ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গোয়েন্দা নজরদারিতে চারজন গ্রেফতার

রাজধানীতে নাশকতার ফন্দি আঁটছিল জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৩ মার্চ ২০১৬

রাজধানীতে নাশকতার ফন্দি আঁটছিল জঙ্গীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি মাসের শেষ দিকে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা চলছিল। এমন পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত চার জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তাদের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। গ্রেফতারকৃতরা এক প্রবাসীর অর্থায়নে ঢাকার আশপাশে অবস্থান নিয়ে সংগঠিত হচ্ছিল। তাদের দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। গ্রেফতারকৃতদের সহযোগী আরেকটি জঙ্গী গ্রুপের চার সদস্যের বইমেলায় নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তারা গোয়েন্দাদের নজরদারির কারণে গ্রেফতার হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে। মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম। তিনি জানান, ডিবির দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সিনিয়র সহকারী কমিশনার মোঃ আহমেদুল ইসলামের নেতৃত্বে সোমবার রাতে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকায় অভিযান চলে। অভিযানকালে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে জঙ্গী আবদুর রাজ্জাক উমায়ের, ফয়সাল আহম্মেদ, আহমেদ ফজল আকবর ও আবু নাঈম মোহাম্মদ জাকারিয়া গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে জঙ্গীবাদের নানা ধরনের বই-পুস্তক ছাড়াও অন্যান্য আলামত উদ্ধার হয়। গ্রেফতারকৃতরা উগ্রপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী। তারা শেখ সোহান সাদ ওরফে বারা আবদুল্লাহর নেতৃত্বে নাশকতার উদ্দেশ্যে সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ করছিল। গ্রেফতারকৃতরা ঢাকার আশপাশে বসবাস করত। তারা কিভাবে অর্থ সংগ্রহ করত সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা কোন্ জঙ্গী সংগঠনের সদস্য তা জানা যায়নি। তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজ করছিল। গ্রেফতারকৃতদের সহযোগী একটি গ্রুপের ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলায় নাশকতার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কড়া নিরাপত্তার কারণে তাদের সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। গ্রেফতারকৃতদের চার সহযোগী অমর একুশে বইমেলা চলাকালে গ্রেফতার হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে। সোমবার গ্রেফতারকৃতরা আদালতে এক রিট আবেদনকারী ছাড়াও একজন শিরককারী পীরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গোয়েন্দা তৎপরতার কারণে গ্রেফতার হওয়ায় সে পরিকল্পনা তাদের ব্যর্থ হয়ে গেল। গ্রেফতারকৃতরা যাকে টার্গেট করে, তাকে আগ থেকে হুমকি দেয় না। এটি তাদের নতুন কৌশল। প্রসঙ্গত অনেক জঙ্গী সংগঠনের কাউকে হত্যার আগে চিঠি, কাফনের কাপড় বা অন্য কিছু পাঠিয়ে বা টেলিফোনে মেসেজ পাঠিয়ে আগাম হুমকি দেয়ার নজির আছে। কিন্তু সোমবার রাতে গ্রেফতারকৃতরা টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের সে ধরনের কোন আগাম হুমকি বা বার্তা দিত না। এটি তাদের সাংগঠনিক কৌশল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিবির উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ, পশ্চিম, মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার যথাক্রমে শেখ নাজমুল আলম, মাহবুব আলম, মাশরুকুর রহমান খালেদ, সাজ্জাদুর রহমান ও মারুফ হাসান সরদার। আমাদের কোর্ট রিপোর্টার জানান, রাজধানীর কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে জঙ্গী সন্দেহে গ্রেফতার চারজনকে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম জাকির হোসেন টিপু এ আদেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার মঙ্গলবার চার আসামিকে আদালতে হাজির করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, এ চারজনের অন্য গ্রুপ বা জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং পূর্বের অন্য হত্যার সঙ্গে এরা জড়িত কিনা, তা উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
×