ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে শতাধিক মন্দিরের বেহাল দশা

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

চাঁপাইয়ে শতাধিক মন্দিরের বেহাল দশা

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারের অভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকাসহ সংলগ্ন ইউনিয়নসমূহে প্রায় ২৫০টি পূজাম-প প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। পার্বন আসলেই শহরজুড়ে ৫৪টি মন্দিরে সরকারীভাবে কিছু গম বা চাল বরাদ্দ হলেও মন্দির বা পূজাম-প সংস্কারের কোন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। যদি এসব বরাদ্দ খাদ্যশষ্য নিয়ে নানান ধরনের অপচয় বা দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও মহল্লা সংলগ্ন ভক্ত অনুরাগীদের তেমন কোন ভূমিকা না থাকায় এই সুযোগের সৃষ্টি হয়। দেশ বিভাগের পর থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা পর্যন্ত এসব মন্দির বা পূজাম-পের সম্পত্তি নিয়ে এক ধরনের লুটপাট হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৫ বছরে অনেক স্থানের পূজাম-প বা মন্দির সম্পত্তি নিয়ে অনেক ধরনের দখলবাজ দস্যুতা হয়েছে। নতুবা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মামলা মোকদ্দমা রুজু করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে স্থিতি অবস্থা সৃষ্টি করে দখলদারিত্বের বিভিন্ন কায়দা অনুসরণ করে ভোগদখল করছে একশ্রেণীর মানুষ। অনেক স্থানের মন্দির বা পূজাম-পের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে অতীত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তেমনি একটি অবহেলিত পূজাম-ব বা মন্দির চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রাণ কেন্দ্র পুরান বাজার যার অবস্থান। কয়েক শতক বা ২ থেকে তিন কাঠার মাটির ওপর ঐতিহ্যবাহী ‘বুড়া কালিতলা পূজা মন্দির’। বিশাল উঁচু ভবন ও সামনে ফাঁকা জায়গা রয়েছে এই মন্দিরে। বাজার দর হিসাবে এই স্থানের মাটির দাম বর্তমান বাজার দরে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। মন্দিরে পেছন ও পার্শ্বের বহু জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। মূল পাকা ভবনের এক অংশ ইতোমধ্যেই ভেঙ্গে পড়েছে। এই মন্দিরটি বুড়া কালিমন্দির হিসেবে পুরো জেলাজুড়ে পরিচিত। এখানে সবচেয়ে বড় ও উঁচু কালিমাতার মূর্তি তৈরি করে পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে। যার কারণে এটাকে অনেকে বুড়া কালিমন্দির বলে থাকে। কিন্তু বহু বছর মন্দিরের কোন সংস্কার করা হয় না। এক অংশ ছাদসহ ধসে পড়লেও মূল ভবনে এখনও সবচেয়ে বড় কালিমূর্তি উঠানো হয়ে থাকে। ভক্তরা এখানে আসতে এখন ভয় পেয়ে থাকে। কারণ যে কোন সময় ভবন ভেঙ্গে পড়ে প্রাণহানি হতে পারে। এ ছাড়াও পৌরসভার সামনে প্রতাপচন্দ্র দাস দুর্গাপূজা মন্দির রয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে এর অবস্থান। জমির মূল্য কয়েক কোটি টাকা হবে। এখানেও ভূমিদস্যুদের নজর পড়ায় মামলা মোকদ্দমা হাইকোর্ট পর্যন্ত রয়েছে। এর পাশাপাশি নবাবগঞ্জ সার্বজনীন দুর্গাপূজা মন্দির, গুড়িপাড়া কালিমন্দির, পাশ্চিমপাড়া কালিমন্দির, অগ্নিসংঘ কালিমন্দির, জোড়ামঠ শিবমন্দির, অগ্নিশিখা সংঘ কালিমন্দির, শ্রী শ্রী গঙ্গামাতা মন্দির, কর্মকার পাড়া দুর্গামন্দির, শিবতলা শিবমন্দির, বড় শিবতলা দুর্গাপূজা ম-প, তেলীপাড়া বিশ্বজনীন মন্দির, কুমারপাড়া যুবসংঘ দুর্গাপূজা মন্দির, মেথরপাড়া পূজামন্দির, কালিগঞ্জ বাবুপাড়া দুর্গাপূজা ম-প, নয়ানশুকা হিন্দুপাড়া দুর্গাপূজা ম-প, তেলীপাড়া দুর্গামন্দির, ঘোষপাড়া দুর্গাপূজা ম-প, দ্বারিয়াপুর তাতিপাড়া দুর্গাপূজা ম-প, হরিপুর ধামতলা দুর্গা মন্দির, জয়নগর শান্তির সংঘ দুর্গামন্দির, বটতলা মা ভবানী দুর্গামন্দির, চ-িতলা নিউ জাগরণী দুর্গা পূজাম-প, শ্রী শ্রী হরিজন গঙ্গামাতা মন্দির, নিবেদিতা শিবকালি মন্দির, বালিয়াডাঙ্গা দেবোত্তর দুর্গাপূজা মন্দির, বারঘরিয়া বাইশ পুতুল মন্দিরসহ একাধিক মন্দির এখন নানান সমস্যার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে একাত্তরে হানাদার বাহিনী অধিকাংশ মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকি উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় দুটি কাশা পিতলের রথ ছিল। যা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে বিক্রি করেছিল হানাদার পাকিরা। এ ছাড়াও জেলার পাঁচ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের শতাধিক পূজাম-প ও মন্দির এবং তার জায়গা জমি লুটপাট করে খাচ্ছে একশ্রেণীর ভূমিদস্যুরা। জেলা পূজা উদযাপন কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য শ্রী বাবুল কুমার ঘোষ জনকণ্ঠকে জানান, ইতোমধ্যেই জেলাজুড়ে পূজাম-প ও মন্দির চিহিন্ত করা গেলেও তারা এসব মন্দির সংস্কারে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে পারেনি। সরকারী থেকে বরাদ্দ এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, জেলাজুড়ে এসব মন্দির ম-পের প্রায় শত কোটি টাকার সম্পত্তি এখনও বেহাত হয়ে রয়েছে। সরকারী উদ্যোগ ছাড়া তা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
×