ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ

ব্যর্থতার লজ্জায় ইউপি নির্বাচন বর্জনের পথ খুঁজছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৩ এপ্রিল ২০১৬

ব্যর্থতার লজ্জায় ইউপি নির্বাচন বর্জনের পথ খুঁজছে বিএনপি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নানা অভিযোগ তুলে বিএনপির ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্জনের হুমকিকে ‘ব্যর্থতার লজ্জায়’ সরে যাওয়ার চেষ্টা হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির অভিযোগ, ইউপি নির্বাচনে জনগণের সমর্থন না পাওয়ার লজ্জার কারণে বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে। অতীত অপকর্মের কারণে নির্বাচনে বিএনপি জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণেই ইউপি নির্বাচনে তাদের চরম ভরাডুবি হয়েছে। শনিবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, জনগণের কাছে যেতে ব্যর্থ হয়েই লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে বিএনপি এখন নির্বাচন থেকে বেরোনোর চিন্তা করছে। কেউ যদি ব্যর্থ হয়ে নির্বাচন বর্জন করতে চায় তাহলে তো অন্য কারও কিছু বলার থাকে না। তবে বিএনপিকে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসতে হলে এ ব্যর্থতা মেনে নিতে হবে। ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটের উদ্বেগ প্রকাশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, বাংলাদেশীরাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশকে টেনে আনছে। আমাদের দেশের মানুষের একটা মারাত্মক প্রবণতা আছে। সেটা হলো বিদেশী কোন মানুষ দেখলেই আমরা মনে করি, সে সাক্ষাত ভগবান! আমাদের দেশের ছোটখাটো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশীদের কাছে জিজ্ঞাসা করার কোন যৌক্তিকতা আছে? এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আছেন। ওই সব দেশের কেউ কি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রদূতকে প্রশ্ন করে? ভারতের কোন সাংবাদিক কী প্রভাবশালী কোন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করে? কিন্তু আমাদের মধ্যে এ প্রবণতাটা বেশি। কোন কিছু হলেই আমরা বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের কাছে দৌড়ে চলে যাই। এ মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনের সহিংসতাকে রাজনৈতিক সংঘাত বলতে নারাজ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, একাধিক মেম্বার প্রার্থী থাকার কারণে সামাজিক ও গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে কিছু সহিংসতা হচ্ছে। এসব কীভাবে এড়ানো যায়, সে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে সে জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করছি। মাহবুবউল আলম হানিফ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, হঠাৎ করে বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কথা ভাবছে কেন? তার কারণ হচ্ছে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জনগণ তাদের দুঃশাসনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি যে ভুল করেছিল, তার জন্য জনগণের ওপর তারা খড়গ্ চালিয়েছিল। জ্বালাও-পোড়াও করেছিল, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। এসব কারণে দেশের জনগণ বিএনপির সঙ্গে নেই। তিনি বলেন, উন্নয়নের কারণে বর্তমানে জনগণ আমাদের প্রতি আস্থাশীল। যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরিপেও দেখা গেছে যে, দেশের ৮০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার সরকারের সুশাসনের প্রতি আস্থাশীল। ভোটে তো তারই প্রতিফলন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। এর আগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচী সফল করতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মতিন খসরু, ড. হাছান মাহমুদ, হাবিবুর রহমান সিরাজ, একেএম এনামুল হক শামীম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আগামী ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসের কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছেÑ ওইদিন ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মুজিবনগরে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ১০টায় মুজিবনগরের আম্রকাননের শেখ হাসিনা মঞ্চে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা। মন্ত্রী-এমপিরা জনগণ ও দলের কর্মী থেকে দূরে- সতীশ ॥ দলের মন্ত্রী-এমপিদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের মন্ত্রী-এমপি যারা আছেন, তারা জনগণের দুয়ারে পৌঁছাতে পারেননি। দলের কর্র্মীদের থেকেও তারা দূরে চলে গেছেন।’ শনিবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকারে এবং দলে আমরা অনেকেই আছি, যারা সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) মজবুত করি না, বরং সংগঠনকে ব্যবহার করি। শেখ হাসিনা একাই কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ওনার পক্ষে একা সবকিছু করা সম্ভব নয়। আমাদের সম্মিলিতভাবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। সতীশ চন্দ্র রায় আরও বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা খুব সুখে আছি, এটা বলা যাবে না। তবে বলা যায় আমরা মধ্যম পর্যায়ে আছি। দেশের কোন সমস্যা হলে এমনকি প্রতিপক্ষ দলের লোকজনকে মোকাবেলা করার জন্য সামনে এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করার মতো অনেকের ক্ষমতা নেই। মাঠ পর্যায়ে যারা আছেন তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেন ঠিক আছে কিন্তু প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তাদের নেই। সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে মন্ত্রী-এমপিদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করব মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করুন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার জন্য ইউপি নির্বাচন দলীয়ভাবে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীরা এ কী শুরু করেছেন? ইউপি নির্বাচনে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা কেন? এসব অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু, হারুন চৌধুরী, এম এ করিম ও হুমায়ুন কবির মিজি।
×