংক, জ্যজের জগতে প্রিন্সের উদ্ভাবনী বিচরণ ভক্ত-শ্রোতাদের দিয়েছে অসংখ্য এ্যালবাম। ১৯৮৪ সালে ‘পার্পল রেইন’ চলচ্চিত্রের গানের জন্য অস্কার এবং ২০০৭ সালে ‘হ্যাপি ফিট’ এর ‘সং অব দ্য হার্ট’ গানটির জন্য গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন প্রিন্স। প্রিন্সের জন্য গান লেখা ছিল চিরতাড়না, অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা ও একই সঙ্গে আনন্দময়। ১৯৯২ সালে ‘ডায়মন্ডস এ্যান্ড পার্লস’ ট্যুরের সময় সঙ্গীতচর্চা নিয়ে তিনি বলেছিলেন, কোন দৈব ঘটনা নয়, প্রয়োজনীয়তার জন্যই তৈরি হয় গান। এটা জীবনের অংশ, অনেকটা নিঃশ্বাস নেয়ার মতো। প্রায় এক হাজার গান গেয়েছিলেন প্রিন্স। এর বেশিরভাগই পেইসলি পার্কে তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রিন্সের গানের মধ্যে ৫০ কিংবা ১০০ তালিকা তৈরি অসম্ভব ব্যাপার। জনপ্রিয়তার নিরিখে সঙ্গীত জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬টি গানের তালিকা করেছে বিবিসি। এগুলো হলোÑ সফট এ্যান্ড ওয়েট (ফর ইউ, ১৯৭৮), ডার্টি মাইন্ড (ডার্টি মাইন্ড, ১৯৮০), লিটল রেড কর্ভেট (১৯৯৯, ১৯৮২), হোয়েন ডোভস ক্রাই (পার্পল রেইন, ১৯৮৪), ইরোটিক সিটি (লেটস গো ক্রেজি, ১৯৮৪), কিস (প্যারেড, ১৯৮৬), সামটাইমস ইট স্নোস ইন এপ্রিল (প্যারেড, ১৯৮৬), ক্রিস্টাল বল (ক্রিস্টাল বল, ১৯৮৬/১৯৯৮), ইউ গট দ্য লুক (সাইন ও’ দ্য টাইমস, ১৯৮৭), ইফ আই ওয়াজ ইওর গার্লফ্রেন্ড (সাইন ও’ দ্য টাইমস, ১৯৮৭), এ্যালফাবেট স্ট্রিট (লাভসেক্সি, ১৯৮৮), জয় ইন রিপিটিশন ( গ্রাফিটি ব্রুজ, ১৯৯০), গেট অফ (ডায়মন্ডস এ্যান্ড পার্লস, ১৯৯২), সেভেন (লাভ সিম্বল, ১৯৯৩), ব্ল্যাক সোয়েট (১১২১, ২০০৬) ও ব্রেকডাউন (আর্ট অফিসিয়াল এজ, ২০১৪)।
×