ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারুকাজখচিত শোপিস আনছে বৈদেশিক মুদ্রা

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৯ এপ্রিল ২০১৬

কারুকাজখচিত শোপিস আনছে বৈদেশিক মুদ্রা

বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড় ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বিলুপ্তির পথে চিরচেনা মৃৎশিল্প। বরিশালের গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ ও আগৈলঝাড়া উপজেলার মৃৎশিল্পীদের ঘরে নেমেছে হাহাকার। স্বীকৃত শিল্প না হওয়ায় মৃৎশিল্পীদের ব্যাংক থেকে ঋণ না দেয়ায় বর্তমান বাজারে টিকে থাকতে না পেরে ইতোমধ্যে অসংখ্য পরিবার পূর্ব পুরুষের এ পেশা পরিবর্তন করেছে। ফলে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। কুমার পাড়া নেমে এসেছে দুর্দিন। মাত্র কয়েক বছর আগেও পড়াশোনার পাশাপাশি এক সময়ের মৃৎশিল্পী প্রিয়াঙ্কা পাল ৩১তম বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছেন। বিসিএস ক্যাডারের রেজাল্ট ঘোষণার একদিন পূর্বেও বাবা-মায়ের সঙ্গে মাটির কাজ করেছেন গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের বিল্বগ্রাম এলাকার জীবন কৃষ্ণ পালের মেয়ে প্রিয়াঙ্কা পাল। বর্তমানে তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে মাগুরায় কর্মরত। বিল্বগ্রামের কুমারপাড়ায় এখনও এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। অথচ মাত্র পাঁচ বছর আগেও এ পেশার সঙ্গে জড়িত ছিল চার শতাধিক পরিবার। তারা বাজারে টিকে থাকতে না পেরে ক্রমেই পেশা পরিবর্তন করেছে। আর কয়েকদিন পরেই বৈশাখী মেলা। রং বেরঙের খেলনা সামগ্রী বানানোসহ শেষ সময়ে তুলির আঁচড়ের কাজে এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কুমারপাড়ার নারী-পুরুষ। মাটির বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত শোভা রানী পাল বলেন, এখন আর আগের মতো আয় নেই। আগে আমরা চরকা দিয়ে বাসন-কোসন ও খেলনা সামগ্রী তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার করা হয় না। কারণ চরকা দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের ভাল দাম পাওয়া যায় না। তাছাড়া এখন আমাদের মাটি পর্যন্ত কিনে আনতে হয়। বর্তমানে আমরা সামান্য আয়ে সংসার টিকিয়ে রেখেছি। কেবলমাত্র টিকে থাকার জন্য শত প্রতিকূলতার মাঝে এখনও বিল্বগ্রামে কুমারপাড়ার অর্ধশতাধিক পরিবার এ পেশায় জড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যাপকতার কারণে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যাচ্ছে। সঠিক মূল্যে বিক্রি হয় না। ফলে তাদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এ শিল্পটি হারিয়ে যাবে। তবে আশার কথা, ঘরের শোভাবর্ধনে মাটির তৈরি শৌখিন তৈজসপত্র ও শোপিচ বিদেশে রফতানি করে গত চার বছরে সুনাম কুড়িয়েছেন বরিশালে আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়মগরা গ্রামের শ্যামল কুমার পাল। মৃত্তিকা শিল্প থেকে অর্জিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। ঘরের শোভাবর্ধনে নিপুণ কারিগর শ্যামল মাটি দিয়ে তৈরি করছেন কলমদানি, ওয়ালটপ, লাঠি, দড়ির পট, থিনপটসহ ৬০ প্রকারের তৈজসপত্র ও শোপিচ। মাটি দিয়ে এসব তৈজসপত্র ও শোপিচ তৈরির পর রোদে শুকানো, রং করা, প্যাকেটিংসহ সকল কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন স্ত্রী পূর্ণিমা রানী পাল। শ্যামলের তৈরি তৈজসপত্র ও শোপিচ ঢাকা হ্যান্ডিক্রাফট, হিট হ্যান্ডিক্রাফট কোয়দিজুকসসহ বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে রফতানি হচ্ছে জার্মান, নিউজিল্যাল্ড, আমেরিকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। শ্যামলের মতে, বিদ্যুত সংযোগ, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকার বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মাটির তৈরি এ সকল সামগ্রী বিদেশে রফতান করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব। -খোকন আহম্মেদ হীরা বরিশাল থেকে
×